চুয়াডাঙ্গার বেশির ভাগ করাতকলের (স' মিল) বৈধতা নেই। কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বছরের পর বছর ধরে করাতকল মালিকরা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চালাচ্ছেন এগুলো। প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়ণ করার বিধান থাকলেও ১০-১১ বছর ধরে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে করাতকলগুলো। কর্তৃপক্ষ বলছে, লাইসেন্সবিহীন করাতকলগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ৮১টি করাতকল রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে অবৈধ এসব করাত কলের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। জেলা বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ৮১টি করাতকলের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৬টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২৩টি, জীবননগর উপজেলায় ১৪টি ও দামুড়হুদা উপজেলায় ১৮টি আছে। ২০০৭ সালে জেলার প্রায় সব করাতকলের লাইসেন্স ছিল।
এরপর থেকেই লাইসেন্স নবায়ণের ব্যাপারে উদাসীন করাতকল মালিকরা। বর্তমানে মাত্র পাঁচ থেকে সাতটি করাতকলের লাইসেন্স আছে। আর নবায়ণের আবেদন পড়ে আছে কিছু করাতকলের। অভিযোগ আছে, অবৈধভাবে পরিচালিত এসব করাতকলের মাধ্যমে বেপরোয়াভাবে চলছে বৃক্ষ নিধন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ করাতকল প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কের পাশে রয়েছে অনেক করাতকল। এসব করাতকলের মালিকরা রাস্তার পাশে যত্রতত্র ফেলে রাখেন কেটে আনা গাছ। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা গাছের কারণে পথচারীদের চলতে অসুবিধা হয়। বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদেরও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা গাছ এড়িয়ে চলতে হয়।
করাতকলের ব্যবসার জন্য আইন থাকলেও তা জানেন না অনেক করাতকল মালিক। তাঁরা ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌরসভা থেকে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে করাতকলের ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। করাতকল লাইসেন্স বিধিমালা ২০১২ অনুযায়ী, কোনো করাতকল মালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। লাইসেন্স নেওয়ার পর থেকে প্রতিবছর তা নবায়ণ করতে হবে। কোনো করাতকলের লাইসেন্স নবায়ণ করা না হলে তা লাইসেন্সবিহীন করাতকল হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু এ আইন মানেন না বেশির ভাগ করাতকল মালিক। আবার অনেক মালিক জানেনা করাতকলের লাইসেন্স করতে হয়।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ভিমরুল্লা গ্রামের সাজিদুর রহমান বলেন, দুই বছর হলো আমি স' মিল (করাতকল) করেছি। বৈধ কাগজপত্র নিয়েই ব্যবসা করছি। বেশির ভাগ স'মিল অবৈধ। তাদের কোনো খরচ নেই। তারা কম পয়সায় কাজ করে। আমাদের লাইসেন্সের জন্য খরচ হয়। এ জন্য অবৈধ স'মিল মালিকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারি না।
ফকিরপাড়া গ্রামের সমিল মালিক ইউসুফ আলী খোকন বলেন, যা মিল আছে তার অর্ধেকের বেশির লাইসেন্স নেই। অবৈধ মিল বন্ধ হয় না বলে অনেকে লাইসেন্স করে না। লাইসেন্স না করেই যদি চলে, তাহলে কেন লাইসেন্স করবে মিল মালিকরা?
চুয়াডাঙ্গা জেলা করাতকল মালিক সমিতির সভাপতি মুন্সী মো. আরঙ্গজেব বেল্টু বলেন, ৭৬টি করাতকল মালিক তাঁদের সমিতির সদস্য। বর্তমানে করাতকল মোটেও লাভজনক ব্যবসা নয়। কিছু শ্রমিক এখানে কাজ করার সুযোগ পায়। তাদের রোজগারের ব্যবস্থা হয়। কোনো করাতকল মালিক সারা দিন যদি করাতকলে বসে থাকেন, তাহলে তাঁর নিজের সংসার চলবে না। করাতকলে যা আয় হয় তাতে শ্রমিকদের দেওয়ার পর সামান্য অর্থ থাকে। আয় কম, এ জন্য করাতকলের দিকে নজরও কম অনেকের।
চুয়াডাঙ্গা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল হামিদ বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। অবৈধ করাতকল মালিকদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিয়মের বাইরে কোনো করাতকল চলতে দেওয়া হবে না। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধ করাতকল মালিকদের জরিমানা করা হয়েছে।