Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ মঙ্গলবার, জুন ২০২৫ | ৩ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

দলের দুর্দিনে কি এজন্যই আমরা কষ্ট করেছিলাম?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ মে ২০১৯, ০৪:৩১ PM
আপডেট: ২২ মে ২০১৯, ০৪:৩১ PM

bdmorning Image Preview


ছাত্র রাজনীতিতে আমার দীর্ঘ দিনের পথচলা। কিন্তু বর্তমান ছাত্র রাজনীতির অবস্থা দেখে আমি হতবাক! তাই আজ কিছু অভিজ্ঞতা প্রকাশ না করে পারলাম না।

আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হই ২০০৪ সালে, যখন বিএনপি-জামাত (জোট সরকার) ক্ষমতায়। তখন ছিলো দলের কঠিন অবস্থা, চারদিকে শুধু নির্যাতন আর নির্যাতন। সে সময় আমার ক্লাসের বেশীর ভাগ বন্ধুবান্ধবই ছাত্রদলের রাজনীতি করতো। শুধুমাত্র আমি ছাত্রলীগ করতাম তার কারণ হলো, যখন প্রাইমারীতে পড়তাম তখন ছিলো ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের সময়। সে সময়েই বাবার হাত ধরে জীবনের প্রথম আমার মিছিলে যাওয়া। তখন জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু বুঝতাম না। শুধু বুঝতাম নৌকা। শেখ মুজিবের মার্কা নৌকা মার্কা, শেখ হাসিনার মার্কা নৌকা মার্কা। আর আমার বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্ত। শুধু তাই নয়, আমার বাবা সব সময় বলে থাকেন, 'আমি শেখের সৈনিক'। সেই থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করতাম। বঙ্গবন্ধুর দল, শেখ হাসিনার দল, জাতীয় চার নেতার দল এবং বাংলাদেশের জন্য তাদের অবদানের অনেক কথা শুনতাম বাবার মুখেই। শুনতে শুনতে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের প্রেমে পড়ে যাই সেই ছোট্টবেলাতেই।

একটা কথা বলে রাখি, সরকার দলে রাজনীতি করা সহজ কিন্তু বিরোধীদলে রাজনীতি করা কিন্তু কঠিন থেকে কঠিনতর। ফিরে যেতে চাই ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে, যখন বিএনপি-জামাত (জোট সরকার) ছিলো ক্ষমতায়। আর আওয়ামীলীগ ছিলো বিরোধীদলে। সে সময়ের রাজনীতি আর বর্তমান রাজনীতির মধ্যে আকাশ আর জমিনের সমান ব্যবধান। যারা ওই সময়ে রাজনীতি করেছেন নিশ্চিতভাবেই তারা কখনো সেই স্মৃতি ভুলতে পারবেন না। আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো ২০০৪ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করার। এজন্য আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করি। কেননা আমি দলের বিপদের দিনে দলের জন্য কাজ করতে পেরেছিলাম এবং ত্যাগ শিকার করতে পেরেছিলাম। আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো ১/১১ এর সময় নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে লগি-বৈঠার মিছিল করার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে কি পরিমাণ পরিশ্রম করেছিলাম তা একমাত্র আল্লাহ জানেন এবং আমার ইউনিয়নের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ভালো জানেন। তখন যাদের সাথে রাজনীতি করেছি তাদেরকে মনে হতো আপন ভাইয়ের মত। তাদের মাঝে কখনো ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলোনা। হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে ছিলাম।

রাজনীতি আদর্শের জায়গা, রাজনীতি মানব কল্যাণে কাজ করার জায়গা, রাজনীতির অপর নাম হলো দেশপ্রেম। একটা ছেলে যখন ওয়ার্ড থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করে ইউনিয়ন/ উপজেলা/ জেলা পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতি করে তখন সে বুঝে শিষ্টাচার কি এবং কিভাবে দলকে ভালোবাসতে হয়।

