Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ রবিবার, আগষ্ট ২০২৫ | ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদে আলোচনায় যারা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:২৪ PM
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:২৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


দীর্ঘদিনের অচলায়তন ভেঙ্গে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলন। এর মাধ্যমে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো হবে আওয়ামী লীগের সহযোগী এই সংগঠনটিকে।

একইসাথে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। সংগঠনটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সক্রিয় হয়েছেন পদপ্রত্যাশীরা। উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে দলীয় কার্যালয়গুলোতে। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী আগামী ১৬ই নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। সকাল ১১টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বোশেষ ২০১২ সালের ১১ জুলাই সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ১১ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও ১২ নভেম্বর উত্তরের সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করেছে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ২০০৬ সালের ৩১ মে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় ঢাকা মহানগরকে উত্তর ও দক্ষিণ দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।

সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই প্রতিদিন বিকালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় উত্সবমুখর হয়ে ওঠে। এসব কার্যালয়ে বিভিন্ন পদ প্রত্যাশীরা আড্ডা ও শোডাউন শুরু করেছেন। এছাড়া এত দিন সংগঠনগুলোর যেসব নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সুনজর কাড়তে সঙ্গম হননি, তারাও সক্রিয় হতে শুরু করেছেন।

প্রায় ৯ বছর পর কেন্দ্র এবং ১৩ বছর পর নগর সম্মেলন হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী এ সংগঠনটির। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নেতৃত্বের পালাবদলের এই সম্মেলন ঘিরে এরই মধ্যে নেতাকার্মীদের কাছে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখন জমজমাট। দুই অফিসের সামনে টানানো হয়েছে অসংখ্য ব্যানার। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন নেতাদের সঙ্গে কেউ কেউ যোগাযোগ করছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সুনজর পেতে বিভিন্ন কর্মসূচিও হাতে নিচ্ছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে আত্ন প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকে।

সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম জড়িয়ে পড়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির নাম। এর পরপরই সামনে আসে সম্মেলনের গুঞ্জন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর সম্মেলনেরও তারিখ নির্ধারণ করা হয়। আওয়ামী লীগের একটি নির্ভযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এবার নানা বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে স্বচ্ছ ইমেজ এবং দুর্দিনের রাজনৈতিক কার্মকাণ্ড পর্যালোচনা করা হতে পারে।

সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জানান, নিয়মিত কমিটি না হওয়ায় সংগঠনিটর সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছিলো। তবে সম্মেলনকে সামনে রেখে সবাই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। নেতাকর্মীরা দাবি করেন, নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায় যোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে বাধার সৃষ্টি হয়। আগামীতে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন সম্মেলন সম্পন্ন করা গেলে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে এবং সাংগঠনিক অচলায়তন ভাঙবে।

সম্মেলনকে সামনে রেখে শীর্ষ পদে যেতে মাঠে রয়েছেন প্রায় এক ডজন নেতা। এদের বেশিরভাগই অতীতে ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে কারাভোগকারী, শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শুরু করেছেন লবিং তদবির, যাতায়াত বাড়িয়েছেন গণভবনে। একই অবস্থা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পদ প্রত্যাশীদের মাঝে।

শীর্ষ পদ পেতে পদপ্রত্যাশীদের পরিশ্রমের কমতি নেই। তবে এরই মধ্যে পদপ্রত্যাশীদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতাসহ কয়েক জন পদপ্রত্যাশীদের নামে বিভিন্ন ধরণের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সম্মেলনের আগমুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি ব্যবহার করে অনেক প্রার্থীর চরিত্রহনন করা হচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক দক্ষতা, স্বচ্ছ ইমেজ এবং অতীত আন্দোলন সংগ্রামে প্রার্থীর ভূমিকাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালীন সময়ে যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলেন নেতৃত্ব নির্বাচনে তারা অগ্রাধিকার পাবেন। এছাড়া দলের দুর্দিনে যারা তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় কারাভোগ করেছেন তাদেরকে এই সম্মেলনে বিশেষ ভাবে মূল্যায়িত করা হতে পারে।

