Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ মঙ্গলবার, জুলাই ২০২৫ | ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

বন্ধের নির্দেশের পরও রাজপথে চলেছে সুপ্রভাত বাস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০১৯, ০৩:১৮ PM
আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯, ০৩:১৯ PM

bdmorning Image Preview


যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে মঙ্গলবার সকালে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে ওই পরিবহনের সব বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে ওই নির্দেশেরও পর চলছে সুপ্রভাত পরিবহনের বাস।

সুপ্রভাত বাস বন্ধের বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও জানানো হয়, বাসটিকে বন্ধ করে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে আতে তারা একমত।

মঙ্গলবার সকালে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী।

এরপর দুপুরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘সুপ্রভাত পরিবহনের কোনো বাস ওই রুটে চলতে দেওয়া হবে না। এই বাসের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। আর দেশের প্রচলিত আইনে বাসচালকের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা হবে।’

গাজীপুর থেকে সদরঘাট পর্যন্ত চলাচল করে এই পরিবহনের বাস। প্রগতি সরণির কয়েক দোকানি বলেন, সকালে দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হলে কিছু সময় ধরে ওই সড়কে চলেনি সুপ্রভাত পরিহনের বাস। তবে দুপুর পর থেকে চলতে শুরু করে এই পরিবহনের বাস।

সুপ্রভাত সার্ভিসটি আগে পরিচালনা করতেন মোটর পার্টস ব্যবসায়ী মো. আশরাফ উদ্দিন। এক বছর ধরে এ সার্ভিস চলছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর নিয়ন্ত্রণে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রভাতের একজন বাসচালক  বলেন, ‘আশরাফ উদ্দিন দায়িত্বে থাকার সময় যাত্রীরা টিকিট কেটে বাস উঠত। সব আয় একসঙ্গে জমা হতো। চাঁদাসহ সড়কের সব খরচ মালিক দিতেন। চালক, হেলপার ও সুপারভাইজরদের দেওয়া হতো নির্দিষ্ট বেতন। তাই চালকদের যাত্রী ধরার তাড়া ছিল না। কিন্তু খন্দকার এনায়েত উল্লাহ দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই প্রথা বাতিল করেন। এখন চুক্তির ভিত্তিতে বাস চালাতে হয় চালকদের।

তিনি জানান, দিনে দুই ট্রিপ দিলে ওই সব খরচের পর আর কিছু থাকে না। আবার পুলিশ প্রায়ই মামলা দেয়। তাই তিন ট্রিপ ধরার জন্য দ্রুতগতিতে চলতে বাধ্য হয় চালকরা। আবার মামলা দিলে জরিমানার টাকার অর্ধেক মালিক, অর্ধেক চালককে দিতে হয়। নানা হয়রানি করে। তাই ট্রাফিকের হয়রানি থেকে বাঁচতেও অনেক সময় চালকরা বেপরোয়া চলে।

রাজধানীর প্রগতি সরণি-কুড়িল সড়কে গতকাল সাতসকালে শিক্ষার্থী আবরারকে পিষে ফেলা বাসটির নিবন্ধন নম্বর ঢাকা মেট্রো ব-১১-৪১৩৫। দুর্ঘটনার পরপরই পুলিশ ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বাসটির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। কার্যালয়ে সারা দিন খোঁজার পর অবশেষে পাওয়া তথ্য অনুসারে জানা যায়, বাসটির রুট পারমিট নেওয়া হয়েছিল বিআরটিএর এলেনবাড়ীর সদর কার্যালয় থেকে। চলাচলের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত। এর মালিকানায় রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের নাম। ব্যাংক ঋণে বাসটি কেনা হয়েছিল ২০০৮ সালে।

প্রায় ১০ বছরের পুরনো বাসটির মডেল ছিল ২০০৭ সালের। নিবন্ধন করা হয়েছিল ২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট। রুট পারমিট হালনাগাদ করা ছিল না। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২ মে পর্যন্ত রুট পারমিটের অনুমোদন ছিল। তবে রুট পারমিটের মেয়াদ হালনাগাদ করার জন্য বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে বাসটির পরিচালনা কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছিল। বাসের ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদও ছিল না। এই মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ আগস্ট।

এই অবস্থায় গতকাল বিকেলে বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয় থেকে পরিচালক (প্রকৌশল) মো. রফিকুল ইসলাম বাসটির মালিকের কাছে নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে বলে চিঠি পাঠিয়েছেন। রুট পারমিটও বাতিল করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, গতকাল দুর্ঘটনায় জড়িত বাসটি বেপরোয়াভাবে চালচ্ছিলেন চালক সিরাজুল ইসলাম। পুলিশ তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।

ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আবদুল আলীম বলেন, সুপ্রভাত পরিবহনের বাসে দাঁড় করিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হয়। চালকরাও বেপরোয়া। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে কদমতলী রুটে আকাশ সুপ্রভাত চলাচল করে ২৩টি। এই বাসে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ৫৫ টাকা। কিন্তু বাসে উঠলেই যাত্রীদের দিতে হয় কমপক্ষে ১৫ টাকা।

একাধিক শ্রমিক, বাসচালক ও সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুপ্রভাত স্পেশাল বাস সার্ভিসটির রুট পারমিট রাজধানীর সদরঘাট থেকে রামপুরা হয়ে উত্তরা পর্যন্ত। পরিবহন নেতার প্রভাবের কারণে চলছে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর গাজীপুরা পর্যন্ত। ৭০টি বাস চলার অনুমোদন থাকলে চলছে প্রায় ৪০০।

গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক প্রকৌশলী আশরাফ সিদ্দিকী সুপ্রভাত স্পেশাল সার্ভিসের রুট পারমিট ও অনুমোদিত বাসের সংখ্যা প্রসঙ্গে জানান, এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) কমিশনার মো. নজরুল ইসলাম জানান, তিনি সাময়িক দায়িত্বে রয়েছেন। তাই সুপ্রভাতের রুট পারমিট, বাসের সিলিং ও ভাড়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাবেন।

Bootstrap Image Preview