Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গুম দিবসে ঘুম হবে কী তাদের?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৩৪ AM
আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৩৪ AM

bdmorning Image Preview


আল-আমিন হুসাইন।।

সাড়ে চার বছর ধরে ভাই ফিরে আসবে সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ সাজেদুল ইসলামের বোন সানজিদা ইসলাম । সানজিদারে অভিযোগ সেদিন রাতে র‍্যাব-১ লেখা একটি ভ্যান ও মাইক্রোতে করে র‍্যাবের ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন মুখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায় সাজেদুলকে। সেই থেকে ভাইকে ফিরে পেতে বিভিন্ন জায়গায় ছুটেছে তার পরিবার। এখনও তিনি বিশ্বাস করে, হঠাৎ একদিন হয়ত তার ভাই ফিরে আসবে।

সাজেদুলের মতো বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে গুম হয়ে অনেকে ফিরে এসেছেন আবার অনেকেই এখনও নিখোঁজে রয়েছেন। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস।

নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষদের স্মরণে এবং গুমের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতেই দিবসটি পালনের ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স এ আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয়। তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। এর আগে জাতিসংঘ ২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ রচনা করে। প্রতিবারের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে গুম হওয়ার তালিকা বেড়েছে অনেক। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে গুমের শিকার হয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আইনজীবী, সরকারদলীয় জনপ্রতিনিধিরাও। অধিকাংশ গুমের ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেয়ার অভিযোগ করে পরিবার। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে পরিবারের এসব দাবিকে অস্বীকার করা হয়।

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের তথ্যমতে, গত নয় বছরে দেশে গুম হয়েছে ৪৩২ জন। এদের মধ্যে ২৫০ জনের সন্ধান মিললেও বাকিদের কোন খোঁজ মেলেনি। আবার অনেকেই গুম হওয়ার পরে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফলে দুঃসহ যন্ত্রণা আর প্রিয়জনের ফিরে পাবার আশায় অপেক্ষা করছে পরিবারগুলো।

গুমের শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যদের দাবি, যদি কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হোক। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। তাতে গুম হওয়া ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারগুলো নিশ্চিতে থাকতে পারবে। কারণ গুম হলে শেষ পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে বা গুম ব্যক্তিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে এসব নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পরিবারগুলোর। প্রিয়জনের গুম হওয়ায় রাতের ঘুম চলে গেছে তাদের। অনেক বাবা-মা তার প্রিয় সন্তানের ফিরে পাবার আশায় রাত জেগে আছেন। অনেক বোন তার ভাইয়ের জন্য, অনেক সন্তান তার বাবার জন্য, স্ত্রী তার স্বামীকে ফিরে পেতে পথ চেয়ে আছে। কিন্তু কেউ জানে না আসলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন গুম হয়ে থাকার পর যারা ফিরে এসেছেন তারাও বিষাদে দিন পার করছেন। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে সেই দিনগুলোর দুঃসহ স্মৃতি আর অস্তিরতা তাদেরকে তাড়া করছে। দীর্ঘদিন অন্ধকার ঘরে থাকায় তারাও এখন রাতে ঠিক মতো ঘুমাতে পারছে না। ঘুমাতে গেলে ভয়ার্ত দিনগুলো মনে আসছে।

যারা ফিরে এসেছেন তারা কোন কিছুই বলছে না। অনেকে শুধু অন্ধকার ঘরে হাত-পা  বেঁধে আটকে রাখার কথা বলেছেন। তবে তাদেরকে কেন, কোথায়, কীভাবে আটকে রাথা হয় সে বিষয়ে কিছুই বলেননি। তাদের ভয়ার্ত কথা আর প্রকাশ করার অনীহা এতটুকু জানায় যে, তাদেরকে কোন কিছু প্রকাশ না করতে হুমকি দেয়া হয়েছে। ফলে গুম নামটা দেশে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।

গত কয়েক বছর ধরে গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসার মধ্যে আলোচনায় আছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান এবং সাংবাদিক উৎপল। তবে তারা ফিরে আসার পর আগের মানুষটি মতো থাকেননি। তাদের চলাফেরা কথা সবকিছুতে আতংকের ছাপ লক্ষ্য করা গেছে।

বিভিন্ন সময় পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে করে প্রিয়জনেক ফিরে পাবার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছে। প্রিয়জনকে জীবিত ফিরে তাদের আকুতি সবাইকে কাঁদিয়েছে।

তবে গুম কেবল বাংলাদেশে হচ্ছে না এমনটা নয়। মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে, সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ গুম হয়েছে। তাদের মধ্যে বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মীর পাশাপাশি রয়েছেন বেসামরিক লোকজনও। একইভাবে গুম হচ্ছে শ্রীলঙ্কা, গাম্বিয়াসহ অন্যানা দেশেও।

গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা কোনটাই স্বাধীন দেশে গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেমন রয়েছে, তেমনি আছে রাজনীতি করার স্বাধীনতা। আছে চলাফেরার স্বাধীনতা, কোন অপরাধে আটক হলে নিদিষ্ট সময়ে মধ্যে আটক দেখিয়ে হাজির করার অধিকারও দিয়েছে সংবিধান।

কিন্তু আমরা দেখেছি বিরোধী রাজনীতি, ব্যবসায়ীক শত্রুতা, ভিন্নমত প্রকাশের কারণে গুমের শিকার হয়েছেন। যারাই গুম করুক সরকারের উচিত দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। গুম ব্যক্তিদের খুঁজে  বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা। অনিদ্রায় রাত কাঁটা অপেক্ষমান পরিবারের রাতের ঘুম ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্বটা সরকার দ্রুত পালন করবে। একই সাথে ভবিষাতে গুমের মত এত ভয়ংকর ঘটনা যেন দেশে না ঘটে।গুমকে যেন হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করা হয়  সরকার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সে বিষয়ে সজাগ থাকবে আন্তর্জাতিক গুম দিবসে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।

Bootstrap Image Preview