Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ মঙ্গলবার, জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ধানের শীষের প্রার্থী কারাগারে, সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন স্ত্রী

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:১২ PM
আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:১২ PM

bdmorning Image Preview


ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মনোনিত প্রার্থী মাওলানা হাকিমকে আটকে রাখা এবং ধানের শীষের কর্মীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে ধানের শীষ প্রার্থীর স্ত্রী।

সাংবাদিক সম্মেলনে পাঠ করা লিখিত বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরা হল-

সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম। আপনারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দেশ ও জাতি আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা, আমি মোছা: জাকিয়া জাবীন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনিত প্রার্থী মাওলানা আব্দুল হাকিমের সহধর্মিনী। আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন যে, আগামী ৩০ শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন জাতিকে কথা দিয়েছিল আসন্ন সংসদ নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহন নিশ্চিত করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করবেন। যা শুনে আমরা আশ্বান্বিত হয়েছিলাম কিন্তু বাস্তবে এই আসনে উল্টো চিত্র বিরাজ করছে। ঠাকুরগাঁও-২ (হরিপুর,বালীয়াডাঙ্গী ও রাণীশংকৈল আংশিক) আসনে ঐক্যফ্রন্ট মনোনিত ধানের শীষের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল হাকিম-এর নির্বাচনী আসনের বর্তমান অবস্থা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি-

১।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর গত ১ নভেম্বর রোজ বৃহস্পতিবার আমার স্বামীকে পুলিশ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বেআইনিভাবে বাসা থেকে গ্রেফতার করে তাকে একটি মামলায় কারাগারে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে তার  বিরুদ্ধে নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে মোট ৭টি মামলা দেয়। নিম্ন আদালতে মামলাগুলোর জামিনের আবেদন করলে নিম্ন আদালত তা নাকচ করে দেন। নিম্ন আদালতে জামিন না পেয়ে আমরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হই। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে উক্ত মামলাগুলোর জামিন আবেদন করলে মহামান্য হাইকোর্ট সবগুলো মামলার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তিনি সবকটি মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিনপ্রাপ্ত হয়েছেন।

যেহেতেু জেলাখানায় থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে নতুন করে বারবার নতুন মামলায় শোন গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে, সে জন্য সবকটি মামলায় জামিন পাওয়ার পরও আমাদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে সরকার আবারো তার বিরুদ্ধে নতুন মামলা দিয়ে তাকে শোন এ্যারেষ্ট দেখাতে পারে। তাই আমরা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে এই মর্মে একটি রিট পিটিশন আবেদন করি (রিট পিটিশন নম্বর-১৬২১০/১৮) যেন তার বিরুদ্ধে নতুন কোন মামলা না দেয়া বা কোন মামলায় শোন এ্যারেষ্ট না দেখাতে পারে।

গত ১৮/১২/২০১৮ ইং তারিখে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মাইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আবেদনটি শুনেন এবং তা মঞ্জুর করেন। সেইসাথে আদেশ প্রদান করেন যে, মাওলানা আব্দুল হাকিম এর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে যদি নির্দিষ্ট ক্রিমিনাল মামলা না থাকে তাহলে তাকে কোন ওয়ারেন্ট ছাড়া জেল থেকে বের হওয়ার সময় এবং নতুন কোন মামলায় গ্রেফতার করা যাবে না। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের উক্ত আদেশ নামাটি গত ২৪/১২/১৮ইং তারিখে জেলা বরাবরে আসে। ইতিমধ্যেই আমরা জানতে পারলাম যে তাকে আরো দুইটি নতুন মামালায় শোন এ্যারেষ্ট দেখানো হচ্ছে। মামলা নম্বর জিআর-৫২৮/১৮ ও জিআর-৬৪/১৮। যা সম্পূর্ণরুপে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরিপন্থি। কারণ যেসব মামলায় নতুন করে তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে তার এজহারে মাওলানা আব্দুল হাকিম এর নাম নেই।

