এবারও এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে হযবরল অবস্থায় পড়েছে প্রশাসন। এক জায়গায় এক হাজার বছর আগের সিলেবাসের প্রশ্ন দিয়ে শুরু হয়েছে পরীক্ষা। কোথাও ৪০ মিনিট পর শুরু হয়েছে পরীক্ষা। আবার প্রশ্নফাঁসের খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
আজ বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের একটি স্কুলে বহুনির্বাচনী পরীক্ষার 'ক' সেটের প্রশ্নে লেখা ছিল '১০১৯' সালের সিলেবাস অনুযায়ী! এতে এক পরীক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আন্দিজ ৫১৯৫/২০১৯ (ক) সেটের প্রশ্নে এমন ভুল তথ্য দেয়া হয়।
বাংলা ১মপত্র পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ না পাওয়া গেলেও পরীক্ষা চলাকালেই পরীক্ষাটির বহুনির্বাচনী প্রশ্ন এবং সৃজনশীল প্রশ্ন ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া গেছে। পরীক্ষা শেষে আসল প্রশ্নের সঙ্গে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মিল না পাওয়া গেলেও সৃজনশীল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে।
ফেসবুকের ‘Ssc all board question out 2019-√100%’ নামের একটি পেজে আজ সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন পোস্ট করা হয়। এ পোস্টের প্রশ্নগুলো একটু ঝাপসা থাকায় ইনবক্সে পরিষ্কার ছবি এবং বহুনির্বচনীর সমাধান চেয়ে কমেন্ট করছেন পরীক্ষার্থীর অভিভাবকেরা।
অন্যদিকে বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষাটির সৃজনশীল প্রশ্নের ৩ নং সেটের প্রশ্ন পোস্ট করা হয়। বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সঙ্গে আসল প্রশ্নের মিল পাওয়া না গেলেও সৃজনশীল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে।
আবার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বাংলা প্রথমপত্র বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নের ছবি পাওয়া গেছে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরেই ১১.২০ মিনিটে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে প্রশ্নের ছবি আপলোড করা হয়। সেই প্রশ্নের সঙ্গে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্ন মিলিয়ে দেখা গেছে, নৈর্ব্যক্তিক না মিললেও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন হুবহু মিলে গেছে।
অন্যদিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল এপিসি বিদ্যালয়ে কেন্দ্রে টানা ৬ ঘণ্টা পরীক্ষা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র দিয়ে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হলে পরে আবার নতুন করে ২০১৯ সালের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়। যার ফলে প্রায় ৬ ঘণ্টা লেগে যায় পরীক্ষা শেষ হতে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র দিয়ে ৪৮ জন পরীক্ষার্থীর চলতি বছরের বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা নেয়া হয়। এ ঘটনায় কেন্দ্র সচিব সুখলাল বাইনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
কুমিল্লায় দেবিদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া এজি মডেল একাডেমি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার পৌনে এক ঘণ্টা পর একটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের মাঝে রচনামূলক (সৃজনশীল) প্রশ্ন বিতরণ করা হয়েছে। প্রথমদিনে এই কেন্দ্রে সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫৭৬ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
শনিবার বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার জন্য বোর্ড থেকে উপজেলা প্রশাসনে ৪নং সেটের (গাঁদা) রচনামূলক প্রশ্ন কেন্দ্রে বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু প্রশ্নের প্যাকেটে ৪নং সেট না থাকায় বিপাকে পড়ে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে কেন্দ্রে পৌঁছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা।
পরে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে প্রায় ৪০ মিনিট পর বিতরণ করে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা কেন্দ্রের মূল ফটকে জড়ো হন।
চট্টগ্রাম বোর্ডের বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণের খবর পাওয়া গেছে। এসব কেন্দ্রে ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুসারে প্রণীত প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণের বিষয় স্বীকার করেন।
মাহবুব হাসান বলেন, ‘এবার বাংলা পরীক্ষা ২০১৬, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্র অনুসারে হওয়ার কথা। কয়েকটি কেন্দ্রে কেন্দ্র সচিবদের ভুলে ২০১৯ সালের সিলেবাসে যাদের পরীক্ষা দেয়ার কথা, তাদের মাঝে ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুসারে প্রণিত প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। নগরের একের অধিক ও কক্সবাজারের সম্ভবত দুটি পরীক্ষা কেন্দ্রে এ ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণের খবর পেয়েছি।
এদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বরিশাল, সিলেট, কৃমিল্লা, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডসহ দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডে প্রথম দিনই ১০৩৮৭ জন অনুপস্থিত ছিল। বহিষ্কার করা হয়েছে ২৪ জনকে।
রাজধানীর আশকোনায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সারাদেশের কোথাও কেউ প্রশ্নফাঁসের অপচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।