Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ মঙ্গলবার, জুলাই ২০২৫ | ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

আমি চুরি–চামারি করি নাই, টাকা-পয়সা দিতে পারবো না: সোহেল তাজ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২০, ১০:৪১ AM
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০, ১০:৪৩ AM

bdmorning Image Preview


আমি মন্ত্রী-এমপির দায়িত্ব পালন করেছি সততা নিষ্ঠার সাথে। আমি চুরি–চামারি করি নাই। সবকিছু টাকা-পয়সা দিয়ে হয় না। আমি টাকা-পয়সা দিতে পারবো না। নিজেকে চলতেই আমার হিমশিম খেতে হয় মাঝে মাঝে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ এসব কথা বলেন।

সোহেল তাজ করোনাভাইরাস মহামারী হিসেবে দেখা দেয়ার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। গত ২৪ মার্চ তার দেশে ফেরার কথা থাকলেও ২১ মার্চ থেকে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় তিনি আর ফিরতে পারেননি।

সোহেল তাজ বলেন, লোক দেখানোর জন্য এসে কিছু ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার মানুষ নই। এটা দয়া করে আমার কাছ থেকে আশা করবেন না। আমি কিছু চাওয়ার জন্য কিছু পাওয়ার জন্য কিছু করি না। আমার কিছু দরকার নাই।

তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সন্তান। আমার বাবা জীবন দিয়ে গেছেন এ দেশের জন্য। আমার মা এদেশের গণতন্ত্র ও মানুষের জন্য আন্দোলন করে সারাজীবন দিয়ে গেছেন। আমাদের পরিবার সারাজীবন ত্যাগ করেছে মানুষের জন্য। কিছু পাওয়ার জন্য আমি লোক দেখানো কাজ করতে পারি না পারবো না, সরি। আমার যতটা সাধ্য আছে, অন্তর থেকে যেটা করতে পারবো উপকার করতে পারি সেটা আমি করবো।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও যারা দুর্নীতি করে যাচ্ছেন তাদের চিহ্নিত করে রাখার আহ্বান জানিয়ে সোহেল তাজ বলেন, প্রাণঘাতী এই মহামারী শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব সুযোগসন্ধানী দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

করোনাভাইরাস ঠেকাতে লকডাউনের কিছু প্রভাব অর্থনীতি আর খেটে খাওয়া মানুষের উপর পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে দূর্নীতি হচ্ছে সবচেয়ে বড় ক্যান্সার। দূর্নীতি যেন না হয়, সে দিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের মধ্যে অনেকে আছে সুযোগসন্ধানী। তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। তাদের প্রতি আমি ধিক্কার ও ঘৃনা প্রকাশ করছি। তাদেরকে চিহ্নিত করে রাখেন। করোনাভাইরাস ঠিক হয়ে গেলে এদের বিচার করতে হবে।

ফেসবুক লাইভে বিভিন্ন জনের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি সমাজ একটি জাতি এগিয়ে যেতে পারে, যদি সে সমাজ ও জাতি যাদের দিয়ে তৈরি সেই মানুষ তৈরি করতে না পারি, তাহলে সমাজ বা জাতি উন্নতি করতে পারবে না। দালান তৈরিতে ইট লাগবে। ইট মজবুদ না হলে দালান ভেঙে পড়বে। মহান মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব বর্তমান প্রজন্মের। আমি বিশ্বাস করি আমার আশা, মানুষকে গড়া।

সোহেল তাজ বলেন, আমেরিকার মতো দেশে কেউ কাজে যেতে পারছে না। কাজে না গেলে আয় নাই খাবার নাই। আমেরিকা একটা ব্যবস্থা করেছে, প্রত্যেকের আয়ের উপর নির্ভর করে একটা অ্যামাউন্ট পৌঁছে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা উন্নত বিশ্বের দেশ না। এই করোনাভাইরাস আমাদের জন্য অভিশাপ। আমাদের দেশের গরীব মানুষদের ওপর এর প্রভাব অবশ্যই পড়বে। যে লোক দৈনিক দুইশো, তিনশো টাকা উপার্জন করতেন তার তো এখন কাজ নাই। সে কাজ চলবে কিভাবে? গার্মেন্টস কর্মীদের আয় বন্ধ।

সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের সঠিক প্রয়োগ করার প্রয়োজন বলে মনে করেন সোহেল তাজ। তিনি বলেন, আমাদের কৃষক ভাইরা কাজ করে যাচ্ছেন। তারা বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমাদের অর্থনৈতির অবস্থা বিবেচনা করে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রি। দরিদ্রদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ। এ উদ্যোগগুলো যদি সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হয় তাহলে হতদরিদ্র যারা আছে, তাদের অন্তত না খেয়ে মারা যেতে হবে না। আমাদের দেশে লকডাউন যদি বেশি দিন চলে তাহলে আমাদের অর্থনীতির মারাত্বক ক্ষতি হয়ে যাবে।

দেশের অর্থনীতিকে সচল করতে আর লকডাউন থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায় সেসব বিষয়ে সরকার নিশ্চয়ই চিন্তা ভাবনা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই ঝুঁকিপূর্নদের জন্য কিছু আলাদা ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে ৯০ ভাগ মানুষ ঝুঁকি মুক্ত। আমরা কিন্তু ঝুকিপূর্ন মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। কিন্তু এই পদক্ষেপ নিয়ে যদি আমরা অর্থনৈতিকভাবে আক্রান্ত হয়ে যাই, আমাদের পথে বসতে হয়, তাহলে সমস্যা সমাধানের চেয়ে বড় হয়ে গেল। তাই লকডাইন বেশি দিন চললে আমাদের অর্থনৈতির মারাত্বক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি আশা করব, সরকার নিশ্চয়ই চিন্তা ভাবনা করছে, কিভাবে আমাদের অর্থনীতিকে আবার চালু করা যায়, কিভাবে আমরা লকডাউন থেকে বের হয়ে আসতে পারি।

করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, টেস্টিং যত বাড়বে, আক্রান্তের নাম্বার তত বাড়তে থাকবে। দেখা যাবে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষের করোনা হয়ে গেছে। কিন্তু আপনারা নার্ভাস হবেন না। ভয় পাবেন না। স্বাস্থ্য ঠিক রাখেন। খাদ্যাভাস ঠিক রাখেন। খাদ্য হয়ত কিছুটা ভেজাল আছে। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল। পুষ্টিকর খাবারে কিছু ভেজাল থাকলেও কিছু পুষ্টি পাবেন। আপনারা অসহায় বোধ করবেন না। সাহস রাখেন, ভয় পাবেন না। আমরা সবাই আছি আপনাদের সঙ্গে। আপনারা সাহস হারাবেন না। ইনশাল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।

সকলকে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যারা বয়স্ক ঝুঁকিপূর্ণ তাদেরকে সাবধানে রাখবো। বাংলাদেশে টেস্ট বাড়ছে তাই আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়বে, মৃতের সংখ্যা বাড়বে। এতে দুশ্চিন্তার কিছু নাই। এটাই স্বাভাবিক।

এক ফেসবুক ব্যবহারকারী সোহেল তাজ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চান কি-না প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, আমি জানি না তিনি কি করেছেন। না জেনে কিছু বলতে চাই না।

আর করোনাকালের সংকটে রাজনীতি না করার আহ্বানও জানিয়ে সোহেল তাজ বলেন, দয়া করে এই মুহুর্তে রাজনীতি টানবেন না। এখন স্টপ। এটা মহামারী। দেশটাকে আগে বাঁচাই, তারপর রাজনীতির মাঠে এসে কাপাকাপি কইরেন।

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। পিতার জন্মভূমি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত গাজীপুর-৪ আসন থেকে ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দলবল নির্বিশেষে তিনি বাবার মতোই এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সোহেল তাজ আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেও ২০০৯ সালের ৩১ মে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১২ সালের ৭ জুলাই সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন এবং রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান।

ভিডিও...

 

Bootstrap Image Preview