Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

'ওরে বাটপাড়'রাদের কেন আনে টকশোতে?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ জুলাই ২০২০, ১২:২২ PM
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০, ১২:২২ PM

bdmorning Image Preview
পীর হাবিবুর রহমান।। 


পীর হাবিবুর রহমান।। 

 

বেসরকারি টিভি চ্যানেলের হাতেগোনা কজন অসৎ অ্যাংকর বহুরূপী মতলববাজ ধূর্তদের টকশোতে এনে সমাজে এদের রাজনৈতিক বিশ্লেষক বানায়। গুরুত্বপূর্ণ করে। এদের কেউ কেউ বিভিন্ন কিসিমের ব্যবসা, ধান্ধা করে। ওরে বাটপাড়, বাটপাড় কেন আনে টকশোতে- এটা বলতে ইচ্ছে করে চিৎকার করে। কিন্তু এদের দায় গোটা ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা গণমাধ্যম নিতে পারে না। এরা কাদের টকশোতে বেশি যায় বা গেছে অথবা যাচ্ছে সেটা দর্শক, গোয়েন্দা সংস্থা বা সেসব ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মূল যিনি দায়িত্বে, তাকেই দেখতে হবে। কারা কেন এদের কত টাকায় আনে বা কোন লাভের হিসেবে, তা ওই টিভির দায়িত্বে যিনি আছেন তাকেই বুঝতে হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক, ছাত্র বা রাজনৈতিক সাংবাদিকতায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা অথবা রাজনীতিবিদ কিংবা গবেষক না হলেও এসব গ-মূর্খদের অজ্ঞ অ্যাংকর এনে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বানায়। ফাজলামির সীমা থাকা দরকার। নষ্টদের হাতে চলে যাওয়া সমাজে নষ্টদের দৌরাত্ম্য ভয়াবহ। মাহমুদুর রহমান মান্না, নুরুল কবির, আসিফ নজরুলকে আনবে না, টাকা খেয়ে কোথা থেকে নানা গুদামের কাঁচা টাকার মালিক ধান্ধাবাজদের ধরে আনবে। নবজাতক সরকারি লীগ আনবে।

এখন কোনো সামাজিক আড্ডার অনুষ্ঠান, কোনো স্বজনের পারিবারিক দাওয়াতে  যাব কিনা, সাতবার ভাবতে হবে। কারণ, জানা নেই শোনা নেই, কোথাকার কোন মতলববাজ ধান্ধাবাজ বাটপাড় আসবে আর আমাদের মতোন সাধারণ পেশাদারদের সফঙ্গ ছবি তুলে সেটি সেল করবে এটা হতে দেওয়া যায় না। আর পরে যখন ওসব মতলববাজরা বিভিন্ন অপরাধে ধরা পড়বে তখন তাদের সঙ্গে আমাদের ছবি দিয়ে ফেসবুকে কেউ কেউ বিকৃত মজা নেবে। বলবে, মিডিয়া এদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অপরাধীদের দায় আমরা নেব কেন?

মধ্যরাতের সেসব বাজিকর অ্যাংকররাই নেবেন। একবার এক সামাজিক আড্ডার অনুষ্ঠানে একজন এসে তার পরিচয় দিয়ে একটা কার্ড দিলেন। ব্যবসা কীসের করেন জানি না। ছোটখাটো গার্মেন্ট মালিক সে পরিচয় দিয়ে নিচু স্বরে কার কার টকশোতে নিয়মিত যান জানালেন। বিভিন্ন সরকারি, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তার বিচরণ। এরা রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

আওয়ামী লীগ কর্মী, ফার্মাসিস্ট সুভাষ সিংহ রায় জগন্নাথ হলের ভিপি ছিলেন, পড়াশোনা করা মানুষ। আমাকে বই উপহার দেন। সখ্য পুরনো। প্রথমে রাজনৈতিক বিশ্লেষক পরিচয়ে টকশো শুরু করেন। পরে অনলাইনের এডিটর ও একটি দৈনিকের ডিক্লারেশন নিয়ে এখন সাংবাদিক কোটায় আছেন। তবে রাজনীতি নিয়ে টকশো করার যোগ্যতা তার আছে। মোহাম্মদ সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক। এখন ধরা পড়েছেন। অবৈধ হাসপাতালের মালিক, একটি নয় দুটি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে করোনা চিকিৎসার চুক্তি করেছে তার রিজেন্ট হাসপাতাল। অনেক সাংবাদিক ও তাদের পরিবার চিকিৎসা নিয়েছেন। আমরাও প্রশংসা করেছি। তার সঙ্গে প্রথম পরিচয় জিটিভির টকশোতে গিয়ে। সেখানে সে অতিথি। পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ধানমন্ডির অফিসে। কাদের ভাই বললেন, কাঁদছিল। লিভার সিরোসিস, বেশি দিন বাঁচবেন না! পরে টিভিতে নিয়মিত টকশোতে দেখি। বঙ্গভবন থেকে গণভবন হয়ে সব সামাজিক, সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে দেখি। কারও কারও রাতের আড্ডা থেকে সবখানে।

এখন দেখি কত বড় অপরাধে হাসপাতাল সিলগালা পলাতক। তাহলে কীভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে এতসব দিল? কীসের বিনিময়ে কারা দিল? এখন যারা সাহেদকে হাওয়া ভবনের লোক বলেন লজ্জা করে না? আওয়ামী লীগ ১১ বছর ক্ষমতায়। তাকে দলের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য করল তার দলের জন্য ত্যাগ দেখে নয়? অবৈধ ডাক্তার, আইনজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, ভুয়া মেজর, কত কিছু ধরা পড়ে! আজ দেখি অবৈধ হাসপাতাল! কীভাবে? কারা জড়িত? কিছু হবে এদের!

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজি সার্জন সাবরিনা আরিফ চৌধুরী কতটা বিয়ে করেছেন এটা আমার দেখার বিষয় না। নামকরা সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার সেটিই পরিচয়। আরিফুল হক চৌধুরীর চতুর্থ স্ত্রী, এটাও বিষয় নয়, নাচেন ভালো সেটাও নয়। তাহলে কাদের শক্তিতে তিনি ও তার স্বামী মিলে এত বড় টেস্ট জ্বালিয়াতি? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজি থেকে সাবরিনা তার বিভাগের বসদের কি পাঙ্গাশ মাছের পেটি দিয়ে খাইয়ে সব ঠিক রাখতেন?

করোনার মতো সংকটে কত বড় টেস্ট জালিয়াতির অপরাধ করে মানুষ ঠকায়। এরা মানুষ? আমি লিখেছিলাম সমাজে পাপিয়ার অসংখ্য নরনারী সংস্করণ সমাজে প্রতাপের সঙ্গে আছে। আমি কিছু দিন একুশে টিভি ও নাগরিক টিভিতেও অ্যাংকর ছিলাম। গেস্ট তালিকায় ঝগড়াটে নারী রাজনৈতিক নেত্রীদের কখনো আনিনি। আলোচক আনতে চুজি ছিলাম। মতবিরোধ হয়েছে। চলে এসেছি।

নাগরিক টিভিতে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এক অনুজ সাবেক সহকর্মী সেখানে এক নব্য ব্যাংক মালিককে টকশোতে আনেন। আমি পছন্দ করিনি। ছেড়ে দিয়েছি। যোগ্যতা থাকতে হবে। অনেক টিভির টকশোতে যারতার সঙ্গে বসবো না বলে মুখের ওপর না করেছি। টকশো ও সামাজিকতা থেকে গুটিয়ে নিয়েছি। যোগ্যদের কদর নেই অযোগ্য বাটপাড়দের আনে কেউ কেউ। টিভির দায়িত্বশীলদের এটা দেখা উচিত। তিন-চারজন অ্যাংকর কলুষিত করেছে গণমাধ্যম। অপরাধীকে আইনের আওতায় আনবে সরকার। গণমাধ্যম দায়িত্ব কেন নেবে? আমরা কি জানি কোথায় কখন যে এসে ছবি তুলে, পরিচয় দেয়, তার মন ও মতলব কতটা খারাপ? কত অপরাধ করে সে বহাল? আরেকটা বুঝি না জীবনে চরম ব্যর্থ টাউট-বাটপাড়রাও এখন পত্রিকার ডিক্লারেশন নেয়, অনলাইন করে কীভাবে? কেন করে? গণমাধ্যমের মান এরাই নষ্ট করে। আবুল মাল আবদুল মুহিত যথার্থই বলেছিলেন, ‘রাবিশ, ২০টার বেশি দৈনিক নেই শত শত আসে কীভাবে?’

Bootstrap Image Preview