Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৯ বুধবার, জুলাই ২০২৫ | ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

মুজিববর্ষে উদ্বোধন হবে খুলনার শেখ রাসেল ইকোপার্ক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:২৭ PM
আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:২৭ PM

bdmorning Image Preview


জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। সেই সুন্দরবন রক্ষার পাশাপাশি নতুন আরেক ছোট্ট সুন্দরবন সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট  ফান্ডের অর্থায়নে এরইমধ্যে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী 'মুজিববর্ষে' (২০২০ সালে) পার্কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, খুলনা মহানগরীর খুবই কাছে রূপসা সেতু থেকে দেড় কিলোমিটর দক্ষিণে কাজীবাছা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা হচ্ছে শেখ রাসেল ইকো পার্ক। প্রায় ৪৪ একর সরকারি জায়গাটিকে নদীর তীর দিয়ে উঁচু বাঁধ দিয়ে বেষ্টিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরইমধ্যেই সেখানকার দখলদারদের পার্শ্ববর্তী আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৩ মার্চ এই পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়েছে। এখন স্থাপনা নির্মাণ ও বনায়নের কাজ চলছে। পার্কটিকে দৃষ্টিনন্দন করতে বিশেষ পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সারোয়ার আহমেদ সালেহীনের দেওয়া তথ্যমতে, শেখ রাসেল পার্কে থাকবে মিনি সুন্দরবন, ফিশিং জোন, টয় ট্রেন, ঝুলন্ত ব্রিজ, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, ফুড জোন, অবজারভেশন টাওয়ার, পিকনিক স্পট, কিডস কর্নার, অডিটরিয়াম, থিয়েটার, ফুট ট্রেইল, পার্কিং জোন, ওয়াকওয়ে, রেস্ট হাউজ, সুইমিং পুল, মেরিন ড্রাইভ, প্লে গ্রাউন্ড, জগিং ট্র্যাক, জিমনেশিয়াম ও রিভার ক্রুজ।

জেলা প্রশাসক বলেন, নয়নাভিরাম নান্দনিক এ পার্কটিতে থাকবে নানা প্রজাতির গাছের ছায়াঘেরা শীতল পরিবেশ। স্থান পাবে  সুন্দরবনের গাছ-গাছালিও। পার্কের এক অংশে থাকবে সবার প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত। তবে কিছু এলাকা থাকবে একেবারে প্রবেশ নিষিদ্ধ অর্থাৎ প্রাকৃতিক জীব-বৈচিত্র্য সেখানে থাকবে উন্মুক্ত।

সুন্দরবন সম্পর্কে ধারণা দিতে পার্কে বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্যের ম্যাপ প্রদর্শন করা হবে। হেরিটেজ মিউজিয়াম স্থাপন করে সুন্দরবন এলাকার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখা হবে। বনায়ন করে পাখি ও বন্য প্রাণির অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা হবে। পার্কটিতে জলাশয়ের উন্নয়ন করে লেক সৃষ্টি করা হবে। লেকের দুই পাশে পায়ে চলার পথ সুসজ্জিত করা হবে। লেকের মধ্য দিয়ে কাঠের রাস্তা (নিচে কংক্রিটের পিলার), ফিস মিউজিয়াম, পানির ওপর ভাসমান রেস্টুরেন্ট করা হবে। ফিস মিউজিয়ামে বিভিন্ন মাছ ও প্রাণির ফসিল সংরক্ষিত থাকবে। 

সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, ইকোপার্ক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং বাস্তবায়ন ও মনিটরিং উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগ পার্কে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই পার্কের ম্যানগ্রোভ কালচারাল সেন্টার নির্মাণের জন্য এরইমধ্যে ই-জিপি পদ্ধতিতে ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়েছে। এ জন্য চুক্তিপত্রও স্বাক্ষর হয়েছে।

এ ছাড়া ইকোপার্কে আগত দর্শনার্থীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্বিতীয় দফায় ম্যানগ্রোভ সেন্টারের অবশিষ্ট অংশের কাজ বাস্তবায়নের প্রাক্কলন, ডিজাইন ও ড্রইং প্রস্তুতের কাজ প্রকল্পের কনসালটেন্ট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অপূর্ব কুমার পোদ্দার শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, শেখ রাসেল ইকোপার্কে সুন্দরবনের প্রায় সব ধরনের বৃক্ষ ও জীববৈচিত্র্যের পাশাপাশি পর্যটনের সব সুযোগ থাকবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি এ পার্ক নগরবাসীর ব্যস্ত জীবনে সুষ্ঠু বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করবে। প্রকল্পটির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড সুন্দরবন বিভাগের অনুকূলে আট কোটি ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। খুলনা আঞ্চলিক বন সংরক্ষককে ওই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে এই ইকোপার্কের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।

নদীর পাড় ঘেঁষে এই পার্ক নির্মাণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে খুলনাবাসী। পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর আগেই বিনোদন প্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে পার্ক এলাকা। প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ইকোপার্ক এলাকায় ভিড় জমাচ্ছে। এ জন্য রূপসা নদীসংলগ্ন পুল, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য দুই পাশে বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়েছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন বৃক্ষ দিয়ে বনের আবহ তৈরি করা হয়েছে। পার্কটির সম্পূর্ণকাজ শেষ হলে খুলনা বিভাগের মধ্যে এটি হবে সর্ববৃহৎ বিনোদনকেন্দ্র।

উপকূলীয় পরিবেশ সুরক্ষায় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন বিপ্লব কালের কণ্ঠকে বলেন, খুলনা শহরে তেমন কোনো  বিনোদনের জায়গা না থাকায় এখনই এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কাজ শেষ হলে শেখ রাসেল ইকোপার্কটি হবে দেশের অন্যতম আধুনিক পার্ক। যেখানে শিশুদের জন্য থাকবে ব্যতিক্রমী কিছু রাইড। আর বয়স্ক লোকরাও বিনোদনে অংশ নিতে পারবেন।

তিনি বলেন, এই পার্কে বসে দর্শনার্থীরা রূপসা সেতুর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবে। শহরের কোলাহল ছেড়ে, নিরিবিলি অবসর সময় কাটাতে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এ পার্কটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হবে। পার্কটি ঘিরে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে জলবায়ু ইস্যুতে কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি  সংগঠনের জোট নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ, বাংলাদেশ (এনসিসি'বি)। এসসিসিবি'র রিসার্স অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার মাহবুবুর রহমান অপু বলেন, প্রকল্পটি ইতিবাচক। কিন্তু যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। কারণ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে অতীতে অভিযোগ উঠেছে।

Bootstrap Image Preview