শৈশবে জাপানের জন্য নিজের টানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শৈশব থেকেই জাপান নিয়ে আমার মধ্যে মোহ কাজ করত। জাপানি ছাত্ররা খাবারের পয়সা বাঁচিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জাপান সব সময়ই আমার হৃদয়ের কাছে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) জাপানে রাষ্ট্রীয় সফর শুরুর আগে দেশটির সবচেয়ে পুরনো ও অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম দ্য জাপান টাইমসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে নিজের অনুভূতির কথা তুলে ধরেন তিনি।
জাপানের প্রতি তার এই টান তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে তার মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে।
ওই নিবন্ধে ‘কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে সেবা ও শিল্প খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধির পরিক্রমায়’ বাংলাদেশের রূপান্তরের কালে জাপানি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, নতুন এই যুগ আমাদের আরও কাছে টানুক, সম্পর্ক গভীরতর করুক এবং আমাদের শিশুদের জন্য নিরাপদ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সহায়তা করুক। তিনি এই যুগকে ‘আশা ও ঐকতানের’ যুগ হিসেবে বর্ণনা করেন।
উন্নয়নের জন্য জাপান-বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব’ শিরোনামে এই নিবন্ধে তিনি ‘বাংলাদেশকে আরেকটি জাপান হিসেবে গড়তে’ তার বাবার আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং মানুষের উন্নততর জীবনমান নিশ্চিত করতে চলমান বৃহৎ অবকাঠাসো উন্নয়ন কর্মসূচির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই বিনিয়োগের সবচেয়ে উদার ও উপযোগী পরিবেশের সুযোগ দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা জাপানি বিনিয়োগকারীদের একটিসহ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও জাপান সব সময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে।
সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের পতাকার মধ্যে অনেক সামঞ্জস্য আছে।
জাতির জনকের কথা স্মরণ করে তার কন্যা বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষি থেকে শিল্পায়নের পথে রূপান্তরে জাপানকে অনুসরণে তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
১৯৭৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফর ও পরের বছর তার অনুরোধে জাপানের পক্ষ থেকে যমুনা (বঙ্গবন্ধু) সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা পরিচালনার কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি লিখেছেন, ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফরের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জাপান রূপসা সেতু নির্মাণ করে দিয়েছিল। এছাড়া পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাইও করে দিয়েছিল।
সেসময় দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে দুদেশের মধ্যে সংসদীয় মৈত্রী কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসায় ও বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে জাপানি উদ্যোক্তা বাড়তি আগ্রহে আমরা খুবই উৎসাহিত।
এখন বাংলাদেশে ২৮০ জাপানি কোম্পানি ব্যবসা করছে, যা গত দশকের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। জাপারেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ বলছে, জাপানের অনুমোদিত কোম্পানির বাংলাদেশে ব্যবসায় উন্নতি করছে।
প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, আমরা অর্থনীতির সকল খাতে বিদেশি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের রাস্তা উন্মুক্ত রেখেছি। এবং সেক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণে কোনো বিধিনিষেধ নাই।
২০১৬ সালের জুলাইতে গুলশানে জঙ্গি হামলায় নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনায় জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্ব পরীক্ষিত হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০১২ সালে দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের রজতজয়ন্তী উদযাপন করবে। জাপান এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী। ১৯৭২ সাল থেকে দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশ মোট এক হাজার ১৩০ কোটি ডলারের সহায়তা পেয়েছে।
শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় ৪০তম ঋণ সহায়তার আওতায় আড়াইশ কোটি ডলারের একটি ঋণচুক্তি হবে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে ২৮-৩০ মে টোকিও সফরের জন্য ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এটাই জাপানে তার প্রথম সফর। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি জাপান সফর করেন। এবার তার সফরের আগে জাপানে নতুন সাম্রাজ্য শুরু হয়েছে।