আমার স্বামী একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে বেশ ভালো বেতনে চাকরি করেন। আমি একজন গৃহিণী। আমাদের তিন সন্তান। দুই মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ছোট ছেলে কলেজে পড়ে। মেজ মেয়ে পড়াশোনার জন্য চট্টগ্রামে থাকে, আমরা ঢাকায়। দুই বছর আগেও মনে হতো আমরা খুবই ভালো আছি।
বছরে এক-দুবার বিদেশভ্রমণ, সন্তানদের সব শখ মেটানো, পড়াশোনার খরচ চালিয়ে কিছুটা সঞ্চয়ও করতাম। একজনের টাকায় বেশ ভালোভাবে চলে যাচ্ছিল। আমি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। দুই বছর চাকরিও করেছিলাম। নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই সময়ে চাকরি ছেড়েছিলাম বাকি দিকগুলো সামলাতে। কতটা পেরেছি জানি না। তবে স্বামীর ওপর যে খুব চাপ যায়, সেটা বুঝতে পারি তার রোজ ঘরে ফেরা চেহারা দেখলে। নিজেকে তখন খুব অসহায় মনে হয়। সন্তানদের পড়াশোনা, সংসারের খরচ, নানা রকম অনুষ্ঠানে যাওয়া, আত্মীয়স্বজন আর প্রতিদিনের বাজারে তো লাগামহীন অবস্থা। সঞ্চয় তো দূরের কথা, সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এখন ভাবছি কোনো বড় অসুখ, মেয়েদের বিয়েশাদি, তাদের প্রতিষ্ঠিত করা—সবটা ঠিকমতো সামলাতে পারব তো আমরা?
প্রতিদিনই এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। মাঝেমধ্যে তো মনে হয় নিজে কেন তখন চাকরিটা ছাড়লাম। মন অশান্ত থাকে। পত্রিকায় কোনো পণ্যের দাম দুই টাকা বাড়ছে, এমন খবর দেখলেই কান্না পেয়ে যায়। আমার বয়স এখন ৫৮ বছর। কী করব বুঝতে পারি না...
আফরোজা রেহনুমা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
আপনার স্বামী বহুজাতিক কোম্পানির চাকরিতে আছেন, যা দিয়ে আগে চলছিল, এখন চলছে না। তাহলে নিশ্চয়ই খরচ বেড়েছে। এই অবস্থা যে তৈরি হবে, সেটার পরিকল্পনা আগেই থাকা উচিত ছিল। এখন একজনের উপার্জনের ওপর নির্ভর করা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে পরিবারের সবার উপার্জনের উপায় বের করতে হবে। কেউ টিউশনি করবেন, কেউ ক্যাটারিং করবেন, অন্য কেউ কোনো চাকরির সুযোগ খুঁজবেন। মানে, যাঁর জন্য যেটা করা সহজ হবে, তাঁকে সেই উপায় খুঁজে বের করে পরিবারের উপার্জন বাড়াতে হবে।
আমার সব সময় মনে হয়, যখন আমরা কম বয়সে থাকি, তখন ভবিষ্যতের কথা একটু কম ভাবি, কেউ কেউ হয়তো সেটা ভেবেই চলি না। যা-ই হোক, বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আপনাদের পরিবারের সবাই মিলে বসে আরও উপার্জনের পরিকল্পনা করা দরকার বলে আমি মনে করি।