Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বন্ধুত্বের বন্ধন হোক জীবনের সফলতা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৫৯ AM
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৫৯ AM

bdmorning Image Preview


সুলতান মাহমুদ আরিফ

বন্ধু বলতেই হৃদয়ের মণিকোঠায় দক্ষিণের শীতল বাতাসের এক গুচ্ছ পরশ। বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধতা যেন ভালোবাসার সেরা উপমার উৎকৃষ্টতর নিদর্শন। বন্ধুত্বের বন্ধন নিয়ে আসে মরুভূমি সমতুল্য হৃদয়ের মাঝে সবুজ অরণ্যে ঘেরা এক মায়াবন্ধনে সিক্ত আলিঙ্গণ। বন্ধুত্বের মাঝে সজীবতার সেরা নিদর্শনে শিক্ষা লাভ করছেন আমাদের অতীতের সেরা ব্যক্তিবর্গদের সিংহভাগ। সেরাদের সেরা যারা তারা সবাই বন্ধুময়। তাঁদের ছিলো সুন্দর সাবলিল বন্ধুময় এক উৎপল্লিত ভালোবাসাময় জীবন।

বন্ধু নির্বাচনে সচেতনতা হোক আজ সময়ের দাবি। একজন বন্ধু যা পারে তা আর কেউ পারে বলে মনে হচ্ছে না আদৌ এই যান্ত্রিক জগতে। এই জন্যই তো মার্গারেট ওয়াকার বন্ধুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, বন্ধুত্ব এবং ভালো ব্যবহার তোমাকে এমন এক জায়গাতে নিয়ে যাবে যেখানে কোন অর্থই তোমাকে নিতে পারবে না।
বন্ধুত্ব এবং ভালো ব্যবহার দুটো যেন মুদ্রার এপিট আর ওপিট। এই দুটো জিনিস নির্বাচনে আপনি হতে পারেন সেরাদের সেরা উপমা বিশ্বময় জুড়ে।

বন্ধুত্ব নির্বাচনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে তার স্বভাবজাত কর্মকাণ্ডগুলোকে। ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রা) বলেছেন, নিরবোধের সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকো। কারণ সে উপকার করতে চাইলেও তার দ্বারা তোমার ক্ষতি সাধিত হবে।
মুর্খ এবং নির্বোধদের বোধদয় একটু কমই থাকে।তাদের দ্বারা সমাজের উচ্চমানের কাজ করা খুবই কষ্টকর হয়। ভালো-মন্দ নির্বাচনে তারা যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে বোকামীর পরিচয় প্রদানে করে থাকে। এই জন্যই বিখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাজ্জালি (র.) বন্ধুত্ব নির্বাচনে পাঁচটা গুণ আবশ্যক করেছেন। তা হলে- বুদ্ধিমত্তা, সৎ স্বভাবওয়ালা হওয়া, পাপাচারী, বেদআতী এবং দুনিয়াসক্ত না হওয়া।

বর্তমানে বন্ধুর সংশ্রবে বন্ধু যতটা পরিবর্তন হয়, পরিবার কেন্দ্রিক তার প্রভাব একেবারেই কিঞ্চিৎ। তাই তো আজ দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ সচেতনমহল তাদের সন্তানের বন্ধু নির্বাচন নিয়ে খুবই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। আমাদের শহরাঞ্চলের পিতা- মাতা কিংবা কাছের আপনজনেরা আজ কর্মব্যস্ততায় তাদের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করছেন। সন্তানকে একেবারেই সময় দিতে পারছেন না এই কর্ম ব্যস্ত মানুষগুলো। যার কারণে তারা হয়ে পড়ছে বন্ধুময় এক নব্য জীবন। বন্ধুত্ব নির্বাচনে যদি সামান্য গোলমাল হয়ে যায়, মনে রাখতে হবে জীবনের পরিবর্তনের জন্য এতটুকু গোলমালই যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। সুতরাং বন্ধুত্ব নির্বাচন হোক যাচাই-বাচাই এবং ইমাম গাজ্জালীর দেওয়া পাঁচ ফর্মুলায়। অ্যারিস্টটলের বন্ধুময় সংজ্ঞাটি থেকে আরো স্পষ্ট হওয়া যাবে যে; তিনি বলেছেন, বন্ধুত্ব হলো বিশ্বাস, দুই দেহ এক মন।  
অতএব বুঝা গেলো বন্ধত্ব স্থাপন হয় আত্মার মণিকোঠা থেকে। সর্বোচ্চ বিশ্বাস কাজ করে দু'বন্ধুর পথচলায়। যদি বন্ধু নির্বাচনে হয় বেখেয়ালি, জীবন হবে নষ্টামী।

