দীর্ঘ ১০ বছর নানা জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে ২৭৩০ প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর এই ঘোষণা দেয়ার পর পরই প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির বিষয়ে নানা অসঙ্গতি এবং জনমনে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন দানা বাঁধে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বিকেল ৪টায় রাজধানীর ব্যানবেইস সম্মেলন কক্ষে এমপিও নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
‘ফের কবে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে’ এমন প্রশ্নের জবাবে সরকারের এই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এমপিওভুক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলতেই থাকবে। প্রত্যেক বছরই দেশের যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন করার আহ্বান করা হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর খোঁজ রাখবো। যারা যোগ্য হবে তাদের এমপিও দেয়া হবে।’
‘একইসঙ্গে আগের ২৫ হাজার এবং বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হয়েছে তাদের প্রতি মন্ত্রণালয়ের সজাগ দৃষ্টি থাকবে। যদি কোনোক্রমে নীতিমালার মানদণ্ড তারা বজায় রাখতে না পারে তাহলে তাদের এমপিও স্থগিত করা হবে’ বলেও সাফ জানিয়ে দেন ডা. দীপু মনি।
‘চাঁদপুরে অবস্থিত শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও তার ভাইয়ের গড়া প্রতিষ্ঠান সদ্য প্রকাশিত এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পায়নি। কেনো পায়নি’ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে এমপিওর তালিকা করেছি। আর আমার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির নীতিমালা পূরণ করতে পারেনি। যদিও প্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট অনেক ভালো। তবে সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম। যার কারণে এমপিওভুক্তি হয়নি।’
এ সময় শিক্ষকের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া মানসম্পন্ন শিক্ষা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন দীপু মনি। বলেন, ‘মানসম্পন্ন শিক্ষা শুধু একটি বিষয়ের সঙ্গে জড়িত নয়। অনেক বিষয়ের উপর জড়িত। ধরেন আমি শিক্ষার অবকাঠামো দিলাম, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিলাম সবই করলাম তাহলে কি শিক্ষা মানসম্পন্ন হবে? সবকিছুর সঙ্গে শিক্ষকের আর্থিক নিরাপত্তাও জড়িত। আবার মনে করেন শিক্ষকের আর্থিক নিরাপত্তা দিলাম কিন্তু অবকাঠামো দিলাম না তাহলেও মানসম্পন্ন শিক্ষা সম্ভব নয়।’
‘অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের পাসের হার নেই, এগুলো কিভাবে এমপিওভুক্ত হলো’ এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ভুল তথ্য দিয়ে এমপিও হওয়া স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেসব কর্মকর্তারা এসব তথ্য দিয়েছেন সেসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আমাদের যাচাই বাছাইয়ে সেগুলোর কোনো ভুল নেই। তারপরও ফের যাচাই করে দেখবো। এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিসহ সবার সহযোগিতা চান শিক্ষামন্ত্রী।’
‘যুদ্ধাপরাধী ও বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামে স্কুল এমপিওভুক্তি’ এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব যুদ্ধাপরাধীর নামের স্কুলের নাম এসেছে তারা দেশের লোকের কাছে তেমন পরিচিত কেউ নন। হয়তো স্থানীয়ভাবে পরিচিত আছে। তবে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে খবর নেয়া হবে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটা কার্যক্রম চলমান আছে সেটা হলো বিতর্কিত নাম বাদ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে এরকম প্রমাণ হলে কর্তৃপক্ষ থেকে আবেদনের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করা হবে। রাজনৈতিক বিতর্কিত ব্যক্তিদের ব্যাপারেও একই নিয়ম থাকবে।’
ভাড়া বাড়িতে থাকা প্রতিষ্ঠান এমপিও শর্ত ভঙ্গ করেনি বলেও মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী। এমপিও পেয়ে ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো আগেই টেন্ডার করা ছিল। এমপিও পাওয়ার কথা শুনে তারা তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু করেছেন। এটা কোনো নীতিভঙ্গ নয়।’
একটি আগে এমপিও পাওয়া স্কুল এমপিওভুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ওই স্কুলটি আসলে উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য আবেদন করেছিলো মনে হয়। এটা ইনপুট দেয়ার সময় হয়তো ভুলটা হয়েছে। তারপরও আমার কাছে মনে হয়, আমরা যদি আগের ২৫ হাজারের তালিকাটা দেখে করতে পারতাম তাহলে আরও ভালো হতো। এরকম ভুল হতো না। একই ভাবে শাহজালাল সরকারি কলেজের ক্ষেত্রেও একই ভুল হয়েছে। কারণ জাতীয়করণ আর এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়াটা ভিন্ন। তারপরও জাতীয়করণের তালিকাটা দেখে করলে ভালো হতো।’