Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ রবিবার, আগষ্ট ২০২৫ | ২ ভাদ্র ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মচারী আবজালের ৫ বাড়ি ক্রোক আজ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০১৯, ১২:৩১ PM
আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯, ১২:৩১ PM

bdmorning Image Preview


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানমের সম্পদ ক্রোক ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করছে দুদক।

আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের আলোচিত কর্মচারী আবজালের ৫টি বাড়িতে ক্রোকের নোটিশ জারির মাধ্যমেই এর সূচনা হবে। অনুসন্ধান পর্যায়ে কোনো ব্যক্তির সম্পদ ক্রোকের ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে মামলার পর তদন্তের সময় কয়েকটি ক্রোকের ঘটনা ঘটেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

এ প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আবজালের উত্তরার ৫টি বাড়ি ও বাড্ডায় একটি ফ্ল্যাট ক্রোক করা হবে। আজ সকাল ১০টায় দুদকের ‘অপরাধলব্ধ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ইউনিট’র পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম উত্তরার ১৩নং সেক্টরে ১১ নম্বর রোডের ৪৭ নম্বরের তামান্না ভিলাসহ মোট ৫ বাড়িতে আদালতের ক্রোকের নোটিশ টানাবে। এছাড়া একইদিন খুলনা, ফরিদপুর ও রাজবাড়িতে দুদকের স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আবজালের স্থাবর সব সম্পদের ওপর ক্রোকাদেশ জারি করা হবে।

দুদকের অপরাধলব্ধ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির বলেন, দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. সামসুল আলমসহ একটি শক্তিশালী টিম সরেজমিন আবজালের বাড়িতে নোটিশ টানাবে। এরই মধ্যে নোটিশগুলো বোর্ডে লেখার কাজ হয়েছে।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান তথ্যে দেখা গেছে, আবজাল দম্পতির নামে-বেনামে অন্তত শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। অনুসন্ধান শুরুর পর তাদের বক্তব্যও নেয়া হয়েছে। তবে দুদকে একবার হাজির হওয়ার পর তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাদের বিদেশ গমনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

দুদকের মহাপরিচালক (আইন) মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশে আবজালের মতো আর যাদের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হবে জেলা রেজিস্ট্রারকে দুদক তা জানিয়ে রাখবে। কেউ যেন ওই সম্পদের দলিল তৈরি বা হস্তান্তর করতে না পারে। এছাড়া যে সম্পত্তি ক্রোক করা হবে সেখানে নোটিশ টানিয়ে দেয়া হবে। এতে বলা থাকবে, তফসিলভুক্ত এ সম্পত্তি বিক্রি বা স্থানান্তর করা যাবে না। এ বিষয়টি পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জনসাধারণকে জানিয়ে দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, আবজাল ও তার স্ত্রী রুবিনা স্বাস্থ্য অধিদফতরের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। আবজাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাব রক্ষণ বিভাগের কর্মচারী। অন্যদিকে তার স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৫টি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার পদে ১৯৯৮ সালে যোগদান করেন। পরে তিনি ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। তিনি ২০০৫ সালে আগস্টে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে ১৫/১ আলব্দীর টেক, কালীবাড়ী, বালুঘাট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ঠিকানায় ট্রেড লাইসেন্স করেন। তারপর স্বামী আবজালের প্রত্যক্ষ মদদে চালিয়ে যান ব্যবসা। দু’জনে মিলে তৈরি করেন একটি সিন্ডিকেট। তাদের সঙ্গে আবজালের দুই ভাই ও রুবিনার দুই ভাইও আছেন। তাদেরও চাকরি হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরে। সবই করে দিয়েছেন আবজাল।

আবজাল সিন্ডকেট করে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদফতরে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করে বিভিন্ন দেশে (মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অর্থ পাচার করেছেন বলে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তথ্য মিলেছে। তারা ঢাকা শহরসহ দেশে-বিদেশে অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলেন। আবজাল হোসেনের নামে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ৭ পন্টার স্ট্রেট মিন্টু সিডনিতে ১টি বাড়ি আছে। ওই বাড়িটি তিনি বনানীর লোকমান নামে একজনের মাধ্যমে দুই লাখ ডলার দিয়ে কেনেন। পুরো টাকা তিনি হুন্ডির মাধ্যমে পাঠান।

দুদক সূত্রে জানা যায়, আবজাল ও রুবিনার নামে উত্তরায় ৫টি বাড়ি, বাড্ডায় একটি ফ্ল্যাট, মিরপুরে একটি টিনশেড বিল্ডিং এবং ২.৫ কাটা জমি, সাভারে ১৫ শতাংশ জমি, ফরিদপুরে দোতলা বাড়ি এবং ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন মৌজায় প্রায় সাড়ে বাইশ শতাংশ জমি, ঢাকার কেরানীগঞ্জে দোকান, বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে ৬ কাঠা জমি আছে। এছাড়া আবজালের হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের একটি গাড়ির সন্ধান পেয়েছে দুদক। ১০ জানুয়ারি বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ বিভাগের কর্মচারী মো. আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক টিম। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিপুল অংকের অবৈধ অর্থের তথ্য দেন। দুদকের অনুসন্ধান শুরু হলে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে আবজাল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বর্তমানে আবজাল দম্পতি আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা করছে দুদক।

Bootstrap Image Preview