Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ মঙ্গলবার, আগষ্ট ২০২৫ | ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

কক্সবাজারে হোটেল-কটেজে হাতে ২০০ টাকা দেখালেই মিলে ইয়াবা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:০২ PM
আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:০৭ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


হোটেলগুলোতে হাতে ২০০ টাকা দেখালেই পাওয়া যায় সর্বনাশা ইয়াবা। কটেজগুলোতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ইয়াবা।  শুধু তাই নয়; দিনদুপুরেই নির্বিঘ্নে হোটেল ও কটেজগুলোর রুমে রুমে বসে ইয়াবা সেবনের আসর। শুধু স্থানীয় মাদকাসক্তরা নয়; দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকেরাও হোটেল ও কটেজগুলোতে বসায় ইয়াবা সেবনের আসর। মাদকাসক্ত পর্যটক ছাড়াও শখের বশে আবেগপ্রবণ হয়েও অনেক পর্যটকরা মিলে মিশে আসর বসিয়ে ইয়াবা সেবন করে।

জানা যায়, হোটেলগুলোতে হাতে ২০০ টাকা দেখালেই পাওয়া যায় সর্বনাশা ইয়াবা।

কক্সবাজারে বেড়াতে এসে বন্ধুদের সাথে আসর বসিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করে মারা গেছে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা তরুণী স্বর্ণা রশিদ (২২)। গত শুক্রবার কলাতলীর হোটেল জামানেই তারা আসর বসিয়ে ইয়াবা সেবন করেছিলেন। তরুণীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় হোটেল ও কটেজে ইয়াবা আসর বসানো নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, স্বর্ণা রশিদ (২১) নামের ওই মেধাবী ছাত্রী তার বন্ধু-বান্ধবের সাথে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছিলেন। তারা ছিলেন সংখ্যায় ১০/১১ জন। শুক্রুবার সকালে কক্সবাজার পৌঁছে কলাতলীর হোটেল জামান সী হাইটস-এ তারা কক্ষ ভাড়া নেন। বিকালে সৈকত ভ্রমণ শেষেই হোটেল কক্ষে ফিরে বন্ধু-বান্ধব সবাই বসে যান মাদক সেবনে। সন্ধ্যার পর পরই মাদকের ঘোরে হুঁশ হারিয়ে ফেলেন মেধাবী ছাত্রী স্বর্ণা রশিদ। তাকে দুদফায় কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় বন্ধুরা। শেষ দফায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। স্বর্না রশিদ প্রাইভেটে ব্রিটিশ কাউন্সিলে “এ লেভেল” এ অধ্যয়নরত ছিল। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকের মতে তিনি অতিরিক্ত ইয়াবা সেবন করেছিলেন। পুলিশ এ ঘটনায় ওই ছাত্রীটির প্রেমিক ওয়ালী আহমদ খানকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

বেড়াতে এসে হোটেল কক্ষে আসরে বন্ধুদের সাথে মাত্রারিক্ত ইয়াবা সেবন করে ছাত্রী স্বর্ণা রশিদ নিহতের ঘটনায় কক্সবাজার শহরের হোটেল-কটেজের কক্ষে ইয়াবার আসন বসানোর বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। হোটেল জামান সী হাইটস থেকেই তারা ইয়াবা সংগ্রহ করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা ওই হোটেলের শীর্ষ ব্যক্তি ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। এই ঘটনায় কক্সবাজারের হোটেল কটেজগুলোতে কতটুকু পর্যটন পরিবেশ রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, শহরের কলাতলীর ৮০ শতাংশ হোটেল ও কটেজে ইয়াবা বিকিকিনি চলে। হোটেল কর্তৃপক্ষ ও হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরাসরি এই ইয়াবা বিকিকিনির সাথে জড়িত। তারা টার্গেট করে পর্যটকসহ হোটেল উঠা অতিথিদের ইয়াবা বিক্রির প্রস্তাব দেয়। আবার স্থানীয় মাদকসেবীরা নির্দিষ্ট সময় মাফিক কক্ষ ভাড়া নিয়ে হোটেল ও কটেজগুলোতে নিয়মিত ইয়াবার আসর বসায়।

গতকাল রোববার কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন হোটেল ও কটেজের পরিচালনকারী কর্মকর্তা জানান, পর্যটনের অফ সীজনে যখন খালি থাকে তখন হোটেল ও কটেজগুলো ইয়াবা সেবন, জুয়ার আসর ও পতিতায় ভরে থাকে। স্থানীয় মাদক সেবী ও জুয়াখোররা প্রতিনিয়ত হোটেল ও কটেজগুলোর কক্ষে কক্ষে এসব আসর বসায়। এসব ইয়াবা আসরের অধিকাংশই হোটেল ও কটেজের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমে সরবরাহ হয়। তাই হাত বাড়ালেই মিলে ইয়াবা। কিন্তু পর্যটন মৌসুম শুরু হলে পর্যটক ভাড়া থাকায় স্থানীয়দের ইয়াবা সেবনের আসর অনেকটা কমে আসে। কিন্তু ইয়াবা সরবরাহকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইয়াবার বিকিকিনিতে লিপ্ত থাকে।

হোটেল ও কটেজের পরিচালনকারী ওই কর্মকর্তারা আরো জানান, হোটেল ও কটেজগুলোতে পর্যটক উঠলে তাদেরকে টার্গেট করে ইয়াবা বিকিকিনির সাথে জড়িত হোটেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বন্ধু-বান্ধব মিলে যে সব পর্যটক আসে তাদেরকে টার্গেট করে ইয়াবা সরবরাহ করে। মাদকাসক্ত না হলেও অনেক পর্যটক ‘মজা’ করার জন্য বন্ধুদের নিয়ে হোটেল কক্ষে ইয়াবা সেবনে লিপ্ত হয়।

অনুসন্ধানে করে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে শহরের কলাতলীর হোটেল ও কটেজ কেন্দ্রীক জমজমাট ইয়াবা ব্যবসা চলে আসছে। মূলত পর্যটকদের টার্গেট করেই সেখানে এই ইয়াবা ব্যবসা চলে আসছে। হোটেল ও কটেজের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই ইয়াবা ব্যবসা মূল নিয়ন্ত্রক। পাশাপাশি হোটেল ও কটেজ সংলগ্ন পানের দোকানগুলোতে ইয়াবা মিলে। পাইকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা হোটেল ও কটেজের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ব্যবহার করে কক্সবাজারের পর্যটন জোন কলাতলীকে এক প্রকার ইয়াবার অঞ্চল বানিয়েছে। অনেকটা প্রকাশ্যে এই ইয়াবার বিকিকিনি চললেও দায়িত্বরত পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করে- এমন অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘হোটেল-মোটেল ও কটেজগুলোর ইয়াবার নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করি। আমরা এবং প্রশাসন মিলে অনেক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। কিন্তু তারপরও তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে। মূলত অসাধু এবং নি¤œশ্রেণির হোটেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি; অন্তত তা নিয়ন্ত্রণে হলে থাকবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘হোটেল কক্ষে ইয়াবা সেবন করে তরুণীর মৃত্যু অত্যন্ত মর্মান্তি। ঘটনাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘হোটেল-মোটেল জোনে পুলিশ সব সময় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার রাখে। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা পুলিশের অনেক সদস্য দায়িত্ব পালন করে। তারপরও কিছু অসাধু হোটেল ও কটেজে ইয়াবার বিকিকিনি থাকতে পারে। এই জন্য পুলিশের আরো নজরদারি ও অনুসন্ধান বাড়ানো হবে।’

সুত্র:সিবিএন

 

Bootstrap Image Preview