মীরসরাই প্রতিনিধিঃ
দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। আর ঈদকে সামনে রেখে শেষ মুর্হুতে ব্যস্ত সময় পার করছে মীরসরাইয়ের কামারপাড়া। কামারদের কাজের টুং টাং শব্দে যেন মুখরিত হয়ে উঠেছে আশপাশ। মাসখানেক আগেও মীরসরাইয়ের এই স্থানটি ছিল নীরব। অথচ এখন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে হয়েছে সরব। কামারের হাতুড়ির টুং টাং শব্দ যেন আর থামছে না। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা করে যাচ্ছে দা-ছুরিগুলোকে তৈরি ও মেরামত করার কাজ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মীরসরাই মিঠাছড়া, জোরারগঞ্জ, আবুতোরাব, বড়তাকিয়া, করেরহাট, বড়দারোগারহাট, বারইয়ারহাট সহ ছোট-বড় সব বাজারের কামাররা এখন কাজে খুব ব্যস্ত। ঘামছে কামার, পুড়েছে লোহা, তৈরি ধামা, ছুরি, বটি, দা, ব্যস্ততা বাড়ছে প্রতিটি কামার দোকানে। নতুন দা, ছুরি, ধামা বটি তৈরী করা পুরাতন দা, ছুরিকে শান দেওয়ার হরদম কাজ চলছে কামারদের। পুরো বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে তাদের মুখে একটু হাসি ফুঁটে। আর এই সময় কুরবানী ঈদে কদর বাড়ে তাদের।
গবাদিপশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য দা, বটি, ছুরি ও ধামা তৈরী করতে কয়লার আগুনে লাল করে টক-টকে জ্বলে উঠা লোহা-ষ্টীলের হাতুড়ী দিয়ে দুই দিক থেকে জোরে জোরে পেটাতে হয়। এতে অনেক শক্তির প্রয়োজন পড়ে। পাশাপাশি আঙ্গুল দিয়ে আইতনার রশি টেনে কয়লার আগুনে বাতাস দিতে হয় পাশের আরেকজনকে। কোরবানীকে সামনে রেখে চাহিদা অনুযায়ী কোরবানীর ঈদের জন্য তৈরী দা, বটি, চাপাতি,ছুরি ও ধামাসহ বিভিন্ন সামগ্রী বেচাকেনার জন্য মজুত করলেও অন্য সময় হাটে-বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাই এ শিল্পে নানা অস্থিরতা ও সংকটের মধ্যে রয়েছে কামার শিল্পীরা।
মীরসরাই উপজেলার আবুতোরাব বাজারের সুব্রত কামার জানান, কোরবানীর ঈদ আসলে এ পেশার মানুষদের ব্যস্ততা ও কদর বাড়ে। অন্য সময় অলস ভাবে সময় কাটাতে হয়।
উপজেলার বিখ্যাত গরুর বাজার খ্যাত মিঠাছড়া বাজারে পুরাতন সুনিল কামার ও বনাই কামার জানান, এবার ঈদে বটি, দা, ছোট-বড় ছুরি ও ধামা তৈরীতে ৩শত ৫০টাকা থেকে ৪’শত ৫০ টাকা করে মজুরী নেয়া হচ্ছে। আর তৈরী করা ওইসব সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে ৫শত ৫০ থেকে ৬’শত ৫০ টাকায়। গরু কাটার ছোট ছুরি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
বড়তাকিয়া বাজারের সাধন কামার হতাশ কন্ঠে বলেন, আগের মত এখন আর নতুন করে মানুষ ওই সব মালামাল কিনতে চায়না। ঘরে থাকা পুরানো দা, বটি, ছুরি ও ধামা গুলো পুনরায় শান দিয়ে ধারালো করে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যারা কামার শিল্পে কাজ করি তারা শুধুমাত্র কোরবান ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের একটু চোখে পড়ি, আর পুরো বছর জুড়ে আমরা এবং আমাদের এ শিল্প থাকে অবহেলিত। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। যেমন পূঁজি নেই তেমনি আয়ও নেই। সীমিত আয় দিয়ে আমাদের সংসার।
আগামীতে এ পেশা টিকিয়ে রাখা খুব কষ্ট হয়ে পড়বে বলেও মত প্রকাশ করেন, তারপরেও পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য কামার শিল্পকে আমরা ধরে রেখেছি বলে জানান তিনি।