ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকা ডুবে প্রায় ৬০ জন অভিবাসীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৫১ জনই বাংলাদেশি বলে দাবি করেছেন উদ্ধারকারী জেলেরা। ওই ঘটনায় নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে ৬ জনের বাড়ি সিলেট বলে জানা গেছে।
নিহতরা হলেন, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদের ছোট ভাই আহসান হাবিব শামীম (১৯) ও তার শ্যালক কামরান আহমদ মারুফ (২৩), জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কটালপুরের মুয়িদপুর গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে আব্দুল আজিজ (২৫), একই গ্রামের মন্টু মিয়ার ছেলে আহমদ (২৪) এবং সিরাজ মিয়ার ছেলে লিটন (২৪)।
ওই ঘটনায় ফেঞ্চুগঞ্জের দিনপুর গ্রামের আরেকজন নিহতের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তারাও নৌকায় করে লিবিয়া থেকে ইতালি যাচ্ছিলেন।
সামাদের স্ত্রী শারমিন তার দেবর ও ভাই নিখোঁজ থাকার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রায় দুই মাস আগে তার দেবর শামীম এবং ভাই মারুফ দেশ ছাড়েন। তারা ওই নৌকায় ছিলেন।
নিহত আজিজের ভাই মফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শনিবার বেলা ৩ টার দিকে তিউনিসিয়া উপকুল থেকে বেঁচে যাওয়া তার চাচা মুয়িদপুর গ্রামের দিলাল ফোন করে দূর্ঘটনা ও নিহতদের নাম পরিচয় জানান।
এছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জের নিহত আজিজের ভাই মফিজুর রহমান ওই উপজেলার ৪ জন নিহতের খবর নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া তার চাচা দিলাল শনিবার বেলা ৩টার দিকে ফোন করে চারজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।
স্বজনরা জানান, গত ৭ ডিসেম্বর সিলেটের রাজা ম্যানসনে এহিয়া ট্রাভেলসের মালিক এনাম আহমেদের মাধ্যমে প্রত্যেকে ৭ লাখ টাকা চুক্তিতে ইটালি যাওয়ার জন্য দেশ ছাড়েন। ওই সময় নৌকায় নেয়ার কথা বলা হয়নি। প্রায় চার মাস লিবিয়ায় বন্দি রাখা হয় তাদের।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নৌকাটি ডুবে যায়। তিউনিসিয়ায় রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা মঙ্গি স্লিম বলেন, নৌকাটিতে প্রায় ৭৫ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের সবাই পুরুষ। এদের মধ্যে ৫১ জনই বাংলাদেশি। তিউনিসিয়ার জেলেরা নৌকার যাত্রীদের মধ্যে ১৬ জনকে উদ্ধার করে শনিবার সকালে জারযিজ শহরের তীরে নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে ১ শিশুসহ ১৪ জন বাংলাদেশি। উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা জানায়, ঠান্ডা সাগরের পানিতে তারা প্রায় আট ঘণ্টা ভেসে ছিল। উদ্ধার হওয়া ১৬ জনের ১৪ জনই বাংলাদেশি।
বেঁচে যাওয়া লোকজন তিউনিসিয়া রেড ক্রিসেন্টকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে লিবিয়ার উপকূল থেকে ৭৫ জন অভিবাসী একটি বড় নৌকায় চড়ে ইতালির উদ্দেশে রওয়ানা হন। গভীর সাগরে বড় নৌকাটি থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট আরেকটি নৌকায় তাদের তোলা হলে অল্পক্ষণের মধ্যে সেটি ডুবে যায়।
তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট কর্মকর্তা মঙ্গি স্লিমকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রাবারের তৈরি নৌকাটি ১০ মিনিটের মধ্যে ডুবে যায়।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানায়, অভিবাসীবাহী নৌকাটি বৃহস্পতিবার লিবিয়ার জুওয়ারা থেকে রওনা হয়। ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাটি ডুবে যায়। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নৌকাটি প্রবল ঢেউয়ের মধ্যে পড়ে ডুবে যায়।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ত্রিপলিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সিকান্দার আলী জানান, তারা দুর্ঘটনার কথা জানেন এবং তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।
তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব তারা জারযিজে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। লিবিয়ায় যুদ্ধ চলার কারণে সড়কপথে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে তাদের আকাশপথে যেতে হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে বেঁচে ফেরা অভিবাসীদের ভাষ্যমতে, ৩৭ নয় নৌকাটিতে ৫১ জন বাংলাদেশি ছিলেন। এছাড়া তিনজন মিশরীয় এবং মরক্কো, শাদ এবং আফ্রিকার অন্যান্য কয়েকটি দেশের নাগরিক ছিল বলে জানান তারা।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, এ বছরের প্রথম চার মাসে লিবিয়া থেকে ইউরোপ পাড়ি দেয়ার সময় নৌকা ডুবে কমপক্ষে ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়।