অন্যদিকে বিশ্বাবিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিটা একটু ভিন্ন। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এবং বলছি, যে সমস্ত ছেলেরা স্কুল/কলেজ থেকে ছাত্র রাজনীতির সাথে সক্রিয় হয় তাদের মাঝ থেকে খুব কম সংখ্যক ছাত্র/ ছাত্রী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় আর বেশীর ভাগ ছাত্র/ছাত্রীই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় না। কেননা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে ভালো রেজাল্ট করতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় ওই সময় ভালো ছাত্ররা রাজনীতি পছন্দ করেনা। তাদের পরিবারও তাদের ছাত্র রাজনীতি করতে দিতে অনীহা প্রকাশ করে। শুধু তাই নয়, উনারা এলাকার যে সমস্ত ছেলেরা ছাত্র রাজনীতি করে তাদের সাথে মিশতে পর্যন্ত দিতে চায়না। অথচ সেই ভালো ছাত্রেরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় তখন তারা শুরু করে তাদের রাজনীতি। তাদের মাঝ থেকেই কেউ করে ত্যাগের আর কেউ করে ভোগের রাজনীতি। তবে ত্যাগের চেয়ে ভোগের রাজনীতিটাই বেশি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রীরা। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন তারা সেদিকে ধাবিত হয় শুধুমাত্র সুবিধা পাওয়ার জন্য। কিন্তু তৃণমূলে (ওয়ার্ড/ইউনিয়ন/কলেজ/উপজেলা/জেলা) যারা ছাত্ররাজনীতি করতে গিয়ে জীবন থেকে অনেককিছুই হারিয়ে ফেলে এবং রাজপথে দলের জন্য অবিরাম পরিশ্রম করে যায় বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা কখনো কেন্দ্রীয় নেতা হবার সুযোগ পায়না। তবুও তারা কখনো কেন্দ্রীয় নেতা হবার লোভে নিজ দলের নেতাদের নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়ায় না। পদ-পদবীর কথা না ভেবে তৃণমূলরা সর্বদাই আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বারংবার মাঠে কাজ করে যায়।

আজকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘিরে যে সমস্ত নোংরামী শুরু হয়েছে তা দেখে আমি হতবাক হয়েছি, থমকে দাঁড়িয়েছি। এসব দেখলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, প্রচুর আঘাত লাগে। কলিজায় ব্যাথা লাগে। আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম, দলের দুর্দিনে কি এজন্যই আমরা কষ্ট করেছিলাম? আপনাদের কাদা ছুড়াছুড়ি দেখে মানুষ হাসে আর আমাদের লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায়। নেত্রীকে নিয়ে মানুষ বাজে মন্তব্য করে আপনাদের জন্য। হ্যাঁ, শুধু আপনাদের মত কিছু মেধাবী সুবধাবাদীদের জন্যই। একটা কথা মনে রাখবেন, উপরের দিকে থুথু দিলে নিজেদের গায়েই এসে পড়ে।

আমরা যারা তৃণমূলে ছাত্ররাজনীতি করি, আমরা আপনাদের মত এতো মেধাবী না। কিন্তু আপনাদের মত আমরা নোংরামীটাও করতে পারিনা। বড় বড় নেতারা বলে তৃণমূলই হচ্ছে দলের প্রাণ আর আপনারা দলের উপরে বসে করেন দলের বদনাম। আগে ভাবতাম আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখার আছে, আর এখন মনে হয় আপনাদের কারনেই দলের বারোটা বাজবে।

