জি কে শামীম ও তার ৭ দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ে অস্ত্র মামলায় আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল হয়েছে।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংশ্লিষ্ট জিআর শাখায় এ চার্জশিট দেন র্যাব ১-এর উপপরিদর্শক শেখর চন্দ্র মল্লিক।
সাত দেহরক্ষী হলেন— সহিদুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, সামসাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন।
এ দিকে জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী কথিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম এবং যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ রিমান্ড আদেশ দেন আদালত।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. আল মামুন এ আদেশ দেন। এর আগে একই আদালত তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
গত ২২ অক্টোবর শামীমকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন শামীম। আর খালেদকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।
শুনানিতে আসামি খালেদের পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহ আলম এবং জি কে শামীমের পক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মোল্লা রিমান্ড বাতিল পূর্বক জামিনের আবেদন করে শুনানি করেন। অন্য দিকে দুদকের পক্ষে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল রিমান্ডের পক্ষে এবং জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেক আসামির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ২১ অক্টোবর এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
অন্য দিকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অর্জনের অভিযোগে উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলাগুলোতে যথাক্রমে আগামী ১৯ নভেম্বর এবং ১৮ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য তারিখ ঠিক করেছেন আদালত।
শামীমের মামলায় বলা হয়, ২০১৮-২০১৯ করবর্ষ পর্যন্ত আসামি শামীম ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর মধ্যে আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লেখ করলেও ওই টাকার বৈধ উৎস পায়নি দুদক।
এ ছাড়া তার বাসা থেকে উদ্ধারকৃত নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা, শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের নামে ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, মায়ের নামে আরও ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদার এবং জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানির শেয়ার, গাড়ি ও এফডিআর বাবদ ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎসও পায়নি দুদক।
অন্য দিকে খালেদ মাহমুদের মামলায় বলা হয়, এ আসামি চার কোটি ৫০ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৯০ লাখ ১৬ হাজার ৭০৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া গত ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাবের অভিযানে তার গুলশানের বাসা থেকে ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ টাকার বিভিন্ন দেশের মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। যার কোনো উৎস দেখাতে পারিনি খালেদ। তাই তার বিরুদ্ধে মোট পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, খালেদ গত ১৮ সেপ্টেম্বর ও গত ২০ সেপ্টেম্বর জি কে শামীম ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর উভয় আসামিকে অস্ত্র, মানি লন্ডারিং ও মাদক মামলায় বিভিন্ন দফায় রিমান্ড শেষে গত ১৩ অক্টোবর কারাগারে পাঠানো হয়।