জানা গেছে, সম্মেলনের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক লীগে আমুল পরিবর্তন আসতে পারে। আলোচনায় আছেন ১/১১ পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। সম্প্রতি ক্যাসিনোকাণ্ডে বিতর্কিতদের তালিকায় বর্তমান সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছারের নাম আসায় সংগঠন থেকে ছিটকে পড়তে পারেন তিনি। তবে সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাংসদ পঙ্কজ দেবনাথ, সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, মঈন উদ্দীন মঈন, আফজালুর রহমান বাবু। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন একঝাক সাবেক ছাত্রনেতারা, যারা ১/১১ পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন এবং বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আক্রশের শিকার হয়েছেন।

শীর্ষ নেতৃত্বে যেতে মাঠে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু, তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিন সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, শেখ সোহেল রানা টিপু, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। খাইরুল হাসান জুয়েলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। ছাত্রজীবনে মাদারীপুরের একটি ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের সাধারণ সম্পাদক এবং সর্বোশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হন এবং এক বছরের বেশি সময় কারাভোগ করেন।

এছাড়া শেখ সোহেল রানা টিপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাজ্জাদ সাকিব বাদশা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরা উভয়েই বিরোধী দলে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন।

আসন্ন সম্মেলনের মাধ্যমে কেমন নেতৃত্ব আসতে পারে এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এখানে যোগ্য, সৎ, ক্লিন ইমেজ ও রাজনীতিতে দীর্ঘ পথপরিক্রমা রয়েছে তাদেরকেই নির্বাচিত করা হবে।

নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আমরা শুধু যে যার মতো করে মতামত দেব। তবে এটুকু বলতে পারি যাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের নেতিবাচক কথা উঠেছে, সম্মেলনে তাদের প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের লড়াইয়ে যারা মাঠে রয়েছেন তারাও দুর্দিনের নেতাকর্মীদের সম্মেলনের মাধ্যমে মূল্যায়ন চান। তাদের দাবি সংগঠনের প্রতি যাদের আবেগ-ভালোবাসা, ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে এমন নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে সংগঠন আরো শক্তিশালী হবে। সম্মেলন প্রসঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল হাসান জুয়েল বলেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী ব্যক্তি যিনি নেত্রীর প্রশ্নে অতীতে কখনো আপস করেনি, দীর্ঘদিন রাজপথে শ্রম দিয়েছেন এমন নেতৃত্বই আসবে বলে বিশ্বাস করি। একই সাথে যাদের কারণে দলের দুর্নাম হয়, ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখেও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা চলছে। নগর শাখার শীর্ষ পদে যেতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানরগ উত্তরের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, ঢাকা মহানগর উত্তরের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, মহানগর দক্ষিনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক, ঢাকা মহানগর দক্ষিন ছাত্রলীগের সবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জাসান রানা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।

সম্মেলন প্রসঙ্গে কামরুল হাসান রিপন বলেন, দলের দু:সময়ে যারা জীবন বাজি রেখে দলের জন্য কাজ করেছেন, রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন করেছে, সংগঠনকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশারী করতে ভুমিকা রেখেছেন- এমন নেতৃত্ব আসুক। এতে সংগঠন যেমন শক্তি হবে তেমনি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার হাতও শক্তিশালী হবে। তারিক সাঈদ বলেন, দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় আমাদের প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানাই। যারা দু:সময়ে দলের পাশে থেকে কাজ করেছেন, রাজপথে থেকেছেন তারাই যেন নেতৃত্বে আসে এই প্রত্যাশা আমার।

উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এরই মধ্যে সংগঠনটি পার করেছে রজতজয়ন্তী। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পর ২০০৩ সালের জুলাই মাসে প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দ্বিতীয় ও সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ১১ জুলাই। গঠণতন্ত্র অনুসারে প্রতি তিন বছরে সম্মেলন হলে সংগঠনটির ৮টি সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।

 

Bootstrap Image Preview