কবি মিল্টন বলেছেন, Education is the development of body mind and soul. অর্থাৎ শরীর, মন ও আত্মার উন্নতি হলো শিক্ষা। কবি মিল্টনের উক্তির যথার্থ প্রয়োগ না হলেও শেষ দুটো খুবই অনুসরণ করছে এই যুগের নব্য তরুণের দল। বর্তমানে ছেলে-মেয়ে এবং মেয়ে-ছেলের বন্ধুত্বই বেশি লক্ষণীয়। আর সেখানে হচ্ছে শারীরিক উন্নতির এক অবলিলার চিত্র। বাংলাদেশে বন্ধুত্ব নামক বিপরীত লিঙ্গের শারীরিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্যও গড়ে উঠেছে ব্যাঙ্গের ছাতার মত অসংখ্য পার্ক। যেখানে শারীরিক সম্পর্কে উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বন্ধুত্ব ধরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন আধুনিক বন্ধুময় টিনএজ (১৩-১৮) উদীয়মান যুবক-যুবতী। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকারও অনেক জায়গাতে এরকম শারিরীক বন্ধুত্ব ধরে রাখার জন্য স্থাপিত পার্কগুলো হাতছানি দিয়ে টিনএজদের ডাক দিচ্ছে পার্কের নীরব জায়গাটিত। এ রকম অসংখ্য পার্কের নাম উল্লেখ করতে পারি আমি এক নিমিষেই (কারণবশত উল্লেখ করছি না)।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যায়ন বাদ দিয়ে খারাপ বন্ধুর সংশ্রবে আপনার সন্তান আজ কোন দিকে গিয়ে সময় পার করছে ব্যস্তময় অভিবাবকদের আজ একটু ভাবার দরকার। বাংলাদেশ সহকারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কিশোর সন্ত্রাসীর চিত্র আজ চক্ষুষ্মান । বাংলাদেশে ও কিশোর সন্ত্রাসের সংখ্যা একেবারেই কম নয়।

২০১৫ সালের একটা রিপোর্টে দেখা যায়, বাংলাদেশে কিশোর অপরাধের মামালা আছে প্রায় ১ হাজার ১৮৪ টি। আবার ২০১৬ সালের রিপোর্টে দেখা যায় এর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৯৬ টি। সুতরাং একবছরে বৃদ্ধি পাছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। বর্তমানে তার সংখ্যা কত তা বোধগম্য করাই দুষ্কর। মনে রাখবেন এখনই সময় লাগাম টেনে ধরার।

সর্বশেষ বলতে পারি আমাদের উচিত একজন সৎ-যোগ্য এবং বিশ্বাসী ভালোবাসাময় সঠিক বন্ধু নির্বাচন করা। বন্ধুর দ্বারা বন্ধু প্রভাবিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কেননা কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছে, "যদি থাকে বন্ধুর মন, গাং পার হইতে কতক্ষণ। বর্তমানে বন্ধুহীন মানুষ খুঁজে পাওয়া একেবারেই দুষ্কর। শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বুদ্ধেরও দুই- তিন জন বন্ধু আছেই। অতএব বন্ধুময় এই জীবনে বন্ধু নির্বাচনে সর্বোচ্চ সজাগ দৃষ্টি নিবন্ধনের উদার্ত আহবান জানাচ্ছি। সাথে সাথে সন্তানদের বন্ধুদের প্রতিও সচেতন দৃষ্টি নিয়োগ করতে হবে অভিবাবক শ্রেণীদের।

লেখকঃ শিক্ষার্থী; সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।

Bootstrap Image Preview