আজ রাতে ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশে আঘাত হানবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।এদিকে ‘ফণী’ আতঙ্কে রয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গা।
এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই, নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও। ক্যাম্পের নড়বড়ে আশ্রয় ফণীর প্রবল আঘাতে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে। হতে পারে পাহাড়ধস। আর পাহাড়ের পাদদেশেই ঠাঁই তাদের। এসব চিন্তা মাথায় এনেই অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন রোহিঙ্গারা।
এদিকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ঘনীভূত হয়ে ক্রমেই বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের খুলনা ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মুহাম্মদ আলী বলেন, ‘একটু বৃষ্টি আর বাতাস হলে ত্রিপল দিয়ে তৈরি ঝুপড়িঘরগুলো লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সেখানে এত বড় ঘূর্ণিঝড় এসব ঘর কীভাবে মোকাবেলা করবে! একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কেউ জানে না।’
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জানিয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বেশি আতঙ্কের কিছু নেই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেন ক্ষতি না হয়, সে ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পে কর্মরত বেশ কিছু এনজিও সংস্থাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ দুটি আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়া বাকি সব নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য প্রস্তুতি সভা, অ্যাম্বুলেন্স, খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে।
একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেছে জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরীর কাছ থেকে। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
উখিয়ার সিপিপি সেক্রেটারি রফিক উদ্দিন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণীর দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে এরই মধ্যে সিপিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভলান্টিয়াররা সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে সতর্ক করছেন। ঝড়ের অবস্থা বুঝে লোকজনকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আসার নির্দেশনা দেয়া হবে।’
কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, ‘ফণী ইতিমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধেয়ে আসছে। এটি বাংলাদেশে প্রবেশের পর গতি পরিবর্তনও করতে পারে। তাই সবসময় সতর্ক অবস্থানে থাকা জরুরি।’
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের খবর জানিয়েছে, ‘উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের উড়িষ্যা উপকূল (পুরীর নিকট দিয়ে) অতিক্রম শুরু করেছে।’
এটি বর্তমানে উড়িষ্যা উপকূল ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। ঝড়টি শুক্রবার সকাল ৯টায় মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৮০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিমি পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকাল নাগাদ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে এবং পরে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে মধ্যরাত নাগাদ খুলনা ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকায় পৌঁছাতে পারে।