Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ রবিবার, মে ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

নুসরাত হত্যার প্রতিবেদন দাখিল আজ, গ্রেফতার ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড চাইবে পিআইবি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ মে ২০১৯, ১১:২৬ AM
আপডেট: ২৯ মে ২০১৯, ১১:৩১ AM

bdmorning Image Preview


পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মাত্র ৪৮ দিনের তদন্তে নুসরাত খুনের পুরো ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে। ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে পিবিআইর ৭২২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে। এতে হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, নুসরাত মাদরাসার সবার স্বার্থে ঘা দিয়েছিল।

মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, আজ বুধবার ফেনীর আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করা হবে।

বনজ কুমার বলেন, ‘মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ মূল আসামি। নুসরাত হত্যার পুরো দায় ওই অধ্যক্ষের। তিনিসহ মোট ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আজ বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’

তদন্তের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বনজ কুমার বলেন, ‘১০ এপ্রিল মামলাটির তদন্তভার আমরা পাই। ১১ তারিখে প্রথমেই আমরা গ্রেফতার করি স্থানীয় কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে। এরপর একে একে অন্যদের গ্রেফতার করি। আমরা যে সুনির্দিষ্ট ১৬ জনকে এ ঘটনায় অ্যারেস্ট দেখিয়েছি  আমরা তাদের সবার মৃত্যুদণ্ড চাইব। তাদের প্রত্যেককেই আমরা কয়েক দফায় রিমান্ডে এনেছি। সবচেয়ে বেশি রিমান্ডে এনেছি সিরাজ-উদ-দৌলাকে। তাঁকে তিনবার রিমান্ডে এনেছি। ১২ আসামি ছাড়াও ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।’

পিবিআই প্রধান বলেন, ‘এই মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে যতই ভেতরে ঢুকেছি ততই আমাদের কষ্ট বেড়েছে। কেবল সাবালিকা হয়েছে এমন একটা মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম যে এ মামলার আসামিরা কেউ ছাড় পাবে না। বিচার চলাকালে আদালতে সব আসামি উপস্থিত থেকে নিজ চোখে তাদের বিচার দেখবে। আমরা পেরেছি। ঘটনায় অভিযুক্ত প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা উল্লেখ করে মামলার চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে।’

বনজ কুমার জানান, অভিযোগপত্রে যে ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে তারা সবাই গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে রয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘প্রথমে হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে অনেকেই বলেছেন, মাদরাসার আলেমদের অপমান ও প্রেমের ব্যর্থতা। কিন্তু আমরা সেটি পাইনি। আমরা পেয়েছি ওই মাদরাসার সকলের স্বার্থে এই মেয়েটি ঘা দিয়েছিল। ওই মাদরাসার নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক ক্ষমতা, ছাত্রীদের এখানে বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন করার ক্ষমতা ভয়াবহ। এই মেয়েটি এর প্রতিবাদ করে। যে কারণে তাকে তারা সবাই মিলে পরিকল্পনা করে হত্যা করে।’

বনজ কুমার আরো বলেন, 'সিরাজ-উদ-দৌলার ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির পুরো ঘটনায় সবার সম্পৃক্ততা প্রমাণ করেছে। জবানবন্দিতে তিনি নুসরাতের গায়ে হাত দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি (অধ্যক্ষ) বলেছেন যে ‘নুসরাতকে প্রথমে প্রেসার দিবা। না হলে খুন করবা’। খুনের পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন যে ‘আগুন দিয়ে খুন করবা এবং আত্মহত্যা বলে চালাবা’।'

পিবিআই প্রধান আরো বলেন, তদন্তের সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পাঁচটি বোরকার মধ্যে তাঁরা তিনটি উদ্ধার করতে পেরেছেন। একটি শাহদাত হোসেন শামীমের ফেলে দেওয়া মাদরাসার পুকুর থেকে। আরেকটি জোবায়েরের, যে ঘটনা ঘটিয়ে বের হয়ে গিয়ে খালে ফেলে দিয়েছিল, সেটা উদ্ধার করেছেন। এ ছাড়া দিয়াশলাইয়ের কাঠি উদ্ধার করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘কেমিক্যাল রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। রিপোর্ট বলছে, কেরোসিন ব্যবহৃত হয়েছে। সেই কেরোসিন কোথা থেকে কিনেছে তাও বের করেছি।’

পিবিআই প্রধান বলেন, নুসরাত পরীক্ষা দিতে এলে পরিকল্পনা মতো উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতকে তার বান্ধবীকে মারধরের কথা বলে। নুসরাত দৌড়ে ছাদে যায়। ছাদে যাওয়ার পর মামলা তুলতে চাপ দিয়ে তাকে একটা সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। সেখানে পাঁচজন বোরকা পরে অংশ নেয়।

তাদের দুজন মেয়ে—উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ও কামরুন নাহার মনি। কিন্তু নুসরাত রাজি না হওয়ায় শামীম তার মুখ চেপে ধরে এবং পপিকে বলে নুসরাতের বোরকার ভেতর থেকে তার ওড়না বের করে নিতে। পপি ওড়না বের করে নিয়ে জোবায়েরকে দেয়। জোবায়ের ওড়নার এক অংশ দিয়ে নুসরাতের পা বাঁধে এবং পপি পেছনে হাত বাঁধে। এরপর তিনজন মিলে নুসরাতকে শুইয়ে ফেলে। শামীম মুখ চেপে ধরে। পপি ও জুবায়ের পা চেপে ধরে ওড়না দিয়ে গিঁট দেয়।

আগে থেকে ছাদে কালো পলিথিনে রাখা ছিল কেরোসিন ও কাচের গ্লাস। সেই গ্লাসে কেরোসিন নিয়ে নুসরাতের গায়ে ঢেলে দেয় জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন। পরে শামীমের ইঙ্গিতে জোবায়ের দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি আরো বলেন, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়াদের মধ্যে দুজন মেয়ে সামনের দিকে থেকে বের হয়ে আস্তে আস্তে পরীক্ষার হলে ঢোকে। আরেকজন পরীক্ষার্থী ছিল জাবেদ। সেও পরীক্ষার হলে যায়। সে পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে বোরকা দিয়ে যায় শামীমকে।

শামীম মূল গেট দিয়ে না গিয়ে পেছনে দিক হয়ে বের হয়ে যায়। জোবায়ের অত্যন্ত সাহসী। সে বোরকা পরে ঘুরে মূল গেটে আসে। সেখান দিয়ে একজন মেয়ে হিসেবে সে বের হয়ে পাশেই কৃষি ব্যাংকের সিঁড়িতে উঠে বোরকা ও হাতমোজা খুলে ফেলে।

Bootstrap Image Preview