প্রত্যেক বাজেটের আগের একমাস সিগারেট বা তামাক পণ্যের দাম বেড়ে যায়৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে সরকার ধুমপান কমানোর আরোপ করে কর। যেমনটা করেছিলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার। ধুমপান কমানোর জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার চালু করেছিল ‘সিন ট্যাক্স’ বা পাপ কর। ১০০% কর আরোপ করে সিগারেটের দাম প্রায় দ্বিগুন করে দিলেও ধুমপানের পরিমাণ কমানো গেছে খুবই নগন্য মাত্রায়। বরং সিগারেটের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন সস্তা সিগারেট বা মেদওয়াক নামের এক ক্ষতিকর তামাক গ্রহণে। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে আরও ক্ষতিকর।
আসন্ন বাজেট কে সামনে রেখে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে লেখা এক চিঠিতে ২০১৯-২০ বাজেটে সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের ওপর বিদ্যমান কর কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।এতে বাজারে চলমান প্রতিটি কম দামের সিগারেটে কমপক্ষে ৪ টাকা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।চিঠিতে সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্য ৯ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এই প্রস্তাবের মাধ্যমে বেনসন ও গোল্ডলিফসহ সমমানের ব্র্যান্ডের প্রতিটি সিগারেটের দাম বাড়বে অতিরিক্ত ৮ টাকা। বর্তমানে প্রতিটি বেনসন বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ও গোল্ডলিফ ৮ টাকা। বর্তমানে বাজারে সর্বনিম্ন প্রতি সিগারেটের দাম ৫ টাকা ও উচ্চস্তরে প্রতি সিগারেট ১২ টাকা খুচরা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
তবে ধুমপান কমানোর জন্য সিগারেটের দাম বাড়িয়েও কি ধুমপানের পরিমাণ কমানো সম্ভব হয়েছে?
সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপর তৈরি করা বিবিসির এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গত বছর ‘সিন ট্যাক্স’ বা পাপ কর' আরোপ করার পর দেশটিতে চারজন ধূমপায়ীর মধ্যে মাত্র একজনের অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে।
আমিরাতের সংবাদপত্র ‘দ্য ন্যাশনাল’ তামাক ব্যবহারকারী ৬০০ ব্যক্তির উপরে একটি জরিপ চালায়। তাদের মধ্যে তিন চতুর্থাংশ মানুষ জানান, গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য দ্বিগুন হয়ে গেলেও তারা ধূমপান ছাড়েননি। বরং তারা জানালেন ভিন্ন এক তথ্য। সিগারেটের বাড়তি দামের কারণে সেটি থেকে মুখ ফিরিয়ে অনেকের মাঝে শুরু হয়েছে মেদওয়াক নামের এক তামাক গ্রহনের অভ্যাস। মেদওয়াক হলো এক ধরনের শক্তিশালী পাইপ তামাক। সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধির পরে এই মেদওয়াকের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।
শ্বাসযন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডঃ সাহির সাইনালাব্দীন এর সাথে কথা বলে জানা যায়, তার কাছে আসা চিকিৎসাপ্রার্থীদের মাঝে অধিকাংশ রোগীই পাইপে ভরে তামাক খাওয়ায় অসুস্থ। তিনি জানান, “মেদওয়াকের ধোয়া একবার খাওয়া প্রায় চার থেকে পাঁচটি সিগারেট খাওয়ার মতোই ক্ষতিকর”। তিনি জানান, তার রোগীদের অনেকে দিনে পাঁচ থেক ছয় প্যাকেট সিগারেট খাওয়ার সমান তামাক গ্রহন করে থাকেন।
ব্র্যান্ড পরিবর্তন
দেখা যায়, ধূমপায়ীরা ধূমপান সম্পূর্নভাবে ছেড়ে না দিয়ে বরং সস্তা ব্র্যান্ডগুলোর দিকে ঝুকছেন। জনপ্রিয় ব্রান্ডের এক প্যাকেট সিগারেট কিনতে হলে গড়ে গুনতে হবে ২২ দিরহাম (প্রায় ৫০০ টাকা)। কিন্তু সেদেশে এখনো অনেক ব্র্যান্ড আছে যেগুলোর প্রতি প্যাকেট মানুষ চাইলে ৩ দিরহাম (৮০ টাকা) এর বিনিময়ে কিনতে পারেন।