Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৮ বুধবার, মে ২০২৪ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যৌনকর্মীরা অভিজাত সাহেব পাড়ায়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২১, ০৮:৫৩ AM
আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২১, ০৮:৫৩ AM

bdmorning Image Preview


জেসমিন সুলতানা।। গত কয়েকদিন ধরে মিডিয়ার সুবাদে নারীদের অপকর্ম, অপকীর্তি দেখে নারী হিসেবে আমরা লজ্জিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সুন্দরী, চালচলনে চোস্ত, স্টাইলিশ নারীরা অনেকেই অভিজাত এলাকায় গড়ে তুলেছেন যৌন পল্লী। নারী আমদানি রফতানির অভয়ারণ্য।

বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কেবলমাত্র প্রাপ্ত বয়স্করা আদালতে ঘোষণা দিয়ে পেশাদার যৌনকর্মে নিজকে নিয়োজিত করতে পারে। আইন অনুসারে নিয়ন্ত্রিত হলেও পেশাটি বৈধ, তবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহে এগুলো বিরল। পেশাদার যৌনকর্মীদের ব্যবহৃত বাড়ি, এলাকা, স্থান ও স্থাপনা নির্দিষ্ট থাকে। যৌনকর্মীরা সাধারণত বিভিন্ন হোটেলে, পার্কে যারা ভাসমান, যৌন পল্লী ভিত্তিক নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যৌনসেবা দিতে পারে। আমাদের দেশে নিবন্ধিত যৌনপল্লী ১৪টি। শতশত মানুষ যৌনসেবা নিতে আসে কিন্তু সবাই ঘৃণা করে পতিতাকে এবং পতিতা পল্লীকে।।

মহামারী করোনা সারাবিশ্বের প্রতিটি ঘরে আজ হানা দিয়েছে। এমন কোন পরিবার নেই যে পরিবার করোনার ছোবল দেয়নি, খুব কম পরিবার আছে যে পরিবারে দু’একজনের মৃত্যু হয়নি। সারা পৃথিবী যখন করোনা নিয়ে ব্যস্ত সে সময়ে মেতে উঠেছে শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত, উচ্চাভিলাসী, নৈতিকতা বিবর্জিত পতিতারা। হোটেল মোটেল বন্ধ থাকার কারণে তারা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ কর্মকান্ড। বসাচ্ছে মদ, জুয়া, ক্যাসিনো,ডিজে ও মাদকের আসর। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ, নেশা, টাকার লোভ, উচ্চাভিলাস, সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি, অশ্লীল নাটক সিনেমা, ডিজে, ক্লাব অনলাইন ভিত্তিক পর্নোগ্রাফি সমাজের একটি শ্রেণিকে আসক্ত করে ফেলেছে। সেখানে যোগ হয়েছে কিছু লেবাসধারী পতিতা।

তাদের খদ্দের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, মিডিয়ার কর্ণধার ব্যক্তিগণ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ধনীর দুলালেরা, অসৎ, অবৈধ কালোটাকার মালিক, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বখে যাওয়া সন্তানেরা। ফলে অতিস্মার্ট নির্লজ্জ পতিতারা কোনো কিছুই ভ্রুক্ষেপ করে না, কাউকে পাত্তা দেয় না, তাদের হাত নাকি অনেক বড়। তারা দুর্ভেদ্য, অপ্রতিরোধ্য তাদের টিকিটির নাগাল কেউ পায় না।

জালে আটকা পড়ছে দু'চারটা চুনোপুটি, রাঘববোয়াল রুই কাতলারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। অসংখ্য পতিতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন পেশায়, বিভিন্ন এলাকায় তারা ঘৃণ্য তারা জঘন্য। অনেকেই জড়িয়ে গেছে মাদক ব্যবসায়, কেউ মাফিয়া চক্রে, কেউ নারী, অস্ত্র সরবরাহে। বাংলাদেশে যখন হেফাজতে ইসলাম ও জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, সারাদেশ জুড়ে আক্রমণ চালিয়ে, হলি আর্টিজানের মতো জায়গায় হত্যাকান্ড ঘটিয়ে ছিলো তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চিরুনি অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করতে সফল ও সক্ষম হয়েছিলেন। অনেকেই এখন জেলখানায়। সময় এসেছে ঢাকা শহরের প্রতিটি এলাকায় চিরুনি অভিযানের। সমাজের অবক্ষয় রোধে ইতিপূর্বে প্রতিটি ভবনের মালিককে, ফ্লাটের মালিকদের তাদের ভাড়াটিয়াদের বৃত্তান্ত দিতে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল, এখন তা বন্ধ।

