Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ রবিবার, জুলাই ২০২৫ | ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাগমারায় স্তন কেটে দেওয়া ভয়ঙ্কর ‘জাবের বাহিনী’, পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারী ২০২০, ১০:১৮ PM
আপডেট: ১৩ জানুয়ারী ২০২০, ১০:১৮ PM

bdmorning Image Preview


একদা নিষিদ্ধ পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এম.এল) তথা চরমপন্থী এবং জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)’ উত্থানের ‘আতুরঘর’ ছিল রাজশাহীর বাগমারা। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সন্ত্রস্ত্র জনপদের গল্পও পাল্টে যায়। রক্তাক্ত জনপদে কিছুটা স্বস্তি ফেরে। সেই জনপদে (বাগমারা) এখন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে ‘জাবের বাহিনী’।

আলোচিত ‘জাবের বাহিনী’র অব্যাহত চাঁদাবাজি, হুমকি-ধামকি ও নির্যাতনে অতিষ্ট উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ। কিন্তু ভীতসন্ত্রস্ত্র মানুষ ‘জাবের বাহিনী’র বিরুদ্ধে মুখ খোলারও সাহস পায় না। এছাড়া বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা মদদ দেওয়ায় বাহিনী প্রধান জাবের আলীর বিষয়ে থানা পুলিশের ভূমিকাও রহস্যজনক বলে অভিযোগ উঠেছে।

এলকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ‘জাবের বাহিনী’র বিরুদ্ধে এমনকি নারীর স্তন কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ভূক্তভোগী ওই নারী বীরকয়া গ্রামের মোবারকের স্ত্রী আঞ্জুরী বেগম (৩৫)। তার ডান স্তন কেটে দেয় জাবের বাহিনীর সদস্যরা। সে নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছিলেন বীরকয়া গ্রামের মোবারক হোসেন (৪৫)। প্রতিবাদ করার কারণে গত ৩ ডিসেম্বর মোবারক হোসেনকে পেটায় জাবের বাহিনী। তিনি এখন পঙ্গু জীবন যাপন করছেন।

ভুক্তভোগী আঞ্জুরী বেগম জানান, ঝগড়ার সময় প্রতিবেশী তাকে জাবের বাহিনীর নামে ভয় দেখায়। ওইসময় তিনি জাবের আলীকে গালাগাল করেন। এর জেরে পরের দিন ভোরে তার বাড়িতে হামলা হয়। স্বামী পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করলেও তাকে ব্যাপক নির্যাতন সইতে হয়। এক পর্যায়ে বাহিনীর সদস্যরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ডান স্তন কেটে দেয়। এ ঘটনায় মামলা করলে হত্যার হুমকি দেয় জাবের আলী। এ কারণে মামলা করার সাহস পাননি।

অন্যদিকে নির্যাতিত মোবারক জানান, তার মায়ের কুলখানি ছিল ৫ ডিসেম্বর। ৩ ডিসেম্বর কুলখানির অনুষ্ঠানের বাজার করতে বটতলায় যাচ্ছিলেন। পথে জাবের বাহিনীর সদস্যরা তাকে মন্দিয়াল গ্রামে তুলে নিয়ে বাহিনী প্রধান জাবেরের নেতৃত্বে তার পা ভেঙ্গে দেয়। পরে ভ্যানে বাড়ি পাঠিয়ে দিলে পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী নাজমা বাদী হয়ে জাবের আলীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন (মামলা নং ৪, তাং- ০৩/১২/১৯ইং)। কিন্তু আসামিরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গোপনে ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। কিন্তু জাবের বাহিনীর ভয়ে এখনো গ্রামে ফিরতে পারেননি তিনি।

আরেক নির্যাতিত কুতুবপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, জাবের বাহিনী সদস্যরা জ্যোতিনগঞ্জ বাজারে নির্যাতন চালিয়ে তার পা ভেঙ্গে দেয়। কিন্তু তিনিও মামলা করতে পারেননি ভয়ে।

কে এই জাবের আলী?

বাহিনীর প্রধান জাবের আলী (৪৫) উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের মন্দিয়াল গ্রামের মৃত বুদাই গাইনের ছেলে। স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমানের দোকানের সাবেক কর্মচারী জাবের পরে শুটকি মাছসহ অবৈধ ব্যবসা এবং বিল ও পুকুর দখল করে কয়েক বছরে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক বনে যায়।

এলাকাবাসী জানায়, গত ১৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় পুলিশ উপজেলার জ্যোতিনগঞ্জ বাজার থেকে জাবের আলীকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় বাহিনীর সদস্যরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে জাবের আলীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। হামলায় পুলিশের এসআই সৌরভ কুমার ও এএসআই মোসলেম আলী আহত হন। পরে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

বাসুপাড়া ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান জানান, জাবের আলী এলাকার ত্রাস। বিভিন্ন ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। যার চারটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। তার ভয়ে অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই অবৈধ বাহিনীর বিষয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা রহস্যজনক বলেও দাবি করেন তিনি।

বাগমারা থানার এসআই সৌরভ কুমার বলেন, ‘জাবের আলী একাধিক মামলার আসামি। বীরকয়া গ্রামের মোবারক হোসেনের স্ত্রী নাজমার মামলা তদন্তে গিয়ে জাবের আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু তার সহযোগীরা তাকে পুলিশের কাছ থেকে হ্যান্ডকাপসহ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এখনও জাবের আলী দিনে পলাতক থাকে। কিন্তু রাতে লোকজনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে।

বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, পলাতক জাবের আলীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু আসামি প্রতিদিন স্থান পরিবর্তন করায় গ্রেপ্তারে বিলম্ব হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview