Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ সোমবার, জুন ২০২৫ | ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

সাবরিনা-আরিফুলকে ঘিরে যত রহস্য!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২০, ০৫:৪৯ PM
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০, ০৫:৪৯ PM

bdmorning Image Preview


জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক তথ্যই পাওয়া গেছে।

করোনার নমুনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া ফল দেওয়ার ঘটনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে রোববার গ্রেপ্তার করা হয়।

তবে সাবরিনার দাবি তিনি ওই জিকেজির চেয়ারম্যান নন। রোববার গ্রেপ্তারের আগে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান হিসেবে আমার কোনো বক্তব্য শুনেছেন যে আমি নিজেকে চেয়ারম্যান বলে দাবি করেছি? আপনারা বলছেন আমি এর মালিক বা চেয়ারম্যান।

আমাকে একটা কাগজ দেখান যেখানে লেখা আছে আমি এর মালিক বা চেয়ারম্যান। তারপর এর ব্যাখ্যা চান। আমি তা না, কিন্তু কেন আপনারা তা প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে আমি এটার চেয়ারম্যান। ‘

সৈয়দ মোশাররফ হুসাইন নামে এক সাবেক আমলার মেয়ে সাবরিনা পড়ালেখা করেছেন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। ২৭তম বিসিএসে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।

পুলিশের অভিযোগে জানা যায়, তিনি যে সিম ব্যবহার করছেন তা তার এক রোগীর নামে নিবন্ধন করা। পুলিশ বলছে, এটি একটি বড় অপরাধ। এ বিষয়ে সাবরিনা কিছু জানতেন না বলে সাংবাদিককে জানান।

সাবরিনার আগেও বিয়ে হয়েছিল এবং সেই ঘরে তার দুই সন্তান রয়েছে।

তবে জিকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীকে বিয়ে করার পর তাদের কোনো সন্তান হয়নি।

আরিফুলের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাবরিনা দাবি করেন, দুই মাস আগে তাদের তালাক হয়ে গেছে। এখন তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।

সাবরিনার ঘনিষ্ঠ একজন বলেন, রনি নামে সাবরিনার এক ব্যবসায়ী বন্ধু থাকেন মোহাম্মদপুরে। নিজে গাড়ি চালিয়ে প্রায়ই তিনি রনির বাসায় যেতেন।

সাবরিনা আরিফ চৌধুরী সম্পর্কে পুলিশ জানায়, চিকিৎসক সাবরিনা বারবারই অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত নন। কিন্তু আরিফুল চৌধুরীসহ অন্যরা জানিয়েছেন, জেকেজির সবকিছু ভালোভাবে জানতেন চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। তিনি বলার চেষ্টা করছেন, তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন। কিন্তু তিনিই যে জেকেজির মুখপাত্র, সেটি সবাই জানেন। তিনি নিজে ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারণা চালিয়েছেন। কথা বলেছেন। আর তিনি যে জেকেজি থেকে বেরিয়ে গেছেন, এমন কোনো পদত্যাগপত্র তো তিনি জমা দেননি।

আরিফুল হক চৌধুরীওভাল গ্রুপ পরিচালনা করতেন। তিনি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা করতেন। ২০১৫ সালে সাবরিনাকে বিয়ে করার পর আরিফুল স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন ব্যবসায় আসেন। ওভাল গ্রুপের আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের একটি বুটিক হাউসও আছে। করোনার এই সময়ে তাদের অন্য কাজ নেই। শুধু জেকেজি হেলথ কেয়ারের ওপর নির্ভর করেই সব চলছে।

করোনা মহামারীর শুরুর দিকে ডা. সাবরিনার তদবিরে জেকেজি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজ বাগিয়ে নেয়। এখান থেকে করোনা টেস্টের নামে ভুয়া সনদ দেওয়া শুরু করেন আরিফুল। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৪৪টি নমুনা সংগ্রহ বুথ বসিয়ে ও হটলাইন খুলে নমুনা সংগ্রহ করে কোনো পরীক্ষা না করেই প্রতিষ্ঠানটি কমপক্ষে ১৬ হাজার মানুষকে করোনা টেস্টের ভুয়া সনদ দিয়েছে।

এদিকে জানা গেছে, ডা. সাবরিনা আরিফের চতুর্থ স্ত্রী। আরিফের এক স্ত্রী থাকেন রাশিয়ায়, অন্য একজন লন্ডনে। আর আরেকজনের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তবে ছাড়াছাড়ির পরও ওই স্ত্রী আরিফের সঙ্গে সমঝোতার জন্য বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিচ্ছেন।

ওভাল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীর চতুর্থ স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরী দাবি করেছেন, আদর্শের সঙ্গে না মেলায় আরিফ গ্রেপ্তার হওয়ার এক মাস আগে তিনি জেকেজি ছেড়ে চলে এসেছেন। বিষয়টি তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও জানিয়েছেন। এরপর আরিফ এক দিন তার হাসপাতালে (জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট) এসে ‘ঝামেলা করলে’ হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ এবং তিনি নিজে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর থেকে তিনি তার বাবার বাসায় অবস্থান করছেন।

পুলিশের তদন্ত বলছে, স্ত্রীর সঙ্গে হাসপাতালের এক চিকিৎসককে ‘অশালীন অবস্থায় দেখে’ আরিফ তাকে মারধর করেন। আরিফ গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেকেজির পরীক্ষা ছাড়াই কভিড সনদ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ডা. সাবরিনা সাংবাদিকদের বলেছেন, বিষয়টি তার জানা নেই। যে দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাসা থেকে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হতো, সে দুটি প্ল্যাটফর্মের বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না।

তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরিফের সব প্রভাব ও হুমকিধমকির পেছনে ছিল স্ত্রী ডা. সাবরিনা। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের রেজিস্টার্ড চিকিৎসক হয়েও তিনি ছিলেন জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান। স্বামীর প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে ‘নানা অনৈতিক উপায়’ অবলম্বনের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এতে নাম এসেছে বিএমএর এক নেতারও।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারের অনেক উচ্চপদস্থদের সঙ্গে ‘ওঠাবসার’ ছবি দেখিয়ে সুবিধা নিতো এই দম্পতি। তবে জুনের শুরুতে মনোমালিন্যের পর দূরত্ব শুরু হয় দুজনের।

সূত্র: দেশ রুপান্তর

Bootstrap Image Preview