মোটরযানের চালকদের মাদকাসক্তি নিরূপণে নিয়মিত ডোপ টেস্ট করার পরিকল্পনা করছে সরকার।
প্রাথমিকভাবে চালকদের লাইসেন্স প্রদান ও পরবর্তী সময়ে নবায়নের সময়ে বাধ্যতামূলকভাবে ডোপ টেস্ট করানোর মধ্য দিয়ে এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা হবে।
এতে কোনো চালকের মাদকাসক্তি প্রমাণ হলে লাইসেন্স বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক-সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি বণিক বার্তাকে নিশ্চিত করেছে।
বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের সময় চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে থাকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে চালকদের ডোপ টেস্ট বা মাদকাসক্তি নিরূপণের কোনো ব্যবস্থা বিআরটিএতে নেই। পরিকল্পনা করা হচ্ছে, প্রথমে লাইসেন্স দেয়ার সময় ও পরবর্তী সময়ে সেটি নবায়নের সময় বাধ্যতামূলকভাবে চালকের ডোপ টেস্ট করা হবে। এতে কোনো চালকের মাদকাসক্তি প্রমাণিত হলে তার লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
গণপরিবহনের চালকদের বড় একটি অংশ মাদকাসক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে, যার প্রতিফলন দেখা গেছে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায়ও। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এমনই এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ভারী মোটরযানের চালকদের প্রায় ৬৯ শতাংশই মাদকাসক্ত। অন্যদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, প্রতি বছর দেশে যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তার ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী চালকের মাদকাসক্তি। চালকদের এ মাদকাসক্তি কমাতে এখন পর্যন্ত নানা উদ্যোগ নিয়েও বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এ অবস্থায় চালকদের নিয়মিত ডোপ টেস্টের পরিকল্পনা করছে সরকার।
পরিবহন চালকদের মাদকাসক্তি প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘অ্যালকোহল ডিটেক্টর’ নামের একটি যন্ত্র ব্যবহার শুরু করেছে হাইওয়ে পুলিশ। চালক অ্যালকোহল জাতীয় কোনো মাদক গ্রহণ করে গাড়ি চালালে তা তাত্ক্ষণিকভাবে শনাক্ত করে থাকে যন্ত্রটি। চালকদের মাদকাসক্তি প্রতিরোধে যন্ত্রটি বেশ কার্যকর বলে দাবি করছেন হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে পরিবহন চালক ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মাদকাসক্ত চালকদের একটা বড় অংশ ইয়াবায় আসক্ত, যা অ্যালকোহল ডিটেক্টরে শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
নতুন সড়ক পরিবহন আইনে মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর শাস্তি ও জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। এতে কর্তৃপক্ষকে মদ্যপ চালকের লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিলের ক্ষমতা দেয়ার পাশাপাশি সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও তিন মাস কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে বিধান রাখা হয়েছে চালকের লাইসেন্সের বিপরীতে এক পয়েন্ট কেটে রাখারও। যদিও বাংলাদেশে চালকদের মাদকাসক্তি নিয়ে আইনের প্রয়োগ তেমন হয় না বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
অনেক দুর্ঘটনার জন্যও দায়ী মাদকাসক্ত চালক। তবে শুধু কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে এর সমাধান হবে না। মাদক নিয়ে গাড়ি চালানো যে ঝুঁকিপূর্ণ, সে সম্পর্কে চালকদের সচেতন করাও জরুরি। তাদের মধ্যে পেশাদারি মনোভাব তৈরি করাও প্রয়োজন। বিআরটিএ এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে।