Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১২ মঙ্গলবার, আগষ্ট ২০২৫ | ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘আমার মৃত্যুর সময় সকাল ১০.৪৫’ চিরকুট লিখে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:০৬ PM
আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:০৬ PM

bdmorning Image Preview


সুইসাইড নোট লিখে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে জান্নাতুল মাওয়া মুক্তি (১৬) নামের দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে একটি চিঠি লিখে রেখে ঘরের আড়ার সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে স্কুলছাত্রী মুক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে দেবহাটা থানা পুলিশ।

জান্নাতুল মাওয়া মুক্তি উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের খাঁসপাড়া এলাকার মুনসুর আলী সরদারের মেয়ে এবং পারুলিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

আত্মহত্যার আগে মুক্তির লেখা চিঠি পড়ে অনেকেই ধারনা করছেন যে, বাবা-মায়ের ওপর অভিমান করেই আত্মহত্যা করেছে সে।

তার লেখা আড়াই পৃষ্ঠার চিঠিটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

'আমার মৃত্যুর জন্য কেহ দায়ী নহে। সবাই আমাকে ক্ষমা করিয়া দিবেন। প্রত্যেকে নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার কাছে যা কিছু টাকা-পয়সা ছিল তা আমার টেবিলের ওপর রেখে গেলাম। আমার সব কিছু দিপ্তির (ছোট বোন) জন্য রেখে গেলাম। সব কিছু থাকলেও শুধু আমিই পৃথিবীতে থাকলাম না। মা-বাবা তোমাদের কাছে একটা জিনিস দাবি করলাম, সেটা হলো ক্ষমা। তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। নামাজ পড়ে আমার জন্য দোয়া করো। আর দিপ্তিকে আদর, মায়া-মমতা, নয়নের মনি এবং অল্প শাসনের মাধ্যমে ওকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবা। আমি আসলে খারাপ। দিপ্তি অনেক ভালো মেয়ে। আমার অনুপস্থিতিতে ওর যেন কোন কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রেখো। কষ্ট কি জিনিস এটা যেন আমার ছোট বোন বুঝতে না পারে। দিপ্তি বড় হয়ে উচ্চ পদের চাকরি করে। তোমরা ওকে সাহায্য করো। আমার জন্য পৃথিবীটা অনেক কঠিন। বেচে থাকার কোন দরকার ছোটবেলা থেকেই আমার ছিলো না। কখনো ভালো মেয়ে হয়ে বাঁচতে পারতাম না। তাইতো চলে গেলাম ঐ পাড়ে। তোমাদের ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। তবুও পারলাম না নিজেকে আটকাতে ঐ মৃত্যুর হাত থেকে। আজ হোক বা কাল চলে তো আমাকে যেতেই হতো। তাই না হয় আজই চলে গেলাম। বাবা-মা তোমাদের আর কষ্ট করে আমাকে দেখতে হবে না। সবাই ভালো থেকো তোমরা। আমার পাড়া-প্রতিবেশী, স্কুলের শিক্ষক, আমার বান্ধবী আর সকল মানুষকে খুব মিস করছি। তাদের সবার জন্যও কষ্ট হচ্ছে আমার। ঠিকই নিজের ভুল বুঝতে পারলাম, কিন্তু আমার অনেক দেড়ি হয়ে গেলো। আর বেশী কিছু লিখলাম না। কারণ প্রত্যেকটি কথা লিখতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। শেষবার একটা কথা বলবো যে, মা-বাবা ও বোন তোমরা আমাকে ক্ষমা করো। আর দিপ্তিকে বলো লক্ষীসোনার মতো পড়াশুনা করতে। আমার আয়ু এই পর্যন্তই ছিলো। আমার মৃত্যুর সময়- সকাল ১০.৪৫। জান্নাতুল মাওয়া মুক্তি।'

এ ব্যাপারে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, আত্মহত্যার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্কুলছাত্রী মুক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান ওসি।

Bootstrap Image Preview