অডিট আপত্তির পাওনা নিয়ে আরবিট্রেশনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ দিয়েছে টেলিনর। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের আইনি সংস্থার মাধ্যমে এ উকিল নোটিশ পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে টেলিকম সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবির এক সভায় এ তথ্য জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
টিআরএনবির সভাপতি মুজিব মাসুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় সংগঠনটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুরের আইনি সংস্থার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া এ উকিল নোটিশ গ্রহণযোগ্য নয়। ‘বাংলাদেশে টেলিনর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন ব্যবসা করবে আবার তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ দেবে, আরবিট্রেশনের জন্য চাপ দেবে, এটি এত সহজে গ্রহণ করার মতো অবস্থা নয়। যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সেটি নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অবহিত রয়েছে’ বলেন মন্ত্রী।
এই উকিল নোটিশ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আদালতে মামলা চলাকালে আরবিট্রেশনের সুযোগ নেই। আদালত যদি হুকুম দেন, তা হলে করতে পারব। আর যে দেশে বিজনেস করে সেখানকার আইন আদালত অমান্য করে দুনিয়ার কোনো জায়গায় গিয়ে অন্য বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এর আগে গত ২৪ নভেম্বর আপিল বিভাগ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দাবি করা ১২ হাজার ৫৯৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে এ আদেশ দিয়েছেন। আদেশে বলা হয়, নির্ধারিত সময় তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করতে পারলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে বিটিআরসি।
গ্রামীণফোনের জন্ম থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অডিট করে বিটিআরসি। বেসরকারি অডিটদের করা ওই নিরীক্ষায় অপারেটরটির কাছে ১২ হাজার ৫৯৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কমিশনের পাওনা বলে উঠে আসে। চলতি বছর ওই টাকা দাবি করে কমিশন গ্রামীণফোনকে চিঠি দেয়। এদিকে গ্রামীণফোন শুরু থেকেই এ দাবিকে অযৌক্তিক বললেও সম্প্রতি তারা বলছেন, তাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা নিতে চাইছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পর্যায়ক্রমে দেশের আদালতে যাওয়ার পাশাপাশি অপারেটরটি তাদের বিনিয়োগকারীদরে মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানিতে যাওয়ার বিষয়ে একটি নোটিশও সরকারকে পাঠায়। অন্যদিকে টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসি অপারেটরটির এই বক্তব্যকে অগ্রহণযোগ্য বলছে।
এসবের আগে টাকা দাবি করার পর থেকে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এর মধ্যে ব্যান্ডউইথড কমিয়ে দেওয়া এবং ২২ জুলাই থেকে অপারেটর দুটি যেন আর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন সেবা নিয়ে আসতে না পারে, সে জন্য তাদের সব অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। অডিট সংক্রান্ত এ সমস্যা সমাধানে প্রথমে অর্থমন্ত্রী এবং পরে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা আলাদা পদক্ষেপ নিলেও তাতে সমস্যার সুরাহা হয়নি।
টেলিনরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এটি একান্তই তাদের পদক্ষেপ, গ্রামীণফোনের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা নেই। টেলিনর গ্রুপের এশিয়া কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক ক্যাথরিন স্ট্যাং লান্ড এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশে টেলিনর গ্রুপের সম্পদের সুরক্ষা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধ মীমাংসার জন্যই টেলিনর একটি নোটিশ পাঠিয়েছে এবং সেখানে বাংলাদেশ সরকারকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেন একটি গঠনমূলক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
ক্যাথরিন স্ট্যাং লান্ড বলেন, দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তিও আলোচনাকে উৎসাহিত করে। টেলিনর এখনো বিশ্বাস করে, অডিট আপত্তি নিয়ে অপারেটর ও সরকার যদি বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারে, সেটিই হবে সবচেয়ে ভালো।
মামলা প্রত্যাহার করতে চায় রবি : রবির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, অডিট আপত্তি নিয়ে আদালতে চলমান মামলা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে অপারেটরটি। তারা বলেছে, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে চায়। রবি প্রস্তাব দিয়েছে, তারা মামলা তুলে নিতে চায়। মামলা তুলে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে মামলা চলাকালে কোনো আলোচনা হবে না।