চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের পিস্তলের লাইসেন্স বাতিল করতে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দেবে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ (সিএএবি)। অস্ত্র ব্যবহার ও বহনের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আগামী সপ্তাহেই এ চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে ব্যাগে পিস্তল নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের বিমানবন্দরে প্রবেশের বিষয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া তার বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, ব্যাগে থাকা লাইসেন্স করা পিস্তলটি তিনি বাসায় রেখে আসতে ভুলে গিয়েছিলেন। এর মধ্যেই বিমানবন্দরের প্রবেশ গেটে ব্যাগটি তল্লাশি করা হয়, কিন্তু সেখানে অস্ত্রটি ধরা পড়েনি। স্ক্যানিং মেশিনে পিস্তল ধরা না পড়ায় অবাক হন তিনি। তল্লাশির দ্বিতীয় ধাপে (অ্যান্টি হাইজ্যাকিং পয়েন্ট) এসে ব্যাগে থাকা পিস্তলটির কথা তার মনে পড়ে। এ ব্যাপারে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করলে শাহজালাল কর্তৃপক্ষ তখন তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে।
তবে তার এ বক্তব্য সঠিক নয় উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় জানায়, ঘটনার বিষয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে সংবাদমাধ্যমে অন্যায়ভাবে একের পর এক অসত্য কথা বলছেন। প্রকৃতপক্ষে ওইদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যা ঘটেছে তা হলো-ইলিয়াস কাঞ্চনের ল্যাপটপের ব্যাগে থাকা পিস্তল ও গুলি বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের এন্টি হাইজ্যাকিং পয়েন্টে স্ক্যানিং করার সময় শনাক্ত হয়। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি তার ভুল স্বীকার করেন। তখন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা তাকে বিমানবন্দরের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পিস্তলটি বহন করার জন্য অনুরোধ জানালে তিনি ওই স্থান থেকে ফেরত যান।
পরবর্তীতে তিনি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই উড়োজাহাজে চট্টগ্রাম যান। সিএবির সদস্য (নিরাপত্তা) অতিরিক্ত সচিব শাহ মো. ইমদাদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন গত ৫ মার্চ বিমানবন্দরের ভেতরে পিস্তল ও গুলি বহনের বিষয়ে নানা ধরনের অসত্য তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরছেন। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ঘোষণা ছাড়াই বিমানবন্দরের ভেতরে তিনি অস্ত্র বহন করলেও একজন স্বনামধন্য নাগরিক হিসেবে ঘটনার পর সহানুভূতি দেখিয়ে আটক না করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু যেহেতু এখন তিনি নিজেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণকারী তা পাওয়ার আগে কোথায়, কীভাবে, কোন স্থানে তার অস্ত্রটি বহন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করবেন তা জানা বাঞ্ছনীয়। অথচ নির্দেশনানুযায়ী ইলিয়াস কাঞ্চন কোনো নিয়মই সেদিন মান্য করেননি। এ ক্ষেত্রে তিনি বৈধ অস্ত্র বহনের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। তাই সিএবির পক্ষ থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে তার অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করা হবে।’ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান শাহ মো. ইমদাদুল হক।
সিএবির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাঈম হাসান বলেন, ‘বিমানবন্দরের স্ক্যানিং মেশিনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ বিশ্ববিখ্যাত ব্যাপ কোম্পানির মেশিনই বিমানবন্দরে ব্যবহার করা হচ্ছে। একই ধরনের মেশিন দুবাই, হিথ্রোসহ বিশ্বের উন্নত বিমানবন্দরেও ব্যবহৃত হয়। ঘটনার তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত একজন নিরাপত্তারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’