Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রধানমন্ত্রী নিকট খোলা চিঠি; ‘সংঘাত নয়, একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই’

বিডিমর্নিং ডেস্ক-
প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ১২:২৫ PM
আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৪৭ PM

bdmorning Image Preview


আরিফ চৌধুরী শুভ।।

বাংলাদেশ তুমি সাক্ষী থেকো!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিতো ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’। এই স্বীকৃতি আমরা দেইনি, দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু আপনার দলের মন্ত্রীরা আপনার সাথে দীর্ঘদিন থেকেও আপনার হিউম্যানিটির কি আদর্শ পেয়েছেন?

একজন আদর্শ মা তাঁর সন্তানদের চরিত্র, নীতি আদর্শ এবং মানবতা শিখান। কিন্তু ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ আপনি ঠিকই হয়েছে, অথচ আপনার মন্ত্রীরা সব সময় আপনাকে বির্তকিত করার প্রতিযোগিতা করছে আপনারই চোখের সামনে। এটা খুবই অপ্রত্যাশিত ও দু:খজনক। আপনি কি তাদের এমন কর্মকাণ্ডে অস্বস্তিবোধ করছেন না?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার দলের মন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণ কি আপনার হাতে নেই? সামনে নির্বাচন, এমন পরিস্থিতিতে আপনার মন্ত্রীরা একটু সহনশীল আচরণ করলে  ক্ষতি কোথায়? কাটা গায়ে লবণ দেওয়াই যেন তাঁদের নিত্য রুটিনে পরিণত হয়েছে এখন। আপনার মন্ত্রীরা এখনো প্রতিপক্ষের উপর উত্তপ্ত বাক্য ছেড়েই যাচ্ছেন যেখানে সেখানে। এভাবে সুস্থ নির্বাচন বা সংঘাতমুক্ত দেশ আমরা কখনোই আশা করতে পারি না। আপনার মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতারা কি প্রতিপক্ষের সমালোচনা ছাড়া অন্তত আমাদের একটি দিন উপহার দিতে পারে না? অন্তত একটি দিন কি তাঁরা ক্ষমতার বাইরে নিজেদের কল্পনা করতে পারে না? তাঁরা কি ভুলে গেছেন ক্ষমতার বাইরে থাকা সেই দিনগুলোর কথা? তারা কি দেশের মানুষকে আপনার পাশে থাকার সুযোগ দিবেন না?

আপনি ও এই বাংলাদেশই আজ স্বাক্ষী আছে, মানুষের মৃত্যুতেও আপনার প্রভাবশালী মন্ত্রী কি নোংরা হাসির আনন্দে মেতে উঠেছে! যার মগজে হিউম্যানিটির কোন ছিটে ফোঁটা নেই, কেবল তারাই এমন হাসি হাসতে পারে।

সেই নোংরা হাসির পর আপনি সেই মন্ত্রীকে শাসিয়েছেন। দেশবাসী আপকে সাধুবাদ জানিয়েছে, কিন্তু সেদিন যদি আপনি তার মন্ত্রীত্বের পদ কেড়ে নিতেন, তাহলে মন্ত্রীসভা কলঙ্কমুক্ত হবার পাশাপাশি দেশবাসি আপনার পক্ষে আনন্দ মিছিল বের করতো। অন্তত নতুন করে আজকের দুভোর্গে পড়তে হতো না দেশবাসিকে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আজকের বাংলাদেশকে দেখেন। আপনার দলের এই মন্ত্রীর আশীবার্দপুষ্ট সংগঠনের নেতা ও শ্রমিকরাই ২দিন কেমন হিউম্যানিটি দেখালো এই বাংলাদেশকে। তাদের এমন বর্বর কর্মকাণ্ডকে আপনি কিসের সাথে তুলনা করবেন? আপনি জঙ্গিনিধন করার ঘোষণা দিলেন ক্রসফায়ারে, কিন্তু এমন উগ্র ও বর্বর বিকৃত মানুষগুলোকে আপনি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ ও নিধন করবেন, তা আমার মতো দেশবাসীও আপনার কাছে আজ জানতে চায়।

আজ ২ দিন ধরে পরিবহন ধর্মঘটের নামে দেশের সমস্ত পরিবহনসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কি কষ্টই না রাস্তায় বের হওয়া মানুষগুলো তা এতক্ষণে আপনিও উপলব্ধি করেছেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু কিছুদিন পর পরই তারা এভাবে দেশের মানুষকে জিম্মি করে কার স্বার্থে? এভাবে কি চলতেই থাকবে?

