Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১২ মঙ্গলবার, আগষ্ট ২০২৫ | ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

চা ওয়ালা বাবাকে অস্বীকার, মডেল হওয়ার জন্য ঘর ছাড়লেন তরুণী!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২১, ০৪:২৪ PM
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২১, ০৪:২৪ PM

bdmorning Image Preview


কলকাতার রবীন্দ্র সরণির একটি হাসপাতালের সামনে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে রাত ১২টা থেকে চা বিক্রি করেন বাবা। তার আয়েই টানাটানির সংসার চলে। তিনি স্বপ্ন দেখেন, চায়ের দোকান চালিয়েই দুই মেয়ের এক জনকে ডাক্তার বানাবেন, অন্য জনকে উকিল!হঠাৎই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে সেই ব্যক্তির। বড় মেয়ে ঘোষণা দিয়েছে, মুম্বাই গিয়ে মডেল হতে চায়। আর এজন্য চা ওয়ালা বাবার পরিচয় বড় বাধা। সুতরাং সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।

পুলিশ বলছে, তারকেশ্বর যাবে বলে গত ১৮ তারিখ বাড়ি থেকে বের হয় ১৭ বছরের ওই কিশোরী। সেই রাতেই তার ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু সারারাত মেয়ের খোঁজ না পেয়ে একের পর এক ফোন করতে থাকেন বাড়ির লোকজন। পরদিন সকালে কিশোরী নিজেই বাড়িতে ফোন করে জানায়, আর ফিরবে না সে।

রাজা নামের এক যুবক তার সঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে ফোন কিশোরী বলেছিল, 'মুম্বাই চললাম। মডেলিং করব। চাওয়ালার মেয়ে হিসেবে এখানে কিছুই হবে না।'

এরপর কিশোরীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। যদিও ১৯ তারিখ রাজা ফোন করে কিশোরীর মা আর বোনকে বাইপাসের একটি শপিং মলে দেখা করতে বলে। সঙ্গে ছিল ওই কিশোরী। অভিযোগ, বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য মা জোর করলে সেখানেই ফিনাইল খেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে ওই যুবকের সঙ্গে পালায় একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ওই কিশোরী।

দুদিন কোনো খোঁজ না পেয়ে পুলিশ এরপর রাজার পরিবারের লোকজনকে আটক করে। চাপে পড়ে ধরা দেয় রাজা আর ওই কিশোরী। প্রথমে পুলিশের মনে হয়, রাজা বিয়ে করবে বলে কিশোরীকে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশের সামনে দুজনেই সেই তত্ত্ব খারিজ করে দেয়। তাদের দাবি, প্রেম বা বিয়ে নয়, কিশোরী মডেল হতে চায়। সেই 'স্বপ্ন' পূরণে রাজা সাহায্য করছে মাত্র।

পুলিশের অনুমান, রাজাই ওই কিশোরীকে মুম্বাইয়ে মডেলিংয়ের লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এই চক্রে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। গ্রেপ্তার করে রাজাকে গত ২৩ তারিখ ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। কিশোরীকে হোমে রেখে মেডিক্যাল পরীক্ষারও নির্দেশ দেওয়া হয়। গত শুক্রবার কিশোরীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে আদালতে।

এদিকে কিশোরীর মা বলেন, 'চায়ের দোকানের রোজগারে কোনোমতে আমাদের সংসার চলে। তাতেই দুই মেয়ের পড়াশোনা। মাধ্যমিক দেওয়ার পরেই ওর মাথায় যে কী ভূত চাপল, মডেলিং মডেলিং করে লাফাতে শুরু করল! গত এক মাস অনেক রাত করে বাড়ি ফিরত। প্রায়ই নতুন পোশাক কিনছিল। এত টাকা কোথা থেকে পাচ্ছে, তা জানতে চাইলে উত্তর দিত না।'

আর তার চায়ের দোকানদার বাবা হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, 'আমি তো চাওয়ালা। আমার কথা বললে না কি ওর বন্ধুরা মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। মডেলিং তো এখানে থেকেও করা যায়। আসলে আমার মেয়ে আমাকেই আর সহ্য করতে পারছে না। মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়ে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলাম। এখন দেখুন কী থেকে কী হয়ে গেল!'

জরাজীর্ণ চারতলা ভবনের ছোট্ট একটা ঘরে বাবা-মা আর বোনের সঙ্গে থাকত সেই কিশোরী। ঘরটিতে একটা ছোট খাট ছাড়া আর কোনো আসবাব নেই। তবে দেয়াল জুড়ে ছড়িয়ে আছে মেয়ের মডেল হওয়ার স্বপ্ন। রকমারি আধুনিক পোশাক, নানা ধরনের সাজে তার ছবি ঝুলছে ঘর জুড়ে। বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, ওই কিশোরীর ভাবনা-চিন্তায় প্রভাব ফেলছে সমাজে সম্মান না পাওয়ার আশঙ্কা। তবে যে পথে কিশোরী চলছিল, তাতে দ্রুতই সে বড় ধরনের বিপদে পড়ে যেত।

Bootstrap Image Preview