Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ রবিবার, আগষ্ট ২০২৫ | ২ ভাদ্র ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার চালকের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০১৯, ১০:২৯ AM
আপডেট: ১৩ মে ২০১৯, ১০:২৯ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করেছে স্বর্ণলতা বাসের চালক নূরুজ্জামান নুরু। 

শনিবার (১১ মে) দিবাগত রাতে তাকে কিশোরগঞ্জ আদালতে হাজির করা হলে তিনি তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে সে জানায়, ধর্ষণে বাধা দিলে তানিয়ার মাথায় আঘাত করা হয়। এরপর তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়লে তিনজন তাকে ধর্ষণ করে।

এদিকে নিহত তানিয়ার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তানিয়ার শরীরের ১০ জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং মাথায় আঘাতজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান এ তথ্য জানিয়ে গতকাল রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী মাথার পেছনে শক্ত বস্তুর আঘাতের ফলে খুলি দ্বিখণ্ডিত হয়ে রক্তক্ষরণে তানিয়ার মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল বিকালে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ অফিসে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তানিয়াকে ড্রাইভার ও হেলপারসহ তিনজন মিলে ধর্ষণ করে। তাদের মধ্যে দুজন ধরা পড়লেও একজন এখনো পলাতক। তাকে ধরার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

এ সময় ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপস্ অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স) মো. আসাদুজ্জামান মিয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম সোপানসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে ডিআইজি বলেন, নৃশংস এ ঘটনায় জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না এবং নিরপরাধ কাউকে এ মামলায় ফাঁসানো হবে না।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্বর্ণলতা পরিবহনের ওই বাস ও বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকি আলামত উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ব্রিফিংয়ের আগে ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল, কটিয়াদীতে নিহত তানিয়ার বাড়িসহ বাজিতপুর থানা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

তানিয়ার বড় ভাই শহীদুল ইসলাম সুজন অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তানিয়ার ব্যাগ, জামাকাপড়, টিভি উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলেও গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, টাকা ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারেনি। তানিয়ার হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি বারডেমে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল সকালে বারডেম জেনারেল হাসপাতাল মিলনায়তনে নার্সদের অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তানিয়া হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে নার্সিংসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় ১২ জন নার্সকে পুরস্কৃত করে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সমিতির ন্যায়পাল মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক এআর খান, বারডেমের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. জাফর এ লতিফ, ন্যাশনাল কাউন্সিল সদস্য মাহবুব-উজ-জামান, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এমএ রশীদ ও বারডেম জেনারেল হাসপাতালের নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট রাহিলা খাতুন বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন তানিয়া ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে গতকালও বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছে।

তানিয়া হত্যায় জড়িতদের দ্রুত সর্বোচ্চ শাস্তি ও নার্সদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেছে স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদ (স্বনাপ) জেনারেল হাসপাতাল শাখা ও কুড়িগ্রাম নার্সিং ইনস্টিটিউট।

গতকাল বেলা ১১টায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সামনে এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন স্বনাপের সভাপতি আম্বিয়া পারভীন, সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ সিদ্দিকী শানু, সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ শেফালী রহমান, তত্ত্বাবধায়ক খালেদা বানু, ডিপিএইচএন আঞ্জুমান আরা, শান্তি রানী, জহির রায়হান, লিটন, রাজীব কুমার বিশ্বাস, নুর ইসলাম প্রমুখ।

বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে সকালে সম্মিলিত নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন জেলা কমিটি ও স্বনাপ শের-ই বাংলা মডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল শাখা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

এ সময় বক্তব্য রাখেন সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পুষ্প রানী চক্রবর্তী, স্বনাপের বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি মলিনা মণ্ডল, জেলার সভাপতি সেলিনা আক্তার, উন্নয়ন সংগঠক আনোয়ার জাহিদ, শুভংকর চক্রবর্তী, কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু প্রমুখ।

সকালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) রামেক হাসপাতাল শাখা। বিএনএর রামেক হাসপাতাল শাখার এলোরা পারভীনের সভাপতিত্বে এ সময় সিনিয়র সহ-সভাপতি নাজমা সুলতানা, সাধারণ সম্পাদক ময়েজ উদ্দিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, সাদরুল ইসলাম, খন্দকার গোলাম রাজ, রাজশাহী নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী সাথী আক্তার, লাবণ্য আক্তার বক্তব্য রাখেন।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিকালে ঢাকার মহাখালী থেকে বাজিতপুর চলাচলকারী স্বর্ণলতা বাসে গণধর্ষণের শিকার হন রাজধনীর ইবনে সিনা হাসপাতালের নার্স তানিয়া। ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করে দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছিল বাসটির চালক ও তার সহযোগীরা। আদালতে জবানবন্দিতে স্বর্ণলতা বাসের চালক নুরুজ্জামান নুরু জানায়, ঘটনার দিন বিকালে তানিয়া বাসে ওঠার পর থেকেই তাকে অনুসরণ করে তারা।

পথে যাত্রীরা নেমে গেলে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে এসে সে (নুরু) হেলপার লালনকে ড্রাইভারের আসনে বসায়। কটিয়াদী থেকে বাসটি ছাড়ার পর সবশেষ একজন যাত্রী পথে নেমে গেলে গজারিয়া এলাকায় ফরিদ মিয়ার কলাবাগানের পাশে নুরুজ্জামান ও তার সহযোগীরা বাসের দরজা-জানালা লাগিয়ে দেয়। পরে দুজনের সহায়তায় তানিয়াকে বাসের মাঝখানে ফেলে ধর্ষণ করতে উদ্যত হলে তিনি কিল-ঘুষি মারেন।

তখন তার মাথা ধরে বাসের মেঝেতে দু-তিনটি বাড়ি মারে তারা। ফলে তানিয়া নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এর পর প্রথমে নুরুজ্জামান, পরে লালন ও নুরুজ্জামানের খালাতো ভাই বোরহান তানিয়াকে ধর্ষণ করে। এর পর তাকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তানিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলে তারা প্রচারও চালায়। ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বাসটি থেকে আলামত ও নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট।

 

 

 

Bootstrap Image Preview