Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ মঙ্গলবার, জুন ২০২৫ | ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কে এই দেবী শেঠী?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ মার্চ ২০১৯, ০২:৪৬ PM
আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯, ০২:৪৬ PM

bdmorning Image Preview


উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠী। প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ইতিমধ্যে ওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় বাংলাদেশে এসেছেন।

সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন তিনি।সেখান থেকে সড়কপথে সরাসরি যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ওবায়দুল কাদেরের শয্যাপাশে।

ওবায়দুল কাদের যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, তখন কেন এই দেবী শেঠীকে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। তার সম্পর্কে জানতে চান অনেকেই।

কে এই দেবী শেঠী?

তার নাম ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি। তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা হৃদরোগ চিকিৎসাকেন্দ্র ব্যাঙ্গালুরুর নারায়না ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেসের প্রতিষ্ঠাতা। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডা. শুভ দত্তের পশ্চিমবঙ্গের সিকে বিরলা হাসপাতালের ক্যাথল্যাবপ্রধান।

আজকের দিনে দেবী শেঠীর নাম জানে না এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে, যিনি হৃদয় কাটা ছেঁড়া করেও লাখ লাখ হৃদয় জয় করেছেন। দেবী শেঠী ভারতের কর্নাটক রাজ্যের দক্ষিণ কনাডা জেলার কিন্নিগলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

৯ ভাইবোনের মধ্যে অষ্টম দেবী মেডিকেলে পঞ্চম গ্রেডে পড়ার সময় তত্‍কালীন দক্ষিণ আফ্রিকার জনৈক সার্জন কর্তৃক বিশ্বের প্রথম হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের কথা শুনে কার্ডিয়াক সার্জন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

দক্ষিণ ভারতে জন্ম নেয়া দেবী শেঠী ১৯৮২ সালে কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি বিদ্যায় গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে সার্জারি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। ১৯৮৯ সালে লন্ডনের উচ্চাভিলাষী চাকরির লোভ ত্যাগ করে ভারতে ফিরে আসেন। এবং ডা. রায়ের সঙ্গে তিনি কলকাতায় গড়ে তোলেন ভারতের প্রথম হৃদরোগ চিকিৎসা হাসপাতাল বিএম বিরলা হার্ট রিসার্চ সেন্টার।

কিন্তু ভারতীয়দের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ইউরোপিয়ানদের তুলনায় তিনগুণ বেশি হওয়ায় এই একটি হাসপাতাল যথেষ্ট ছিল না। এ জন্য ডা. দেবী শেঠী ও ডা. রায় মিলে আরও তিনটি হৃদরোগ চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলেন। বিএম বিরলা হার্ট সেন্টার যাত্রা শুরুর অল্প দিনের মধ্যে ভারতের শ্রেষ্ঠ হার্ট হাসপাতালের একটিতে পরিণত হয়।

১৯৯১ সালে ৯ দিন বয়সী শিশু রনির হৃৎপিণ্ড অপারেশন করেন, যা ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম সফল শিশু হৃৎপিণ্ড অস্ত্রোপচার। তিনি কলকাতায় মাদার তেরেসার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এর কিছুকাল পর তিনি ব্যাঙ্গালুরুতে চলে যান এবং মণিপাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৫ হাজারের বেশি কার্ডিয়াক সার্জারি করেছেন।

ডা. দেবী প্রসাদ শেঠী পৃথিবীর ১০ জনের একজন, ভারতীয় হিসাবে তিনি ১ নম্বর।

ডা. দেবী শেঠী নামক এই গুণী ব্যক্তিটি ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত চার হাজার শিশুর সফল হার্ট সার্জারি সম্পন্ন করেছেন। লন্ডনের গাইস হাসপাতলে হার্ট সার্জন হিসেবে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়া ডা. দেবী শেঠীকে অনেকেই বলেন 'অপারেটিং মেশিন'।

ডা. দেবী শেঠী একদিন একটি শিশুর জটিল ওপেন হার্ট সার্জারি করছেন এমন সময় তার বিশেষ সহকারী অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে বলেন- 'স্যার প্রধানমন্ত্রী ফোন করে লাইনে আছেন এবং আপনার সঙ্গে জরুরি একটা আলাপ আছে বলেছেন'।

ডা. শেঠী দেখলেন এই শিশুটির অস্ত্রোপচারে দেরি হলে ক্ষতির সম্ভাবনা, তাই তিনি নিজের সহকারীকে বললেন- 'পিএম-কে বলো আমি ওটিতে আছি, এক ঘণ্টা পর ফোন করার জন্য'। অবশ্যই এক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রী ফের ফোন করেন।

যেসব শিশুর হার্ট সার্জারি সম্পন্ন করেন তাদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবার থেকে আসা এবং এদের সবাইকেই তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা করেছেন। এখনও ডা. দেবী শেঠি এবং তার নারায়ণা হৃদয়ালয় একদিকে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে ওপেন হার্ট সার্জারির মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা দেয়। অন্যদিকে এই হাসপাতালে এসে যে কোনো বয়সের হৃদরোগী যেন অর্থাভাবে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়।

Bootstrap Image Preview