এমতাবস্থায় তাকে নতুন মামলায় এ্যারেষ্ট দেখানো আদালত অবমাননার শামিল। আমরা আশাকরি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনাব আব্দুল হাকিম কে নতুন মামলা দিয়ে হয়রানি করা থেকে বিরত থাকবেন। মূলত তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং ধানের শীষের গণজোয়ার দেখে সরকার তাকে কারাগারে আটক করে রেখেছে। জনগণ তাকে বিজয়ী করে সরকারি ষড়যন্ত্রের জবাব দিবে ইনশাআল্লাহ।

২। গত ১৪ ডিসেম্বর নমিনী মনোনিত নির্বাচনী এজেন্ট মাওলানা রফিকুল ইসলামকে বালীয়াডাঙ্গীর নিজ বাসা থেকে ও ২২ ডিসেম্বর হরিপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে নিজ বাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ ছাড়াও তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ৭০ জন নেতাকর্মী ও ভোটারদের গ্রেফতার করেছে। এখনো সরকার দলীয় প্রার্থীর নির্দেশে পুলিশ নিয়মিত গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে।

৩। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষেরা নির্বাচনী প্রচারণায় বের হলে তাদের বাসায় গিয়ে ভয়, মামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে ফলে কোন নেতাকর্মী নির্বাচনী গণসংযোগ করতে মাঠে নামতে পারছে না।

৪। হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গীতে গত ২৩ ডিসেম্বর ও বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার ২ নং চাড়োল ইউনিয়নে গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে ধানের শীষের ৫০,০০০ পোষ্টার, ৫০ টি ব্যানার, ৭০,০০০ হ্যান্ডবিল ও নির্বাচনী অফিস ও অফিসের যাবতীয় আসবাবপত্র পুলিশের সহায়তায় ভাংচুর ও পুড়িয়ে দেয়া হয়।

৫। সাধারণ ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে হুমকিস্বরুপ বলা হচ্ছে 'নেীকায় ভোট দিলে কেন্দ্রে যাবা নতুবা যাওয়ার দরকার নাই'। এতে করে সাধারন ভোটারদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

৬। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় পুলিশ ধানের শীষের নেতাকর্মীদের বাসায় গিয়ে হুমকি দিচ্ছে এবং কোন পোষ্টার, ব্যানার, হ্যান্ডবিল সাথে পেলে তাদেরকে গ্রেফতার করছে।

৭। বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ তাদের নির্বাচনী অফিস নিজের কর্মীদের দিয়ে পুড়িয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর দোষারোপ করে ও বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। যা একেবারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত।

৮। গত ১৮ ডিসেম্বর বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের কালমেঘ বাজার ও ২৫ই ডিসেম্বর চাড়োল ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা প্রদান করে মাইক ও অটোবাইক ভাংচুর করে,অটো চালকদের মারধর করে মাইক ব্যাটারি ছিনিয়ে নেয়।

৯। হরিপুর উপজেলার কাঠালডাঙ্গীতে গত ২৩ ডিসেম্বর আওয়ামি লীগ কমীরা নিজেদের নির্বাচনী অফিসে নিজেরা আগুন দিয়ে হরিপুর থানায় দুটি মামলা দায়ের করে যাতে  ১৫৩ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়।

১০। এসব হয়রানির বিরুদ্ধে রির্টানিং কর্মকতা, ইউ্এনও, থানার ওসি ও বিজিবি বরাবর লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দিলেও এর কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ, আপনাদের মাধ্যমে আজ আমি এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং নমিনিসহ গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি। পরিশেষে আপনাদের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করছি বাংলাদেশের আপামর জনতা আজ তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে। তাই ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ করার লক্ষে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্গলা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে এখন থেকে শুরু করে ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়া পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করে বাংলাদেশকে একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি। বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার দিতে জাতির বিবেক সাংবাদিক ভাইদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।

Bootstrap Image Preview