শুধু পরিবহনই বন্ধ করেনি তারা, রোগীবাহী আ্যাম্বুলেন্সকেও রাস্তায় আটকিয়ে রেখেছে তারা। মৌলভীবাজারে আ্যাম্বুলেন্স ধরে রেখে অসুস্থ ৭ দিনের শিশুর বাবাকে মারধর করেছে, টাকা আদায় করেছে। সাড়ে ৪ ঘন্টায় রাস্তায় আ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার কারণে শিশুটি বাবার কোলেই মৃত্যুবরণ করলো। আহ! কি নির্মম কাণ্ড?

সংবাদপত্রের এমন সংবাদ কি দেখার জন্যে আমরা প্রস্তুত ছিলাম। আমরাতো দেখতে চেয়েছিলাম পরিবহন শ্রমিকদের সহযোগিতায় বেঁচে গেল একটি প্রাণ। কিন্তু সন্তান হারা এই বাবার আত্মচিৎকারে আমরাও আজ সমানভাবে ব্যথিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি এমন বাবার সন্তান বিয়োগের সান্তনা কিভাবে দিবেন?

জরুরি প্রয়োজনে যারা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন, তাদের গাড়িতে হামলা করেছে আন্দোলনকারীরা। চালকদের মুখে কালি মেখে দিয়েছে। নারায়নগঞ্জে শিক্ষার্থীদের বাসে হামলা করেছে। শিক্ষার্থীদের পোষাকে গাড়ির পোড়া মবিল ঢেলে দিয়েছে। এই সব করে কারা আজ আনন্দ পাচ্ছে?

এই দৃশ্য কি এর আগে কখনো এই বাংলাদেশ দেখেছে? আমাদের এই প্রশ্ন আজ শুধু আপনার কাছেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আন্দোলনতো আমরাও করেছি। ভ্যাট আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই বাংলাদেশের জন্ম থেকে আজ পযন্ত এমন একটি আন্দোলনের কথা বলেন আপনি, যেখানে রোগীবাহী আ্যাম্বুলেন্সকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে? আপনিওতো রাজপথে  হাজারো আন্দোলন করেছেন, কিন্তু এমন নিষ্ঠুর আচরণ এই দেশ আপনি ও কোন রাজনৈতিক দলের কাছে এর আগে দেখেনি। এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়েও এমন বর্বর দৃশ্য দেখেনি এই বাংলাদেশ। তাহলে আজ এমন কেন হচ্ছে? কে এদের এত হিংস্র হতে নির্দেশ দিচ্ছে? পুলিশ কেন ধরছেন না তাদের?

আপনার মন্ত্রীরা কি আপনার চেয়ে অধিক ক্ষমতাশীল হয়ে গেছেন? যে দেশে আমাদের (সাধারণের) বাক স্বাধীনতার অধিকার নাই, আন্দোলন করার অধিকার নাই, ভোটের অধিকার নাই, বিচার পাওয়ার অধিকার নাই, পাওনা টাকা চাওয়ার অধিকার নাই, ধর্ষণের বিচার চাওয়ার অধিকার নাই, রাতে নারী একা রাস্তায় চলার অধিকার নাই, কিন্তু সেদেশে আমাদের এভাবে নির্যাতন ও মারার দু:সাহসের বিচার কি অন্তত আমরা আপনার কানে পৌঁছাতে পারবো? আদৌ কি এদের বিচার হবে?

আপনি এখনো এই দেশের প্রধানমন্ত্রী। আপনার হাত ধরে এই দেশ মাধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করেছে। কিন্তু আপনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সহ-সংগঠনের নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডে আপনার সুনাম কি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে না? এমন অবস্থায় আপনি যদি নিরব থাকেন, তাহলে দেশের এত উন্নয়নের পরেও আপনাকে আমাদের কচি হৃদয়, ব্যথিত হৃদয় নিষ্ঠুরই জানবে। কিন্তু আমরা আপনাকে হৃদয় মনিকোটায় ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসাবে স্থান দিয়েছি। সেই ভালোবাসা থেকেই আপনার কাছে একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই আমরা।  সব দলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই। প্রতিপক্ষের উপর জেল জুলুম ও নির্যাতন বন্ধ চাই। একটি ভালোবাসার বাংলাদেশ চাই। আপনি চাইলে নিশ্চয় সেটি সম্ভব।

লেখক, উদ্যোক্তা ও সংগঠক, নো ভ্যাট অন এডুকেশন আন্দোলন। শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Bootstrap Image Preview