Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ মঙ্গলবার, জুন ২০২৫ | ১০ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মৌলভীবাজারে 'থাবল চুম্বা’ যুবক-যুবতীদের জীবনসঙ্গী খোঁজার উৎসব

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২১, ০৫:০৭ PM
আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২১, ০৫:০৭ PM

bdmorning Image Preview


‘থাবল চুম্বা’ উৎসব। যুবক-যুবতীদের জীবনসঙ্গী খোঁজার এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। পুরো আয়োজনে চলে বিশেষ গান। সেই তালে দলবেঁধে অবিবাহীত ছেলে-মেয়েরা একে অন্যের হাত ধরে চালায় উন্মাতাল নৃত্য। সেখানেই হয় পরিচয়। তারপর পরিণয়। মনোমুগ্ধকর ব্যতিক্রমী এই উৎসবটি মণিপুরীদের ধর্মীয় রীতিনীতির চলিষ্ণু ঐতিহ্য। বিশাল এলাকা জুড়ে চোখ ধাঁধানো গোলাকৃতির খোলা প্যান্ডেল।প্যান্ডেল জুড়ে সামিয়ানার মতো টানানো রং বেরংয়ের মরিচ বাতি। বর্ণিল সাজের ওই পরিপাটি আলো-আধারের প্যান্ডেলটি তৈরী অন্যরকম মাধুর্যময়ী শৈল্পীকথায়। দু’টি প্রবেশ পথের একটি ছেলেদের। অন্যটি মেয়েদের।

দর্শকদের জন্যও আছে নির্দিষ্ট সীমানা। প্যান্ডেলের মাঝখানে গোল বৃত্তে বসা ষাটোর্ধ্ব একজন শিল্পী ও তার দলবল। ওই শিল্পী থাবল চুম্বা গানের ওপর দেশ-বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। জানা গেল, বয়স আর প্রশিক্ষণ দুটোই থাবল চুম্বা গানের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়। ওই শিল্পীর সাথে থাকা কিছুটা আধুনিক ধাচের  বাদকদলের সদস্যরা অনেকটাই বয়সে তরুণ। সন্ধ্যারাত থেকেই শুরু হয় ওই বিশেষ গান। দূর থেকে কানে ভাসে মাদকীয় সুরের গান ও বাদ্যযন্ত্রের সুর।  গান শুনে  আবেগে আহ্লাদে মনের টানে মাঠে ছুটে আসেন মণিপুরী যুবক-যুবতী,কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সের লোকজন। সবাই জড়ো হলেই চলে মূল আর্কষণের গান আর নৃত্য। চলে থাবল চুম্বা।

কিশোর-কিশোরী আর যুবক-যুবতীরা দলে দলে প্রবেশ করে বিশেষ ওই প্যান্ডেলে। চলে উচ্চ সুর আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নিজস্ব ভাষায় নানা রোমান্টিক আবেগময়ীতার গান। সে সাথে চলে অংশগ্রহণকারী যুবক-যুবতীদের উন্মাতাল নৃত্য। মণিপুরী নানা বয়সী ছেলে-মেয়েরা ভাব বিনিময় করতে দল বেঁধে বাদ্যযন্ত্রের তালে নৃত্য করে উম্মোক্ত মঞ্চে। সুনিপণ, মনোমুগ্ধকর এ নৃত্য নানা বয়সী দর্শকরা প্রাণভরে উপভোগ করেন। আর বয়স্কজনরা ছুটেন স্মৃতি রোমন্থনে। নিজস্ব রীতিনীতি মেনে কয়েকটি পর্বে অনুষ্ঠান চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। শেষ পর্বে কড়া নিয়ম রীতিতে হাতের বন্ধন শক্ত করে ড্রাগন আকৃতিতে সৃষ্টিকর্তার নামে ওইসব আয়োজন ও নৃত্য উৎসর্গ করা হয় ব্যতিক্রমী নৃত্যের মাধ্যমে।

রোববার রাত দশটায় জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল মাঝের গাঁও উন্মুক্ত মাঠে মঞ্চ করে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও আয়োজন করা হয় ‘থাবল চুম্বা’ অনুষ্ঠান। তৈরী করা বৃত্তাকার মঞ্চে প্রথমে নৃত্য করতে নামে নিজ গ্রামের যুবতীরা। এরপর নৃত্য করতে প্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা যুবকরা। পূর্ণিমার চাঁদের সাথে মিল রেখে দোলপূর্ণিমার রাতে 'থাবল চুম্বা' নামের মিলনমেলায় প্রায় দুইশতাধিক যুবক-যুবতীরা এক সাথে নৃত্য করে। মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গুরুরা জানান, যুবক-যুবতীরা তাদের জীবন সঙ্গীকে খোঁজার জন্য মূলত ‘থাবল চুম্বা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন যুগযুগ ধরে চলে আসছে। নিজ এলাকায় আয়োজনস্থলে অভিভাবক তাদের যুবতী কন্যাকে নিয়ে যান। আর অনুষ্ঠানস্থলের বাহিরে দর্শক হিসেবে অভিভাবকরা থাকেন অপেক্ষমান। অন্যদিকে নিজ এলাকা ব্যতিত বিভিন্নস্থান থেকে যুবকরা আসে পছন্দের জীবন সঙ্গীকে বেছে নিতে। একে অপরের হাতধরে নৃত্যের ফাঁকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে কথোপকথন ও ভাব বিনিময়। একে অন্যের প্রেমে পড়লেই পরিবারের সম্মতিতে হয় শুভ পরিণয়। তারা জানান,  এমন ঘটা করে আয়োজনের কারণে ছেলেমেয়েরা নিজেদের  পছন্দের জীবনসঙ্গী বেছে নেয়াতে তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় খুবই কম। কমলগঞ্জের আদমপুরের ভানুবিল মাঝেরগাঁও কমিউনিটি বেইজ টুরিজম এর পরিচালক নিরঞ্জন সিংহ রাজু জানান,  ছোটবড় মিলিয়ে কমলগঞ্জের ১৪টি গ্রামে উৎসব হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে অনেকেই আয়োজন করেননি। তাছাড়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরাও এসেছেন কম। 'থাবল চুম্বা' নামের উৎসবের আমেজ চলে ১৫দিন ব্যাপী। একে অপরের বাড়িতে নিমন্ত্রণে যান আর সেই সাথে চলে হোলি খেলা। যুবক-যুবতীরা বছরে একবার তাদের চিরাচারিত কাঙ্খিত ধর্মিয় উৎসবে যোগ দিতে পেরে উৎফুল্ল এমনটিই অভিমত প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারী, অভিভাবক ও দর্শনার্থীরা।

Bootstrap Image Preview