ভারতের বেঙ্গালুরুতে আটক তথাকথিত ৫৭ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে আজ শনিবার বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করছে মোদি সরকার। এর আগে বেঙ্গালুরুতে আটক আরও ৮২ জনকে একই ভাবে এ রাজ্যের সীমান্ত দিয়েই বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
পত্রিকাটি জানায়, ওই ৫৭ জনকে গত ২৬ দিন কর্নাটক প্রদেশের বেঙ্গালুরু শহরের একটি হোমে আটকে রাখার পর বাংলাদেশে পুশব্যাক করার ব্যবস্থা করেছে কর্নাটক সরকার। শুক্রবার সকালে তাদের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ট্রেনে চাপানো হয়। ট্রেনে তাদের একটি আলাদা কামরায় রাখা হয়েছে। পথে যাতে কেউ পালাতে না পারে এজন্য বেঙ্গালুরু পুলিশের ৪০ জনের একটি দল সবাইকে পাহারা দিয়ে আনছে। আটকদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ, ২৫ জন মহিলা এবং ১০ শিশু।
গত মাসে বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে পুলিশ বহু বাংলাভাষীকে আটক করে। বেঙ্গালুরু পুলিশের দাবি, তাদের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের কোনো প্রমাণ মেলেনি এবং তারা নিজেদের বাংলাদেশি বলে স্বীকারও করেছে। পুলিশের আরো দাবি, আটকদের ফোনের কল ডিটেলসেও থেকেও তারা যে বাংলাদেশি সেই প্রমাণ মিলেছে।
পুলিশ আরো জানিয়েছে, আটক বাংলাদেশিদের কাজ দেয়ার কথা বলে ভারতে এনেছিল মানব পাচারকারীরা। তাই এসব তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে প্রথম দফার ৮২ জন এবং দ্বিতীয় দফার এই ৫৭ জনের বাইরে আরও চারজন রয়েছে। ওই চারজন পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশের ধারণা। তাই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা যায়, এই আটকদের বড় অংশই বেঙ্গালুরু শহরে কাগজ কুড়ানি হিসাবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাদের অনেকেই কয়েক বছর ধরে ওই শহরে রয়েছেন। আবার কয়েকজন সপ্তাহ কয়েক আগেও পৌঁছেছেন। বেঙ্গালুরু পুলিশ আটকদের অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলায় নিয়ে যায় সড়ক পথে। সেখান থেকে তাদের হাওড়াগামী ট্রেনে তোলা হয়।
নবান্ন সূত্রে খবর, বেঙ্গালুরু পুলিশ হাওড়ায় রেলপুলিশের হাতে আটক ওই ৫৭ জনকে তুলে দেবে। তারা বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছে দেবে ওই আটকদের। এরপর ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে। তবে কোন সীমান্ত দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হবে সে বিষয়ে কিছু জানায়নি পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন।
একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিএসএফ ঠিক করছে কোন সীমান্ত দিয়ে পার করা হবে। আমরা এ বিষয়ে আর কিছু জানি না।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানাচ্ছে, বনগাঁ সীমান্ত দিয়েই ওই ৫৭ জনকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
সাম্প্রতিক অতীতে এত বড় সংখ্যায় বাংলাদেশি নাগরিকদের এভাবে এ রাজ্য দিয়ে ‘পুশ ব্যাক’করা হয়নি বলে স্বীকার করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশও।
এদিকে এই পুশব্যাকের তীব্র সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত সুর। তিনি একে ভয়াবহ ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, কর্নাটক সরকার দেশের আইন-সংবিধান সব লঙ্ঘন করেছে। কাউকে এ ভাবে পুশব্যাক করা যায় না। তিনি সরকারের প্রতি এই পুশব্যাক বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন