অস্ট্রেলিয়ান কোচ গ্রেগ চ্যাপেল দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ভারতের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। শচীন, চৌরভ, দ্রাবিড় থেকে শুরু করে বোলার ইরফান খান, জহির খানরাও ছিলেন তার কাছে তথাকথিচ ‘বাতিল মাল’দের তালিকায়।
তবে গ্রেগ চ্যাপেলের ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্তে হালকা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও শচীন, দ্রাবিড়রা নিজেদের ধরে রাখতে পেরেছিলেন। কিন্তু চ্যাপেলের পরামর্শ মানতে গিয়ে নিজের বোলিং সত্তাই হারিয়ে ফেলেছিলেন ইরফান পাঠান।
গ্রেগ চ্যাপেলের অধীনেই বোলিংয়ের ধার কমে যায় ইরফানের। ফলে অনেকেই মনে করতে শুরু করেন, চ্যাপেলের কারণেই সুইং হারিয়ে ফেলেছেন ইরফান। শুধু মনে করাই নয়, ভারতীয় ক্রিকেটে এটা বদ্ধমূল ধারণা হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
তবে আজ সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সময় ইরফান পাঠানের কাছে উঠে এলো তার সুইং হারানো এবং গ্রেগ চ্যাপেলের বিষয়টাও। ওই সময় সাবেক কোচের পাশেই দাঁড়াতে দেখা হেলো ইরফানকে।
ইরফান পাঠানের কথা হলো, এই জাতীয় ভাবনা আসলে সত্য থেকে নজর ঘুরিয়ে রাখারই চেষ্টা। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে ইরফান পাঠান বলেন, ‘মানুষ যে গ্রেগ চ্যাপেলকে দোষ দেয়, তা আসলে সত্যিটাকে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা। আমার সুইং হারানো নিয়ে এত কথার মানে হয় না। লোকের বোঝা উচিত ছিল যে ১০ ওভার জুড়ে একই ধরনের সুইং পাওয়া সম্ভব নয়। আর আমি কিন্তু সুইং পাচ্ছিলাম।’
তাহলে চ্যাপেল সম্পর্কে যে অভিযোগ উঠেছিল, আপনার সুইং কমার পেছনে সেই দায়ী। ব্যাখ্যা করে ইরফান বলেন, ‘লোকে আমার পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলে, কিন্তু আমার কাজটাই ছিল আলাদা। আমার কাজ ছিল রান আটকে রাখা। আমি বল করতে আসছিলাম প্রথম চেঞ্জে। বলা হয়েছিল, এটাই আমার কাজ। মনে আছে, ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কায় একটা ম্যাচ জেতার পর বাদ পড়েছিলাম। বলুন তো, ম্যাচ জেতার পর কোনও কারণ ছাড়া কবে কে বাদ পড়েছে?”
ইরফান পাঠান ভেবেছিলেন, আবারও সুযোগ পাবেন ভারতীয় দলে। কিন্তু তার সেই আশা আর বাস্তবতার রূপ দেখেনি। ঘরোয়া টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি রান করেছিলেন। অলরাউন্ডার হিসেবেও যথেষ্ট সফল ছিলেন। তবুও নির্বাচকদের খুশি করতে পারেননি তিনি।
বিদায় বেলায় বাঁ-হাতি এই অলরাউন্ডার আক্ষেপ করে বলেন, ‘২০১৬ সালের পরে জেনে গেলাম আমার আর জাতীয় দলে ফেরা হবে না। ২০১৫-১৬ মৌসুমের সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে সর্বোচ্চ রান করেছিলাম। সেরা অলরাউন্ডার হয়েছিলাম। নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি ওরা আমার বোলিংয়ে সন্তুষ্ট নন।’
অনেকেই ক্রিকেট ক্যারিয়ার যে বয়সে শুরু করেন, সেই বয়সে পাঠানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। আবেগতাড়িত পাঠান বলেন, ‘আমার যখন ২৭-২৮ বছর বয়স, তখনই ৩০১টি আন্তর্জাতিক উইকেট পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আরও সুযোগ পাব। যে কোনও কারণেই হোক আর সুযোগ পাইনি। এ জন্য আমার কোনও অভিযোগ নেই; কিন্তু পিছন ফিরে তাকালে খারাপই লাগে।’