Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ রবিবার, আগষ্ট ২০২৫ | ৯ ভাদ্র ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুখ খুলছেন না বাবুল আক্তার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২১, ০১:১২ PM
আপডেট: ১৫ মে ২০২১, ০১:১২ PM

bdmorning Image Preview


নগরের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রিমান্ডে থাকা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার মুখ খুলছেন না।

বুধবার (১২ মে) দুপুরে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট সরোয়ার জাহানের আদালতে হাজির করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের প্রতিবেদন ১০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (১৩ মে) বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা না গেলেও শুক্রবার (১৪ মে) দ্বিতীয় দিন জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তেমন কোনও তথ্য দেননি বলে পিবিআই সূত্রে জানা গেছে। শনিবার (১৫ মে) তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানার চেষ্টা চলছে।

এদিকে মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারের ছেলের সঙ্গেও কথা বলবে পিবিআই। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরের জিইসি মোড়ে সাত বছরের ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সড়কে খুন হন মিতু। এসময় ছেলেকে ধরে রেখেছিল বাবুল আক্তারের সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ মুসা, যাকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে।

ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ছেলে মাহির এর বক্তব্য নেওয়া হবে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি বলেন, বাবুল আক্তার এখন পুলিশের হেফাজতে আছেন। রিমান্ড শেষে পিবিআই তার ছেলের সঙ্গে কথা বলবে।  

বাবুল-মিতু দম্পতির ছেলের বয়স বর্তমানে ১২ বছর, মেয়ের বয়স ৮ বছর। গত তিন বছর ধরে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানিয়েছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, বাবুল আক্তার সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত। তবে রিমান্ডে তিনি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও প্রশ্নের সদুত্তর দিচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, তার ‘নার্ভ’ যথেষ্ট শক্ত আছে। এছাড়া গ্রেফতার হওয়ার পর বাবুল আক্তার পুলিশকে তার ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসার ভুল ঠিকানা দিয়েছেন। পরে বাবুল আক্তারের গাড়িচালকের সহায়তায় সঠিক ঠিকানা পাওয়া যায়। ওই গাড়িচালক বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে এসেছিলেন। যদিও মোহাম্মদপুরের ওই বাসায় বাবুলের বর্তমান স্ত্রী ও সন্তানদের পাওয়া যায়নি। তার সন্তানরা কার জিম্মায় থাকবে, তা নিয়ে শনিবার (১৫ মে) থেকে আইনানুগভাবে কাজ শুরু করছে পিবিআই। পাশাপাশি মিতু হত্যা মামলার দুই আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা ও খায়রুল ইসলাম কালুসহ ৮ আসামির ব্যাপারে দেশের সব বিমানবন্দর ও সীমান্তে তথ্য পাঠাবে পিবিআই। মামলার কোনো আসামি যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।  

অপরদিকে মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত বুধবার পিবিআই এর দায়ের করা প্রথম মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, তদন্তে পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণ, এজাহার, আগের তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্তের ফলাফল, বিভিন্ন আলামত, সিসিটিভি ফুটেজ, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, অস্ত্রের ব্যালেস্টিক পরীক্ষা, আসামি ও সাক্ষীদের জবানবন্দি, মোটরসাইকেল উদ্ধার ও সিডিআর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাবুল আক্তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। নিজেকে বাঁচাতে তিনি জঙ্গি হামলার কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়েছিলেন।  

মাহমুদা খানম মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের অভিযোগ, বাবুল আক্তারের পরকিয়ার কারণে দাম্পত্য কলহের জেরে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত থাকাকালে ২০১৩ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর কর্মী গায়ত্রী অমর শিংয়ের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন বাবুল। এ নিয়ে কলহের সময় মিতুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন বাবুল।

এরই মধ্যে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘ শান্তিমিশনে ছিলেন বাবুল আক্তার। এ সময় বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোনটি চট্টগ্রামের বাসায় ছিল। ওই মোবাইল ফোনে মোট ২৯ বার ম্যাসেজ দেন গায়ত্রী। এরই মধ্যে গায়ত্রী অমর শিংয়ের দেওয়া দুটি বই পাওয়া যায়। বই দুটি বাবুল আক্তারকে উপহার দিয়েছিলেন গায়ত্রী। এই পরকীয়া প্রেমের কারণে বাবুল মিতুর দাম্পত্য জীবনে চরম অশান্তি সৃষ্টি হয়। বাবুল আক্তারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে মিতুর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। এই নির্যাতনের বিষয়টিও মিতু বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন।

Bootstrap Image Preview