এবারের ভয়াবহ বন্যায় জামালপুরে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে জেলার ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এছাড়া জেলার প্রায় সাড়ে ২২ হাজার পুকুরের মাছ রাতারাতি বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ায় মৎস্য খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একদিকে ব্যাংকের ঋণ অন্যদিকে মাছের খামারের মোটা অংকের পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন জেলার প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার মৎস্য চাষি।
জেলার সাত উপজেলার ৬২টি ইউনিয়নে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ বারের ভয়াবহ বন্যায় ২২ হাজার ৫শ পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে ৯ হাজার ৩শ পুকুর সর্ম্পূণ প্লাবিত হয়ে বিভিন্ন আকৃতির মাছ পানিতে ভেসে গেছে। পুকুরে জাল এবং টিনের বেড়া দিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। প্রবল স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে মৎস্য খামারিদের আশা ভরসা জায়গা। তাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার ১৬ হাজার ৪৮৬ জন মৎস্য খামারি।
হঠাৎ বন্যার পানিতে পুকুরের সব মাছ রাতারাতি ভেসে যাওয়ায় প্রায় ৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় পুকুরের অবকাঠামোগত ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাত কোটি ২০ লাখ টাকা। মৎস্য চাষিরা ঋণ করে পুকুরে মৎস্য চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু বন্যায় পুকুর ভেসে যাওয়ায় অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ায় অনেক খামারিদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণের টাকা, এনজিওদের কিস্তি, মাছের খারারের বাকি টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে? এত ঋণের বোঝা মাথা নিয়ে মৎস্য খামারিরা এখন দিশেহারা।
কয়েকজন মৎস চাষি বলেন, চোখে সামনে বন্যার পানিতে পুকুরের সব মাছ ভেসে গেল, নিজে থাকার ঘরে বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে, পরিবার নিয়ে খাবো সেটাও নেই। চাপের কথা চিন্তায় এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। সরকার এখন সহযোগিতা না করলে নতুন করে মাছ চাষ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ জানান, ভয়াবহ বন্যায় জেলার সাত উপজেলায় মৎস্য চাষিদের অনেক লোকসান হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা প্রণয়ন করছি। সরকারের কাছে চাষিদের জন্য প্রণোদনা জন্য সুপারিশ করবো। মাঠ পর্যায়ে বন্যার কারণে যে অবস্থা খামারগুলোতে তাতে সহযোগিতা না পেলে মাছ চাষে বিমুখ হয়ে পড়তে পারে। তবে সরকার তাদের কথা মাথায় নিয়ে কাজ করছেএবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা চেয়েছে।
সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের সরকার অর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের নতুন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সহযোগিতা করবেন এমনটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।