Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১২ মঙ্গলবার, আগষ্ট ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশের কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলছেন মার্কিন কংগ্রেস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:২৪ PM
আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:২৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও হেফাজতে ইসলামের মতো কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসে উত্থাপন করা এক প্রস্তাবে।

তাতে ওই কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে থামাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ওই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন এবং তাদের সঙ্গে অংশীদারি বন্ধ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) প্রতি।

মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধিসভায় গত বুধবার রাতে (বাংলাদেশ সময়) প্রস্তাবটি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি জেমস ই ব্যাঙ্কস। প্রস্তাবটি উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রতিনিধিসভার পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

‘বাংলাদেশে ধর্মের নামে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলোর কারণে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সৃষ্ট হুমকির কারণে উদ্বেগ প্রকাশ’ শীর্ষক ওই খসড়া প্রস্তাবে চারটি দফা রয়েছে। প্রথম দফায়ই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের প্রতি জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির ও হেফাজতে ইসলামের মতো কট্টর গোষ্ঠীগুলোর হুমকির কথা উল্লেখ করে সেগুলোকে থামাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তৃতীয় দফায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধকে গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি। চতুর্থ দফায় জামায়াত, শিবির ও হেফাজতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন এবং তাদের সঙ্গে অংশীদারি বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

১৯৭১ সালে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সৃষ্টি এবং ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ছাড়াও ধর্মে বিশ্বাসী নয়- এমন ব্যক্তিদের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, এক কোটিরও বেশি লোকের বাস্তচ্যুতি এবং দুই লাখ নারীর লাঞ্ছিত হওয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কথা তুলে ধরে এতে বলা হয়েছে, প্রাণহানি, সম্ভ্রমহানি ও বাস্তচ্যুতির অনেক ঘটনাই ঘটিয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ইসলামের নামধারী সহযোগীরা।

প্রস্তাবে মিয়ানমারে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানের স্বেচ্ছায় ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ রয়েছে।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। তাদের হামলায় হিন্দুদের ৪৯৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিন্দুদের ৫৮৫টি দোকানে হামলা বা লুট হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙচুর হয়েছে ১৬৯টি মন্দির।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সম্প্রতি হামলার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী জড়িত। এ ছাড়া বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আহমদিয়া মুসলমানদের ওপর ধর্মীয় উগ্রবাদীরা হামলা চালিয়েছে। হেফাজতে ইসলাম অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে পুরোপুরি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে আন্দোলন চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে। এতে বলা হয়েছে, দাবি মানা না হলে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের হুমকি দিয়েছে হেফাজত।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের জন্য আসন্ন ও চলমান হুমকি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ওই ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর হামলার ঝুঁকিতে আছে।

বাংলাদেশে জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার কর্মকাণ্ড নিয়ে ন্যাটোর স্থল কমান্ডের সাবেক অধিনায়ক জেনারেল জন ডাব্লিউ নিকোলসনের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়টিও প্রস্তাবে আমলে নেওয়া হয়েছে।

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত হামলা, জামায়াত-শিবিরসহ কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোর কারণে ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসপন্থীদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশে ইসলামের নামে কট্টরপন্থার প্রবণতা বাড়ার যোগসূত্র আছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। ধর্মের নামে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করতে এবং মানবাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আরো সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে।

Bootstrap Image Preview