আরেকটা বিষয় একটু তুলে ধরি, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর পর থেকে ছাত্রলীগে প্রচুর অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। যাদের পরিবারের লোকজন গ্রামে বিএনপি/জামাত করে অথচ তারা বিভিন্ন শহরে/ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ করে। যারা ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রদল /ছাত্রশিবির করতো, তারাও এখন ছাত্রলীগ করে, আবার কেউ কেউ যুবলীগও করে। আমি শুধু কথার কথাই বলছিনা। প্রমাণ সহকারে দিতে পারবো ইন-শা-আল্লাহ্।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলনের মাধ্যমে সারা বাংলার ছাত্র সমাজ থেকে বাছাই করে যে দুইরত্ন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপহার দিয়েছেন এর জন্য আমরা তৃণমূল ছাত্রলীগ দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। অতীতের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আমরা দেখেছি, তাদের আচার-আচরণ কেমন ছিল। তারা তৃণমূলের কর্মীদেরকে কতটুকু পাত্তা বা মূল্যায়ন করতো তাও আমাদের জানা। তাদের গেটের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দুই মিনিট কথা বলার জন্য দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা না দেখার ভান করে সামনে দিয়ে চলে যেতো। তারা তৃণমূল কর্মীদের রাস্তার টোকাই এর চেয়ে ভালো নজরে দেখতেন বলে আমার কখনো মনে হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতাদের এহেন কর্মকান্ডে অনেক কষ্ট পেয়েছি। আবেগে কেঁদে চোখ ভিজিয়েছি। ব্যথাটুকুকে ঘুম পাড়িয়ে আবার মাঠে কাজ করে গেছি। কিন্তু কখনো কারো কাছে নালিশ করিনি। কারন পাছে যদি আবার লোকে ছাত্রলীগকে নিয়ে হাসাহাসি করে!

আজকে যারা কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে আছেন আমরা তাদেরকেও দেখছি। তাদের কাছে ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা বা মহানগর পর্যন্ত যেকোন কর্মী গেলে তারা মূল্যায়ন সহকারে কথা শুনে এবং বুকে জড়িয়ে নেন। আমরা যারা তৃণমূলের কর্মী আছি নেতাদের কাছ থেকে আর কিইবা চাই একটু ভালোবাসা ছাড়া? বর্তমান নেতৃত্ব তা আমাদের দু-হাত ভরে দিয়েছেন এতটুকু স্বীকার করতে আমার কোন দ্বিধা নাই।

আরেকটা কথা বলে রাখি, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এর ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট যে কমিটি হয়েছে তারা সবাই কিন্তু সভাপতি এবং সেক্রেটারির 'মাই ম্যান' না। এখানে অনেক হেবি ওয়েট নেতাদেরও তদবিরও রয়েছে। শুধু শুধু শোভন ভাই এবং গোলাম রাব্বানী ভাইকে দোষারোপ করার কিছু নেই। যদি ভুল হয়েই থাকে এটাওতো সত্য, মানুষ দোষ গুনের উর্দ্ধে নয়। ভুলতো মানুষেরই হয়। আপনাদেরকে একটু মনে করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর ২৮তম জাতীয় সম্মেলনে সোহাগ-জাকির ভাইয়ের যে কমিটি হয়েছিলো সেই কমিটিতে বিবাহিত এবং অনুপ্রবেশকারী ছিল। যাদের মাঝে অনেকের জীবনের প্রথম পদই ছিল কেন্দ্রীয় কমিটি।

একটা মানুষের কত প্রয়োজন? দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনে যারা দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলো এবং নির্বাচিত হয়েছে তাদেরকেও দেখি কমিটিতে ভাল পদ-পদবী না পেয়ে রাস্তায় নেমে কমিটির বিরুদ্ধে হৈ চৈ করে এবং মিথ্যাচার করে। একটা মানুষের আর কত চাই? তাহলে সেতো মানুষই নয়, সেতো রাক্ষস। এই দুনিয়াটা তাকে লিখে দিলেও তার মন ভরবে না।

কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ভাইদের কাছে অনুরোধ করে বলতে চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যার সমাধান করুন। জনগণের কাছে আর হাসির পাত্র হতে চাইনা আমরা। আর যারা দলে থেকে দলের বদনাম করে তাদের কোনো ধরনের ছাড় আপনারা দিয়েন না, তাদের কে কঠিন হস্তে দমন করুন।

পরিশেষে বলতে চাই, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড, যারা দলটাকে অনেক ভালোবাসে, তারা কখনো দলের বদনাম করতে পারেনা। চেইন অফ কমান্ড মেনে নিন, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে নয়তো ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবেনা। মোদ্দা কথা, যে করেই হোক আমরা তৃণমূল ছাত্রলীগ অতিসত্ত্বর এই নোংরা রাজনীতির সমাধান চাই। আদর্শের জায়গায় থাকুন, দলকে ভালবাসুন। একদিন না একদিন আপনার/আমার পরিশ্রমের মূল্যায়ন হবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

(ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক থেকে)

Bootstrap Image Preview