নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শুটকী মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণে ৮৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকাল। বিসিএসআইআর ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শুটকী মাছ প্রক্রিয়াকরণ এবং ইনডোর ফার্মিং গবেষণা নামে প্রকল্পটি নামকরণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের পুরো অর্থই জিওবি (বৈদেশিক মুদ্রা) ৮৯ (১.৩০) থেকে আসবে। জুলাই ২০১৮ সালের আরম্ভ হওয়া প্রকল্পটি কাজ শেষ হবে ২০২১ সালের জুনে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য: ১. কীটনাশকমুক্ত মাছ, সামুদ্রিক আগাছা ইত্যাদি শুকানো ও সংরক্ষণ প্রযুক্তির উপর গবেষণা করা;
২. বিসিএসআইআর এর চট্টগ্রাম গবেষণাগারে নিয়ন্ত্রিত মৎস্য চাষ প্রযুক্তি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা;
৩. ক্লোজড কনটেইনমেন্ট একুয়াকালচার পদ্ধতিতে স্বল্প জায়গায় রপ্তানিমুখী চিংড়ি, কোরাল মাছ ও কাঁকড়া ইত্যাদি উৎপাদনের কলাকৌশলের উপর গবেষণা করা এবং এ শিল্প প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তাদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান।
৪. পানির পুনঃব্যবহার করে (re-circulated aquaculture system) দেশীয় মাছ ও পোনা তৈরির কলাকৌশলের উপর গবেষণা করা;
৫. অনু-শৈবাল, কপিপড (copepod), সামুদ্রিক আগাছা, সী-ভেজিটেবল ইত্যাদির উৎপাদন ও পরিশোধন ব্যবস্থার উপর গবেষণা করা।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত পটভূমি ও গ্রহণের যৌক্তিকতায় বলেন, বাংলাদেশে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচলিত পদ্ধতিতে বছরে তিন থেকে চার মাস শুঁটকি মাছ তৈরি হয়ে থাকে। মাছ শুকাতে চার থেকে সাত দিন সময় লাগে এবং এতে ব্যবহার করা লবণ, ডিডিটিসহ কীটনাশক জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। স্বল্প বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ড্রায়ার ব্যবহার করে মাত্র একদিনে মাছ শুকানো যায় এবং এতে মাছের আমিষ মান এবং ওমেগা ফ্যাটি এসিড অক্ষুন্ন থাকে। ভ্যাকুয়াম প্যাকেজিং করা হলে শুটকী মাছ ১২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব যথা তাপমাত্রার বৃদ্ধি, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, পানি অক্সিজেন শূন্য হয়ে পড়া, দ্রবীভূত এমোনিয়ার পরিমান বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে মাছের আবাস তথা প্রজনন স্থল কমে যাচ্ছে। তাই রেনু পোনার তৈরির প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অকাল বন্যা, মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধি, সারা বছর উন্নত জাতের পোনার অপ্রাপ্তিতাসহ বিভিন্ন কারণে পুকুর খাল বিলে মাছ চাষ প্রতি বছর কমে যাচ্ছে। এ সকল সমস্যা পরীক্ষিত সমাধান ক্লোজড কনটেইনমেন্ট একুয়াকালচার যা পরিবেশ বান্ধব, সারা বছর ৯৫% পানির পুনঃব্যবহার করে পুকুরের দশভাগ কম জায়গায় দশগুণ বেশী মাছ উৎপাদন করা যায়।
বাংলাদেশে মানসম্মত ও কেমিক্যাল মুক্ত মাছ তৈরির অত্যতম বাধা প্রোটিন সমৃদ্ধ ও ভাসমান খাবারের অভাব। মাছের খাবার তৈরিতে প্রয়োজন হয় ৬২% আমিষ। কিন্তু, বাংলাদেশে যেসব উৎস হতে মাছের খাবার তৈরি হয় তাতে আমিষের পরিমাণ চার ভাগের এক ভাগ। ফার্মেন্টশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলু, কসাগ ও ভুট্টা থেকে তৈরি করা যায় আমিষ সমৃদ্ধ অর্গানিক মাছের খাবার।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি খাদ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যাপক পার্থক্য, অতিবৃষ্টি, ফসলহানিকর পোকামাকড় ও অণুজীবের আক্রমন বৃদ্ধির কারনে কাঙ্খিত উৎপাদনের জন্য কৃষি ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে। তাই দরকার ইনডোর একুয়াপোনিক সবজী চাষ ও আমদানি নির্ভর নিউট্রিয়েন্ট দেশিভাবে উৎপাদন গবেষণা।
বিসিএসআইআর চট্টগ্রাম কেন্দ্রে গবেষণার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মাছ শুকানো প্রযুক্তির উন্নয়ন ও এডাপসন, ভাইরাসমুক্ত পোনা তৈরি, কেমিক্যালমুক্ত ও প্রোটিনসমৃদ্ধ মাছ উৎপাদনে আরএএস (Re-Circulated Aquaculture System) প্রযুক্তির উপর গবেষণা, একুয়াপোনিক সবজি চাষ গবেষণা, ইনডোর বৈদেশিক প্রযুক্তি সুবিধাদি এ দেশের আবহাওয়া উপযোগী ও ব্যয় সাশ্রয়ী করার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।