Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৫ শুক্রবার, আগষ্ট ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ক্যান্সারের নাম করে টাকা আদায়, মালিক হলেন কোটি টাকার!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:৩০ PM
আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:৩০ PM

bdmorning Image Preview


প্রায় দুই বছর ধরে নিজেকে ক্যান্সারের রোগী বলে দাবি করে আসছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার দাবির পক্ষে চিকিৎসার ভুয়া নথি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছেন অনেককে। এভাবে দুই বছরে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় আড়াই কোটি টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়ে এই নারীর ঠাঁই হয়েছে কারাগারে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নারী লন্ডনে বসবাস করতেন। প্রতারণার দায়ে লন্ডনের একটি আদালত তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

কখনও সাবেক স্বামী বা শাশুড়ি-ননদ,আবার কখনও নিজের বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকেও নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। সবার কাছেই ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার গল্প ফেঁদেছিলেন তিনি। সেই চিকিৎসার খরচের নাম করে দু’বছরে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই নারী।

আর এই টাকার বেশির ভাগই খরচ করেছেন রকমারি ব্যাগ কিনে। অবশেষে ধরা পড়েছেন তিনি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইংল্যান্ডের ওই নারীকে প্রতারণার দায়ে চার বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত।

লন্ডন পুলিশ বলছে, জেসমিন মিস্ত্রির (৩৬) স্বভাবই হচ্ছে মিথ্যা কথা বলা। ২০১৩ সালে প্রথমবার সাবেক স্বামী বিজয় কাটেচিয়াকে জানান, তিনি মারণব্যাধি ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত। ক্যান্সার আক্রান্তের প্রমাণ হিসেবে বিজয়ের হোয়াট্সঅ্যাপে চিকিৎসকের বেশ কয়েকটি মেসেজও পাঠিয়ে দেন।

বছরখানেক পর জেসমিন বিজয়কে জানান, ব্রেন ক্যান্সারের শেষ স্টেজে রয়েছেন তিনি। আর মাত্র ছ’মাস বাঁচার আশা রয়েছে তার এবং আমেরিকায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। তবে তার জন্য পাঁচ লাখ পাউন্ডের প্রয়োজন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে চার কোটির টাকারও বেশি।

জেসমিনের আর্তি শুনে মন গলে যায় সাবেক স্বামী বিজয়ের। সাবেক স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে রাজি হয়ে যান তিনি। এভাবেই মাসের পর মাস জেসমিনকে টাকা দিয়ে যেতে থাকেন। বিজয়ের মা, বোনের কাছ থেকেও নিয়মিত টাকা আদায় করতে থাকেন জেসমিন।

তবে শুধু নিজের সাবেক স্বামী বা তার পরিবারই নয়, ডেটিং অ্যাপসের মাধ্যমে আলাপ হওয়া এক ব্যক্তির কাছ থেকেও সাড়ে সাত হাজার পাউন্ড (প্রায় সাত লক্ষ টাকা) হাতিয়ে নেন তিনি। পুলিশের দাবি, ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ডস অঞ্চলের বাসিন্দা পেশায় মেডিক্যাল সেক্রেটারি জেসমিন ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এভাবে অন্তত ২৮ জনের কাছ থেকে মোট ২ লাখ ৫৩ হাজার ১২২ পাউন্ড আত্মসাৎ করেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২ কোটি সাড়ে ২৬ লাখ টাকার কাছাকাছি।

এ ভাবেই চলছিল জেসমীনের টাকা হাতিয়ে নেয়ার ‘কারবার’। তবে আচমকাই ফাঁস হয়ে যায় তার এই অপকর্ম। বিজয়ের এক বন্ধু তাকে জানান, চিকিৎসকের থেকে পাওয়া ব্রেন স্ক্যানের কয়েকটি ইমেজ দেখে তার খটকা লাগছে। এর পর তিনি খতিয়ে দেখেন, তা আসলে গুগল থেকে ডাউনলোড করা ইমেজ। এরপর ওই ইমেজগুলো একজন চিকিৎসক বন্ধুকে দেখাতেই জেসমিনের কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যায়।

পুলিশি তদন্তে জানা যায়, অন্য একটি সিম কার্ড থেকে ওই মেসেজ এবং ইমেজগুলো বিজয়কে পাঠিয়েছিলেন জেসমীন। এমনকি অনলাইনে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে সেখান থেকে ভুয়া চিকিৎসকদের নামে বিজয়কে ক্ষুদে বার্তা পাঠাতেন তিনি। শুধু তাই নয়,সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যান্সার রোগীদের পক্ষে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন জেসমিন।

গত বছর জেসমিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দীর্ঘ শুনানির পর নিজের দোষ স্বীকার করেন তিনি। তার এমন প্রতারণায় বিচারক জুডিথ হিউজের মন্তব্য,‘ক্যান্সারের নাম করে সকলের কাছ থেকে টাকা আদায়... এটা তো ভয়ঙ্কর অপরাধ!’ আনন্দবাজার।

Bootstrap Image Preview