গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের ১ জুলাই ভয়াবহ ওই হামলা হয় । জঙ্গিরা হত্যা করেছিলেন ২০ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে। ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। গত এক বছরে রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় ১১৩ জন সাক্ষী হাজির করে। নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার রায় আজ (২৭ নভেম্বর) ঘোষণা করতে যাচ্ছেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে প্রথম সাক্ষী ছিলেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক রিপন কুমার দাস। হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার সময় তিনি গুলশানে টহলে ছিলেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই বুঝতে পারেন তিনি একটা যুদ্ধক্ষেত্রে এসে পড়েছেন।
তিনি গত বছরের ৩ ডিসেম্বর আদালতে বলেন, ‘আমি রাত ৮টা ৫০ মিনিটে ফোর্সসহ হোলি আর্টিজান এলাকায় যাই। গিয়ে দেখি আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়ে গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড হামলা চলছে। আমরা পাল্টা গুলি ছুড়ি।’ তিনি বলেন, এ সময় জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণে ৩০-৩৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন পরে মারা যান।
অভিযোগপত্রে সে রাতের অতিথি ও রেস্তোরাঁর আবহের একটা বিবরণ আছে। তাতে বলা হয়, প্রতিদিনের মতোই ব্যস্ত ছিলো শুক্রবারের (১ জুলাই, ২০১৬) সন্ধ্যা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ব্যবসায়ী আবুল হাসনাত রেজা করিম (হাসনাত করিম) মেয়ের জন্মদিন পালন করতে এসেছিলেন স্ত্রী শারমিনা পারভীন ও দুই সস্তানকে নিয়ে। তারা বসেছিলেন হলরুমের পেছনের অংশে। তাহমিদ হাসিব খান, ফাইরুজ মালিহা ও তাহানা তাসমিয়া এসে ছিলেন রাত ৮টা ১০ মিনিটে। লনের লেকপাড় ঘেঁষা টালি ঘরটিতে বসেছিলেন তারা।
ভারতীয় নাগরিক সত্য প্রকাশ রাত সাড়ে ৮টায় পাস্তা অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছিলেন বন্ধু তন্ময়ের জন্য। ফারাজ আয়াজ হোসেন, তারিশি জৈন ও অবিন্তা কবির বসেছিলেন হলরুমে। ৯জন ইতালীয় রেস্তোরাঁয় এসেছিলেন বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ। তারা বসেছিলেন নিচতলার একেবারে সামনের টেবিলে। তারা সবাই বাংলাদেশে পোশাক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ইতালীয়দের পরই রেস্তোরাঁয় ঢুকেছিলেন জাপানি নাগরিকেরা। তাদের বড় অংশই বনানীর জাইকা অফিসের কর্মকর্তা। ঢাকার ইশরাত আখন্দ বসেছিলেন তার শ্রীলঙ্কান বন্ধু ও বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে।
হাসি-আনন্দে মুখর হোলি বেকারির সন্ধ্যাবেলা কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গেল রাত পৌঁনে ৯টার দিকে। নিরাপত্তারক্ষী নূরে আলম আদালতে সাক্ষ্যে বলেছেন, ১ জুলাই সন্ধ্যা ৯টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত ফটকের দায়িত্বে তিনি ছিলেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে পাঁচ তরুণকে রেস্তোরাঁয় ঢুকতে দেখে তিনি তাদের পরিচয় জানতে চান। জবাব না দিয়েই তারা রেস্তোরাঁর দিকে এগিয়ে যান। থামতে বললে তরুণদের একজন ‘ওই ব্যাটা, সর’ বলে নূরে আলমের নাকের নিচে ঘুষি দিয়ে ভেতরে ঢুকে যান।
হাসনাত করিমের স্ত্রী শারমিনা পারভীনের সাক্ষ্যে সে সময়কার পরিবেশ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, হামলাকারীরা বলেন যে মুসলমানদের কোনো সমস্যা নেই।পরেই ৮-১০ জন বিদেশি নাগরিককে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালান তারা। রাত দেড়টার দিকে একজন ওয়েটারের পাশে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয় বিদেশি এক নাগরিককে। শারমিনা পারভীন আদালতে বলেন, ‘ডেডবডি ছড়ানো ছিলো আমাদের চারপাশে।