সার, গম, ভুট্টা, সিমেন্ট ও অন্যান্য পণ্য নদীপথে সহজে পরিবহনের জন্য পানগাঁও এবং আশুগঞ্জে দু’টি কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কার্গো টার্মিনাল দু’টির মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে।
প্ল্যান অনুযায়ি টার্মিনাল দু’টিতে আরসিসি জেটি (প্রতিটিতে চারটি করে); টার্মিনাল ইয়ার্ড; টার্মিনাল ভবন; গোডাউন; ট্রাক পার্কিং ইয়ার্ড; এ্যাপ্রোচ রোড; নিরাপত্তা দেয়াল; গেইট হাউজ; বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, পাম্প স্টেশন নির্মিত হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন প্রকল্প-১ এর আওতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উক্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করবে।
আজ রাজধানীর মহাখালীস্থ ব্র্যাক সেন্টারে পানগাঁও এবং আশুগঞ্জে দু’টি কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ সংক্রান্ত সমীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ভোলা নাথ দে কর্মশালার উদ্বোধন করেন।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিডিসি’র দলনেতা সুভাশীষ সেন, বিশ্বব্যাংকের টাস্ক টীম লীডার রাজেশ রোহতগি(জধলবংয জড়যধঃমর) এবং প্রকল্প পরিচালক মাহমুদ হাসান সেলিম।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টেকহোল্ডারগণ কর্মশালায় অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন প্রকল্প-১ এর আওতায় চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌ-পথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদ ০১ জুলাই ২০১৬- ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত। প্রকল্পের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাবনা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩,২০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ২,৮৮০ কোটি এবং বাংলাদেশের ৩২০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ অঞ্চলের নৌ-করিডোরের সক্ষমতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন এবং একে টেকসই খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম করিডোরের আশুগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালে মূল নদী ও শাখাসমূহ ড্রেজিং এর মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ এবং নাব্যতা সংরক্ষণ (প্রায় ৯০০ কিলোমিটার নৌপথ); ছয়টি স্থানে যথা-ষাটনল, চাঁদপুর, চরভৈরবী, মেহেন্দীগঞ্জ, সন্দ্বীপ এবং নলচিরায় নৌ-যানসমূহের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ; তিনটি ফেরী পারপার এলাকা যথা: চাঁদপুর-শরিয়তপুর, লক্ষীপুর-ভোলা এবং ভেদুরিয়া-লাহারহাটে সংরক্ষণ ড্রেজিং; শ্মশানঘাট, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর এবং বরিশালে চারটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ ও উন্নয়ন; পানগাঁও ও আশুগঞ্জে ২টি কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ ও উন্নয়ন; বিভিন্ন স্থানে যেমন-ভৈরব বাজার, আলু বাজার, হরিণা, হিজলা, মজু চৌধুরী, ইলিশাঘাট (ভোলা), ভেদুরিয়া, লাহারহাট, বদ্দারহাট, দৌলতখাঁ, চেয়ারম্যানঘাট (চর বাটা), সন্দ্বীপ, তজুমদ্দিন, মনপুরা এবং তমুরুদ্দিনে ১৫টি লঞ্চ ল্যান্ডিং ষ্টেশন নির্মাণ এবং ২টি মাল্টি পারপাস ভেসেল সংগ্রহ করা হবে।
পানগাঁও ও আশুগঞ্জে ২ টি কার্গো টার্মিনাল নির্মাণঃ চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌ-করিডোর এবং নারায়ণগঞ্জ ও বরিশাল এর বর্ধিতাংশ অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার রুট বা জলপথ হিসেবে সনাক্ত ও চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশের প্রায় ৮০ ভাগ অভ্যন্তরীণ নৌ-যান এ করিডোরের মধ্য দিয়ে চলাচল করে এবং দৈনিক প্রায় দু’ লাখ যাত্রী এসব জলপথ ব্যবহার করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক পথের ওপর পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমানোর উদ্দেশে অভ্যন্তরীণ নৌ-পথসমূহ উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সাথে দীর্ঘদিনের আলোচনা শেষে প্রাথমিকভাবে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ফান্ডের সহায়তায় প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।