আমন ও বোরো মৌসুমের জন্য তিনটি নতুন উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। বর্তমানে আবাদ করা জাতগুলোর চেয়ে নতুন উদ্ভাবিত ধানের ফলন বেশি। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নতুন উদ্ভাবিত ধানের জাত চালের মোট উত্পাদন বাড়াবে।
গত সপ্তাহে নতুন তিনটি ধানের জাত কৃষকদের আবাদের জন্য ছাড় করা হয়। এগুলো হলো রোপা আমনের প্রিমিয়াম কোয়ালিটি জাত ব্রি ধান ৯০ ও বোনা আমনের জাত ব্রি ধান ৯১ এবং বোরো মৌসুমের পানি সাশ্রয়ী জাত ব্রি ধান ৯২ ।
বর্তমানে ৩ কোটি ৬২ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ২৭ লাখ টন আউশ, ১ কোটি ৩৯ লাখ টন আমন এবং ১ কোটি ৯৫ লাখ টন বোরো ধান। তথ্য অনুযায়ী, নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৯০-এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৫ টন। এ ফলন আমন মৌসুমের জনপ্রিয় জাত ব্রি ধান ৩৪-এর চেয়ে হেক্টরে প্রায় এক থেকে দেড় টন বেশি। ব্রি ধান ৯১-এর হেক্টর প্রতি গড় ফলন প্রায় আড়াই টন যা স্থানীয় জাত ফুলকরির চেয়ে দেড় টন বেশি। আর বোরো জাত ব্রি ধান ৯২-এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় সাড়ে ৮ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় এ জাত হেক্টর প্রতি প্রায় সাড়ে ৯ টন ফলন দিতে সক্ষম।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ব্রি ধান ৯০-এ আধুনিক উচ্চ ফলনশীল ধানের সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উচ্চমাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ এ জাতের এ ধান হালকা সুগন্ধযুক্ত। ইউরিয়া সারের পরিমাণ এতে কিছুটা কম লাগে। এ ধানে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৩ শতাংশ এবং প্রোটিন ১০ শতাংশের বেশি। এর কাণ্ড শক্ত, সহজে হেলে পড়ে না এবং ধান পাকার পরও গাছ সবুজ থাকে। এর গড় ফলন পাঁচ টন হলেও উপযুক্ত পরিচর্যায় এটি সাড়ে পাঁচ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। নতুন উদ্ভাবিত এ জাত স্থানীয় জাত চিনিগুঁড়া এবং চিনি আতপের বিকল্প হিসেবে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করবে।
ব্রি ধান ৯১-এর মধ্যম মাত্রার স্টেম ইলঙ্গেশন গুণ সম্পন্ন অর্থাত্ পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এটি বাড়তে পারে এবং এটি জলমগ্নতা সহিষ্ণু। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পরে হেলে পড়লেও গাছের কাণ্ড পরে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা জলি আমনের জাতের মধ্যে আছে মানিকগঞ্জ অঞ্চলে দীঘা, দুধবাওয়াইলা, ঝিঙ্গাশাইল, ভেপা, ফরিদপুর অঞ্চলে বাইল্যা দীঘা, খইয়ামটর এবং কুমিল্লা অঞ্চলে ফুলকুরি, কাইত্যা বাগদার ইত্যাদি। এসব স্থানীয়জাত থেকে ব্রি ধান ৯১ হেক্টরে অন্তত এক টন ফলন বেশি দেয়। এ জাত দেশের এক মিটার উচ্চতার গভীর পানির বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে পাঁচ লাখ হেক্টর জমিতে চাষ করতে পারলে মাট ধান উত্পাদন প্রায় পাঁচ লাখ টন বৃদ্ধি পাবে।
আর বোরো মৌসুমের পানি সাশ্রয়ী জাত ব্রি ধান ৯২। এ ধান চাষে তুলনামূলক কম পানি ব্যবহার করে। সেজন্য বরেন্দ্র অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে যেখানে পানির স্তর নিচে নেমে যায় সেখানে এটি চাষ করে সুফল পাওয়া যাবে। এ জাত হেক্টরে গড়ে প্রায় সাড়ে ৮ টন ফলন দেয়। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে হেক্টরে প্রায় সাড়ে ৯ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের গাছের কাণ্ড শক্ত। তাই গাছ লম্বা হলেও হেলে পড়ে না। এ জাতের ধানের ভাত ঝরঝরে করার উপাদান অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬ শতাংশ ।