সদরঘাটে সুরভী-৭ লঞ্চের ধাক্কায় ডিঙ্গি নৌকা ডুবে গত ৭ মার্চ রাতে ৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত কমিটি ১৭ দিনেও তদন্ত শেষ করতে পারেনি। অথচ কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই দুর্ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানতে গত ৮ মার্চ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দাখিলে ৩ দিনের সময় দেয়। তবে কমিটির ৩ সদস্যের ২ জন ব্যস্ত থাকায় দুই দফায় সময় নিয়েও শেষ হয়নি তদন্ত কার্যক্রম।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, সরদঘাটে লঞ্চ সুরভী-৭ এর ধাক্কায় ডিঙ্গি নৌকা ডুবিতে ৬ জন নিখোঁজ হবার ঘটনায় নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মো. শাহজাহানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন- বন্দর ও পরিবহন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদিন এবং নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
গত ১৮ মার্চ বিআইডব্লিউটিএ সদর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে কমিটির প্রধান মো. শাহজাহান বলেন, তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে সুরভী-৭ লঞ্চের ত্রুটি পাওয়া যায়নি। ঘটনার সময় নৌকার যাত্রী দেলওয়ারের চাপাচাপিতে ডিঙ্গি নৌকাটি লঞ্চের পাশ ঘেঁষে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনাটি ঘটে বলে জানতে পেরেছি। তবে তদন্ত শেষ হলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, তদন্ত কাজ এখনও শেষ হয়নি। কমিটি গঠনের সময় আমি দেশে ছিলাম না। দেশে ফেরার পর কমিটির অপর সদস্য সাইফুল ইসলাম অফিসিয়াল কাজে বিদেশে যান। যে কারণে তদন্ত শেষ করা সম্ভব হয়নি।
গত শুক্রবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় ফের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা সময় চেয়েছি। তদন্ত শেষ করতে সময় লাগবে। কতদিন সময় চাওয়া হয়েছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
সোমবার (২৫ মার্চ) তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এখনও শেষ হয়নি। শেষ হলে জানতে পারবেন।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র জনসংযোগ শাখার পরিচালক মোবারক হোসেন মজুমদার বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় দোষীদের শনাক্ত করে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। তবে কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে পারেনি। তারা সময় চেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ রাত ১০টার দিকে বরিশাল লঞ্চঘাটে সুরভী-৭ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় একটি ডিঙ্গি নৌকা। শরীয়তপুরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শাহজালাল নামে এক গার্মেন্টস কর্মী কামরাঙ্গীরচরের মিয়ারচর থেকে ডিঙ্গি নৌকা করে পরিবারসহ সদরঘাটে আসছিলেন। বরিশাল ঘাটে আসার আগে সুরভী-৭ পজিশন নিতে ঘুরছিল। পেছন থেকে লঞ্চটির ধাক্কায় ডুবে যায় ডিঙ্গি নৌকাটি।
ওই দুর্ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় শাহজালালকে উদ্ধার করে প্রথমে মিটফোর্ড এবং পরে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিখোঁজ হন পরিবারের ৬ সদস্য।
পরে একে একে শাহজালালের স্ত্রী শাহিদা, তাদের মেয়ে মিম (৮) ও মাহি (৬), জামসিদা (২২), জামসিদার স্বামী দেলওয়ার (২৭) এবং তাদের তিন মাসের শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। গত ১১ মার্চ শাহজালালও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।