ফলে প্রমত্ত দেহপসারিনীরা মত্ত হয়েছে অবৈধ খেলায়। তারা কয়েক লাখ টাকায় বাড়ি নিচ্ছে, একা থাকছে, রাতের বেলায় ডুবে থাকছে মদ, জুয়াসহ অবৈধ দেহ ব্যবসায়। সেতো পুরো বাড়ি দখল করে থাকে না, নিশ্চয়ই তার আশেপাশে ভালে, সৎ ধর্মপরায়ন, অবৈধ কার্যকলাপ বিরোধী অভিজাত পরিবারের সজ্জন ব্যক্তি রয়েছেন তাঁরা ৯৯৯ এ ফোন করে জানাতে পারেন। তাঁরা ভয় পান জানাতে গিয়ে উল্টো হুমকিরও, বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন কিনা।

‘হ্যাঁ ওদের হাত নাকি অনেক বড়’। থানা, পুলিশ, মিডিয়া সব ওদের হাতের মুঠোয়। যে অভিযোগ করবে উল্টো তাকে বিপদে পড়তে হবে। গতকাল আমরা এক নায়িকাকে দেখলাম সেন্ডো গেঞ্জি পরেই লাইভে এসেছে, ইতিপূর্বে সে লাইভে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মা ডেকে আকুল আবেদন জানিয়েছিল। তিনি যে মানবতার মা তিনি ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। মা তো ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে বখে যাওয়া এসব সন্তানের খবর নিতে পারেন না পারবেনও না।। তবে অপরাধী কখনো ক্ষমা পাবে না।

বেশির ভাগ নষ্টা নারীদের দেখছি সমাজের নিম্নস্তর থেকে আসা। তাদের নৈতিকতার অবক্ষয় রন্ধে রন্ধে, তারা লোভী, সেলিব্রেটি হওয়ার জন্য, টাকা কামানোর জন্য তারা শর্টকাট পথ বেছে নেয়। তাদের ছোট কাল থেকেই স্বপ্ন থাকে সমাজের উচু স্তরে আসা। তাই যেকোনো কিছুর বিনিময়েই তারা প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সমাজের উচ্চশ্রেণিতে উন্নীত হতে চায়। আভিজাত্যের হাওয়া লাগাতে অতি দ্রুত নিজেদের পরিবর্তিত করে, নাম বদলে, চুল বদলে রং বদলে অন্যরূপ ধারণ করে।

এদের ধরার জন্য জাল বিছিয়ে রাখে মিডিয়ার কিছু কথিত মালিকেরা, প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকেরা, ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ীরা, সাথে আমলারা। যে একবার যে ফাঁদে পা দিবে তার ফিরে আসার পথ থাকে না, নীয়ন আলোর ঝলকানী, দামি বাড়ি, গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ, সোনা গয়না তাদের লোভী, বেপরোয়া করে তুলে। সিগনিফিকেন্ট পরিবারের ঐতিহ্যে লালিতরা কখনোই জালে পা দেয় না,পতিত হয় না। বিগত দিনে নায়ক নায়িকা, গায়ক গায়িকা, অভিনেতা অভিনেত্রী মডেল যাদের নৈতিক স্খলন ঘটেনি তাদের সবাই আজো শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে।

সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে সবাই এক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার, রুখে দাঁড়াবার। আমাদের সমস্ত এলাকায় সবার সোসাইটি রয়েছে। সোসাইটির সদস্যবৃন্দ একত্র হয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। কোথায়, কাদের অবস্থান বের করা কঠিন কাজ নয়। এসব পতিতাদের খদ্দের কারা, পৃষ্ঠপোষক কারা, তাদের শনাক্ত করে আইনের কাছে সোপর্দ করা এখন সবার নৈতিক দায়িত্ব। আর এভাবেই শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে সাহেবপাড়া থেকে পতিতা পল্লীতে বা জেলখানায় তাদের স্থানান্তরের মাধ্যমে সমাজ স্বস্তি পেতে পারে।

আইনের প্রতি সবাইকে শ্রদ্ধাশীল থেকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে অপরাধী যেই হোক না কেনো তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা না দিয়ে আইনের আওতায় এনে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা এভাবেই আমরা পেতে পারি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, পতিতামুক্ত, জঙ্গিমুক্ত, মাদকমুক্ত, সুন্দর বাংলাদেশ।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

Bootstrap Image Preview