দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ১৫ কেজি ওজনের একটি কাতলা মা মাছ ও ৪ কেজি ওজনের একটি আইড় মাছ মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। কাতলা মাছটি হালদা নদীর অংকুরিঘোনা এলাকায় মৃত অবস্থায় ভেসে ওঠে। এদিকে অপর আইড় মাছটি হালদা নদীর উত্তর মার্দাশা আমতুয়া এলাকা থেকে পাওয়া যায়।
গতকাল সোমবার বিকালে মৃত কাতলা মাছটি স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী উদয়ন বড়ুয়া দেখতে পেয়ে নদী থেকে তুলে হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে নিয়ে আসেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজাহারুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে মাছটি দেখে মনে হচ্ছে বালু তোলার ড্রেজার মেশিনের আঘাতে এই মা মাছটি মারা গেছে। এ কারণে মাছটির শরীরের কয়েক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাছটি পরীক্ষা করে দেখার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা ল্যাবে নিয়ে যান আইডিএফের কর্মকর্তা সাদ্দাম হাসেন।
তিনি আরও বলেন, মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত হালদা নদীতে সব প্রকার যান্ত্রিক যান চলাচল বন্ধে গত ৮ জানুয়ারি পত্র দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও তীর সংরক্ষণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়। তবে তা মানা হচ্ছে না।
এ ছাড়া নদী পাড়ের লোকজনের অভিযোগ, মা-মাছের ডিম ছাড়ার আগাম সময়ে নদীতে হঠাৎ করে যান্ত্রিক যান বেড়েছে। এসব যান্ত্রিক যান দিয়ে রাতের অন্ধকারে নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি দিন-রাত বালু পরিবহন করে বিক্রি করা হচ্ছে।
ফলে এসব ডুবন্ত ঘূর্ণয়মান পাখার আঘাতে নদীর মা-মাছসহ জলজ প্রাণী প্রতিনিয়ত মারা পড়ছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া মোবাইলে জানান, সোমবার হালদা নদী থেকে মৃত দুটি মাছ উদ্ধার করেছেন স্থানীয়রা।
এর মধ্যে কার্পজাতীয় (কাতলা) মা-মাছটির ওজন হবে ১৫ কেজি। মাছটির মাথায় ও লেজে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাছটি প্রায় ৩ ফুট লম্বা।
এ ছাড়া উদ্ধারকৃত অন্য আইড় মাছটির ওজন হবে ৩-৪ কেজি। ওই মাছটিরও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দৃশ্যমান।
ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি হালদার ভাঙন রোধে তীর সংরক্ষণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত যান্ত্রিক যানের ডুবন্ত ঘূর্ণয়মান পাখার আঘাতে এ মাছটি মারা গেছে। তবে ময়নাতদন্ত শেষে এসব মাছের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করা যাবে।