Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২১ বৃহস্পতিবার, আগষ্ট ২০২৫ | ৫ ভাদ্র ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

সন্ধ্যা নাগাদ ২৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হবে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ মে ২০১৯, ০৩:৫৬ PM
আপডেট: ০৩ মে ২০১৯, ০৩:৫৬ PM

bdmorning Image Preview


আজ সন্ধ্যা নাগাদ ২৫ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হবে এ তথ্য জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল বলেছেন,ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ধেয়ে আসায় উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪ লাখ ৪ হাজার ২৫০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।

শুক্রবার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র সর্বশেষ অবস্থা ও প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, তথ্য সচিব আব্দুল মালেক, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

শাহ কামাল বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নেভি, কোস্টগার্ড, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, স্বেচ্ছাসেবক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা একযোগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। সকাল ১০টা থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৪ হাজার ২৫০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় এক লাখ, সাতক্ষীরায় ১২ হাজার, বাগেরহাটে ৪০ হাজার, পিরোজপুরে ৬ হাজার, বরগুনায় ৮০ হাজার, পটুয়াখালীতে ৩৭ হাজার ৫০০, বরিশালে ৫ হাজার, ভোলায় ৩৫ হাজার, নোয়াখালীতে ১৫ হাজার, লহ্মীপুরে ১২ হাজার, ফেনীতে ৫ হাজার, চট্টগ্রামে ২০ হাজার, কক্সবাজারে এক হাজার, ঝালকাঠিতে ১০ হাজার, চাঁদপুরে ৫ হাজার, শরীয়তপুরে ৮ হাজার, মাদারীপুরে ৪ হাজার লোক রয়েছে। এটা (মানুষ নিয়ে আসা) সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা ঝুঁকিতে আছেন তাদের আনা হচ্ছে। আমাদের অভিজ্ঞতা হলো ফাইন্যালি ২১ থেকে ২৫ লাথ লোককে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৪ হাজার ৭১টি।’

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর, চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার ও কাছাকাছি উপকূলীয় অঞ্চলকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ‘ফণী’র অগ্রভাগ বাংলাদেশে ইতোমধ্যে প্রবেশ করেছে। মূল কেন্দ্রে আসতে কিছুটা দেরি হবে। খুলনা অঞ্চলের আকাশ মেঘলা হওয়া শুরু হয়েছে। এর মেঘ ঢাকা পর্যন্ত এসে গেছে। ঢাকায় ‘ফণী’র প্রভাবেই বৃষ্টি হচ্ছে।

‘আমাদের ধারণা ছিল সন্ধ্যা নাগাদ এটি বাংলাদেশে আসবে। এটি একটি বিশাল বডি। এটি সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারারাত অতিক্রম করতে থাকবে। পুরো ব্যাস বাংলাদেশের সমগ্র আকাশ ছেয়ে ফেলবে মধ্য রাত থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত।’

পরিচালক বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি আজ (শুক্রবার) সকাল ১০টায় ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করে। অতিক্রমের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। এটি এখন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছে। বিপদ সংকেত থাকা উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণকে আমরা অতিদ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করছি। আবহাওয়া অধিদফতর ও সরকারের পক্ষ থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করতে বলা হবে, এর আগে কেউ যেন আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ না করেন।

‘এটি এখনও দুর্বল হয়নি। আমাদের ধারণা ছিল এটি আঘাত করে দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এটি দুর্বল হয়নি’,- বলেন সামছুদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘৭ নম্বর বিপদ সংকেতের জন্য যে বাতাসের গতি ৮০ থেকে প্রায় ১৪০ হয়ে থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অতীতে আমরা সবাইকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করিয়েছি।’

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আজকাল গ্রামাঞ্চলে পোক্ত বাড়িঘর এমনকি বিল্ডিংও হয়েছে। বহু প্রাইমারি স্কুলে দালান উঠে গেছে। সেই কারণে সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না। সবাই যে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসবে তা নয়। সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য হলো আমরা জীবনের কোনো ক্ষতি হতে দেব না। এ জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব মানুষকে সন্ধ্যার মধ্যে নিয়ে আসা হবে। আমরা বলেছি, কোনো মানুষকে যেন রেখে আসা না হয়। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, যতটা সম্ভব গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ প্রাণিদের আশ্রয় দেয়ার জন্য।’

আশ্রয়কেন্দ্রে আনার বিষয়ে প্রতিবন্ধী ও গর্ভবর্তী নারীদেরও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সুপেয় পানির কোনো সমস্যা হবে না। আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

‘এক প্যাকেট শুকনো খাবার একটি পরিবার ৭ দিন খেতে পারবে। সেরকম ৪১ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট আমরা পাঠিয়েছি। ডিসিদের নগদ ১০ লাখ টাকা করে দেয়া আছে। যে কোনো প্রয়োজনে তারা খরচ করতে পারবেন।’

এরামুর রহমান বলেন, ‘স্কুল ও কলেজগুলোকেও আশ্রয়কেন্দ্র করতে বলা হয়েছে। ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। আমরা জেনেছি, মানুষ এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে। তাই আমরা মনে করি, আমরা একটি জীবনও হারাবো না।’

এক প্রশ্নের জবাবে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ভূমিকম্প হওয়ার কোনো আশঙ্কার কথা আমরা শুনিনি। তবে বৃষ্টির কারণে ভূমিধস হতে পারে।’

মুখ্য সচিব বলেন, ‘আমাদের ওপর যে ঝুঁকি সেটাকে খাটো করে দেখা সমীচীন হবে না। উপকূলের লোকজনকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। আমদের সার্বিক প্রস্তুত আছি। স্বাস্থ্য বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগসহ যেসব বিভাগের ওপর ঝুঁকি আসতে পারে তারা সবাই কাজ করছেন। জনগণকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে সাইক্লোনটিকে নিতে হবে এবং নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।’

Bootstrap Image Preview