Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

এবারের মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন শিক্ষক নেতারা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ জানুয়ারী ২০১৯, ০৪:৩৯ PM
আপডেট: ০৪ জানুয়ারী ২০১৯, ০৪:৩৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: সংগৃহীত


সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অবিশ্বাস্য ভোটে বিজয়ের পর নতুন সরকার গঠনের প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতায় এবার নতুন মন্ত্রিসভা ১০ জানুয়ারির মধ্যেই ঘোষণা হবে। এদিকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এবারের মন্ত্রিসভায় বড় চমক আসতে পারে।

কেমন হতে যাচ্ছে এবারের নতুন মন্ত্রিসভা? এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। দীর্ঘদিন যাবত কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা শিক্ষক নেতাকে মন্ত্রীসভায় স্থান দেওয়া হয়নি। তাই আলোচনায় উঠে আসছে এই বিষয়টিও। শোনা যাচ্ছে, ত্যাগী ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা কোন শিক্ষককে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হবে।

আসন্ন মন্ত্রিসভায় সম্ভাব্য যেসব শিক্ষক ও শিক্ষক নেতারা মন্ত্রিত্ব পেতে পারেনঃ

অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী

সম্ভাব্য মন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক এ চেয়ারম্যান বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের এমিরিটাস অধ্যাপক।

অধ্যাপক আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-রসায়ন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে ১৯৬৭ সালে বিএসসি এবং ১৯৬৮ সালে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঔষধবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ডক্টরেটোত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন।

তিনি ১৯৮৫ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি ফার্মেসি অনুষদের ডীনের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)’র চেয়ারম্যান হন। নয়াদিল্লি ভিত্তিক সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিরও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।

বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ড্রাগ পলিসি কমিটির সদস্য, প্যারিসের ক্যানাম ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল প্রফেসর এবং যুক্তরাজ্যের ব্রাউসাইগ ইউনিভার্সিটি ও নটিংহাম ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে কাজ করেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা জার্নালে তার ১০০টিরও বেশি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী

তালিকায় আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীর নাম।

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক অবস্থায় মুজিব বাহিনীর হয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ঘাতক যুদ্ধাপরাধী নির্মূল আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির ক্ষমতায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন।

আবদুল মান্নান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে বি. কম (অনার্স) ও ১৯৬৯ সালে এম. কম পাশ করেন। পরবর্তীতে ম্যানচেষ্টার থেকে এমবিএ ও লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয়ে এম. আই. এস বিভাগের সিলেকশন গ্রেড প্রফেসর।

স্কুল জীবনেই তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাথে জড়িত হন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৩ সালে কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত হন, ১৯৬৫ সালের আয়ূববিরোধী নির্বাচনে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সংস্পর্শে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি আরও সক্রিয়ভাবে আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত হন। এই সময়ে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে দু’বার সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৬ সালে তিনি বিএলএফ (বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট) এর সাথে সরাসরি যুক্ত হন যা মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনী নামে পরিচিতি লাভ করে। জনাব চৌধুরী ১৯৬৯ এর গণ আন্দোলন সংগঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রার্থী না হয়েও সক্রিয় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন।

ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল

সম্ভাব্য মন্ত্রীদের তালিকায়েআছেন দেশের জনপ্রিয় লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ সালে। ১৯৭৫ সালে অনার্স-এ দুই নম্বরের ব্যবধানে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয়স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৮২ তে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনিস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে সাফল্যের সাথে ডক্টরেটোত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন। ১৯৮৮ তে তিনি বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ (বেলকোর) এ গবেষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৪ পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেন। ওই বছরেই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।

ড. জাফর ইকবাল একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মনোনীত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।

এছাড়াও ড. জাফর ইকবাল একজন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক এবং কলাম-লেখক। তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে।১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনারা তার পিতাকে গুলি করে হত্যা করে। বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ তার বড় ভাই এবং রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট, সাহিত্যিক আহসান হাবীব তার ছোট ভাই।এছাড়া তালিকায় আছে সাবেক উপদেষ্টা ড. আলাউদ্দিন আহমেদের নামও। তবে যেই হোন না কেন, নতুন মন্ত্রিসভায় শিক্ষকদের পদচারণা ফের শুরু হওয়াটা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন ছাত্র-শিক্ষকরা।

উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনের পরে আগামী দশ তারিখের মধ্যেই মন্ত্রিসভা গঠন করতে হবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে। 

Bootstrap Image Preview