একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাত আসনে জয় পায় ঐক্যফ্রন্ট । দুই আসনে জয় পায় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরীক গণফোরাম। এর মধ্যে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সুলতান মনসুর এবং গণফোরাম নিজস্ব প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে মোকাব্বির খান নির্বাচিত হন। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ পাঁচজন নির্বাচিত হন।
এদিকে নির্বাচিত হলেও শপথ নেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। তারা ভোট কারচুরি ও অনিয়মের প্রতিবাদস্বরূপ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে সরকারের বৈধতা দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে এবার ভিন্ন কথা বললেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
শনিবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে গণফোরামের বর্ধিত সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের বিজয়ী দু’জন প্রার্থী শপথ গ্রহণ করবেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, 'এটা তাদের দুইজনের অর্জন। আমরা সংসদে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করবো।'
আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। কিন্তু আমাদের প্রার্থীরা তো বিরোধী দল থেকে বিজয়ী হয়েছেন। আমরা বলেছি, এটা তাদের অর্জন। তারা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের নির্বাচিত হওয়ার জন্য আমরা তাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছি। অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের টিকে থাকবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হবে বলে আমি মনে করি। কারণ ঐক্যফ্রন্টের জন্য কাজ করে আসছি এবং করছি। নীতিগতভাবে আমি মনে করি, ঐক্যকে রাখার জন্য আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবো। এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যদি কার্যকরভাবে কাজ করে তাহলে সরকারের ওপরে চাপ থাকবে আইন মেনে দায়িত্ব পালন করার। আর সরকারের ওপরে চাপ তৈরির করার ক্ষেত্রে আমাদের এই ঐক্যের চাপ কাজে লেগেছে। আরো লাগবে বলে আশা করি।
তিনি বলেন, দুঃখ লাগে, বছরে শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন খেয়াল- খুশির ব্যাপার নয়। সংবিধানের তো একটা কর্তব্য রয়েছে। আমরা চেয়েছি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যেখানে জনগণের মালিকা থাকবে। তারা মালিক হিসেবে তাদের প্রতিনিধিত্ব করবে।
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, ঐক্যফ্রন্ট নেতা সুলতান মনসুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী, ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিতরা শপথ না নিলে ৯০ দিনের মধ্যে তাদের আসন শূন্য হবে। ওই আসনে ফের উপনির্বাচন হবে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। এর পর ৩০ দিনের মধ্যে নতুন সংসদের অধিবেশন বসবে। তারা ৯০ দিনের মধ্যে যদি কেউ শপথ না নেন বা কোনো প্রকার সাড়া না দেন, তখন সংসদ সচিবালয় থেকেই এ পদটি শূন্য ঘোষণা করা হবে।
সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথগ্রহণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর পর ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হবে। একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে অবহিত না করলে বা শপথ না নিলে সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮ আসনে জয়লাভ করে। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭টি আসনে জয়ী হয়। মঙ্গলবার ২৯৮ সংসদ সদস্যের নামে গেজেট জারি করা হয়। বাকি দুটির মধ্যে গাইবান্ধা-৩ আসনে একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে নির্বাচন হয়নি। এ ছাড়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ আসনের তিনটি কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচন করতে হবে বলে সেখানে ফল স্থগিত রয়েছে।