Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

যেভাবে ‘হোটেল বয়’ থেকে মার্কিন সিনেটর হলেন বাংলাদেশের শেখ রহমান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৪৮ PM
আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৪৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মানুষের চেষ্টার অসাধ্য যে কিছু নেই তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের শেখ রহমান চন্দন। আশির দশকে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো এই বাংলাদেশি পড়াশোনার খরচ যোগানোর জন্য হোটেলে থালা-বাসন ধোয়ার কাজ করেছেন। ঘণ্টা চুক্তি হিসেবে মাত্র তিন ডলার পেলেও নিজের স্বপ্নকে ব্যর্থ হতে দেননি কখনো। নিজের সততা, একাগ্রতা আর আত্মবিশ্বাসে আজ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটর।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো জর্জিয়া। সেখানকার আইনসভায় সিনেটরের পদ রয়েছে ৫৬টি। গেল ৬ নভেম্বর জর্জিয়ায় মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শেখ রহমান সিনেটর নির্বাচিত হন। স্টেটটির প্রথম মুসলিম আইন প্রণেতাও তিনি।

তবে এই অসাধ্য কাজটাকে নিজের করে নিতে শেখ রহমানকে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু পথ, বহু বাধা আর বহু উপেক্ষা। শেখ রহমানের আজ এই সাফল্যের পেছনে যে বড় একটি পরিশ্রম আর সাধনা ছিল তা তার অতীত গল্প থেকেই বোঝা যায়।

বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান শেখ রহমান ১৯৮১ সালের ৭ জানুয়ারি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি ও গ্লোবাল স্টাডিজ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করার পর যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নাম লেখান যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যেটিক পার্টিতে।

আগে থেকেই জড়িয়ে ছিলেন
চন্দন জড়িয়েছিলেন সামাজিক সব কাজে। হয়ে ওঠেন একজন অ্যাক্টিভিস্ট। এটি তাঁর রাজনৈতিক জীবনেও কাজে লাগছে। ১৯৯৫ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব পান। জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি ও গ্লোবাল স্টাডিজ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েট হন। তারপর রাজনীতিতে সক্রিয় হতে থাকেন। কাজ করতে থাকেন ন্যাশনাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক, সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন ইত্যাদি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে। যোগ দেন ডেমোক্রেট পার্টিতে।

একজন পূর্বসূরি
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের অবস্থান এখনো সে রকম উল্লেখযোগ্য অবস্থায় যায়নি। যদিও বিভিন্ন স্টেটে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অনেকেই জয়ী হয়েছেন। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিতে প্রথম নাম হ্যানসন ক্লার্ক। এখনো তিনিই একমাত্র হয়ে আছেন। ইউএস কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন তিনি। ডেমোক্রেটিক দল থেকে হাউস মেম্বার হিসেবে ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন হ্যানসন। হ্যানসন ক্লার্কের জন্ম মিশিগানের ডেট্রয়েটে। তাঁর বাবা মোজাফ্ফর আলী হাশিম অভিবাসী হিসেবে এসেছিলেন সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে। তবে তাঁর মা থেলমা ক্লার্ক ছিলেন আফ্রিকান আমেরিকান। আরো নাম করা যায় ড. রশিদ মালিকের। তিনি ২০১৬ সালে কংগ্রেসম্যান পদে চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীর সঙ্গে পেরে ওঠেননি। তবে ভোট পেয়েছিলেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক। ড. নীনা আহমেদের নামও করা যায়। তিনি বারাক ওবামার এশিয়া প্যাসিফিক কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন। পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া শহরের ডেপুটি মেয়রও ছিলেন। পরে পেনসিলভানিয়া স্টেটের লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদে লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। হেরে গিয়েছিলেন যদিও, কিন্তু ভোট পেয়েছিলেন ২৪ শতাংশ। পাঁচজনের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। যা হোক এই বছর বাঙালিদের মধ্যে খুশি ছড়ালেন শেখ রহমান। এ বছরই সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন হেলাল শেখ আর তৈয়েবুর রহমান। তাঁরা নিউ ইয়র্ক সিটির কাউন্সিলম্যান হতে লড়াইয়ে নেমেছিলেন।

অনেক ভোট পেয়েছেন
স্টেট সিনেটে লড়াইয়ে নামার অনেক আগে থেকেই শেখ রহমান নিজেকে ডেমোক্রেট পার্টির নেতা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনেক কাজ করেছেন। এ কারণেই তিনি জাতীয় পর্যায়ে পার্টির কার্যনির্বাহী সদস্য হন। শুধু তা-ই নয়, শেখ রহমান ডেমোক্রেটিক দলের স্থায়ী সুপার ডেলিগেট হিসেবে দলটির নীতিনির্ধারণী বিষয়েও ভূমিকা রাখছেন।

চলতি বছরের ২২ মে শেখ রহমান জর্জিয়ার সিনেট আসন ডিস্ট্রিক্ট ৫-এর ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে বিজয়ী হয়ে চূড়ান্ত নির্বাচনের পথে এগিয়ে যান। পরে ৬ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রায় ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ধরাশায়ী করেন রিপাবলিকান প্রার্থীকে।

চন্দন বললেন, ‘আমার এই জয় আরো বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি আমেরিকানকে দেশটির মূলধারার রাজনীতিতে টেনে আনবে, বিশেষ করে তরুণদের। একজন আমেরিকান হিসেবে আমার নির্বাচনী এলাকার সব মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। ভোটাররা আমার ওপর যে আস্থা রেখেছে তার প্রতিদান দিতে চাই।’

 

তাঁর স্বপ্ন
আমেরিকায় জাতীয় পর্যায়ে সিনেটের মেয়াদ ছয় বছর হলেও স্টেটে দুই বছর। তাই সামনের দুই বছর চন্দনকে জর্জিয়ায়ই থাকতে হচ্ছে। তিনি চান না ভবিষ্যৎ স্বপ্নে বিভোর হয়ে এখনকার দায়িত্ব ভুলে যেতে। তিনি বরং শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিকসহ সবাইকে নিয়ে জর্জিয়ায় একটি নিরপেক্ষ ও ভেদাভেদহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেন।

Bootstrap Image Preview